ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

অনিশ্চিত নৌনিরাপত্তা

১৫ হাজার নৌযানের জন্য স্থায়ী সার্ভেয়ার মাত্র চার জন!

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ১৬ জুলাই ২০১৮

 ১৫ হাজার নৌযানের জন্য স্থায়ী সার্ভেয়ার মাত্র চার জন!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে ১৫ হাজার নৌযানের জন্য রয়েছে মাত্র চারজন স্থায়ী সার্ভেয়ার। হিসেব করে দেখা গেছে একজন সার্ভেয়ার গড়ে ১৯ মিনিট ২ সেকেন্ড সময় পান একটি নৌযান সার্ভে করতে। নৌযান সার্ভের নামে এই ভৌতিক কা-ে দেশের নৌনিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। সার্ভে ফিটনেস ছাড়াই চলছে বেশিরভাগ নৌযান। দুর্ঘটনা ঘটার পর বেশির ভাগ নৌযানের ফিটনেস না থাকার কথাই বার বার আলোচিত হয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্টরা এসব বিষয়ে একেবারেই নির্বিকার। বুয়েটের নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মীর তারেক আলী বলছেন কোনক্রমেই একটি নৌযান সার্ভে করার জন্য একজন সার্ভেয়ার ২১ মিনিটের বেশি সময় পান না। কিন্তু নৌযান সার্ভের সময় একজন প্রকৌশলীকে ফাইলেই ২১টি বিষয় পর্যবেক্ষণ করতে হয়। প্রতিটি বিষয় ৩ মিনিট করে পর্যবেক্ষণ করলেও সময় লাগে ৬৩ মিনিট। জাহাজ পরিমাণ আর ইঞ্জিন পরীক্ষায় আরও অন্তত দুই ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়। এছাড়া নৌযান সার্ভে সনদ নিতে নিশ্চই কোন প্রকৌশলীর অফিস বা বাসায় চলে আসে না। নৌযানের কাছেই সার্ভেয়ারের যেতে হয়। সে জন্যও সময় প্রয়োজন হয়। তিনি অভিযোগ করেন দেশে নৌযান সার্ভের নামে যা চলছে তা একেবারেই ভৌতিক। এভাবে ক্রমান্বয়ে নৌপথকে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলছি। বিদ্যমান নৌ পরিবহন ব্যবস্থা ও করণীয় শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে রবিরার জানানো হয়, নৌপরিবহন অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ সেক্টরে নিবন্ধিত নৌযানের সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ২৭৫। যার মধ্যে লঞ্চ, স্টিমার, সী-ট্রাক ও ট্রলারসহ যাত্রীবাহী নৌযান ছিল ২, ১৮৮; কার্গো ভেসেল বা পণ্যবাহী নৌযান ছিল ২,২১৭টি। সব চেয়ে বেশি ছিল স্যান্ড ক্যারিয়ার বা বালুবাহী নৌযান ৩,৫০৬টি। বিভিন্ন ধরনের নৌযানসমূহের মধ্যে আরও ছিল ফেরি ৯৬টি, অয়েল ট্যাঙ্কার ১৭৫টি, টাগবোট ২৮৩টি, ডাম্ববার্জ ১,৬৮৩টি, ফিশিং বোট ৭০টি, স্পিডবোট ৬৮৪টি, ইনস্পেকশন লঞ্চ ৪২২টি, ড্রেজার ১৭৫টি এবং অন্যান্য ৭৭৬টি। গত সাড়ে চার বছরে সব ধরনের নৌযানের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১৫ হাজার হয়েছে। কিন্তু সার্ভেয়ার বাড়েনি একজনও। উপরন্তু গত ডিসেম্বরে একজন অবসরে গেছেন। অধিদফতরের চারটি কার্যালয়ের মধ্যে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে দু’জন স্থায়ী সার্ভেয়ার কর্মরত থাকলেও বরিশাল ও খুলনায় কর্মরত দু’জনকেই বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে আনা হয়েছে। রবিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনের কমরেড মণি সিংহ সড়কের মুক্তি ভবনে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রাক্তন অধ্যাপক ড. আব্দুর রহীমের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আলোচনার শুরুতে নৌ দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে পাঁচটি সুপারিশ তুলে ধরেন আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে।
×