ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

রাশিয়ায় নতুনের জয়গান

প্রকাশিত: ০৮:২৯, ১৬ জুলাই ২০১৮

রাশিয়ায় নতুনের জয়গান

জিএম মোস্তফা ॥ গোটা ফুটবল দুনিয়াকে মুগ্ধ-বিমোহিত করেছে রাশিয়া বিশ্বকাপ। অসাধারণ এক টুর্নামেন্ট উপহার দিয়েছে স্ট্যালিন-লেলিনের দেশটি। শুধু অঘটনের আসর বলেই নয়, দুর্দান্ত সব রোমাঞ্চকর ম্যাচ উপহার দেয়ার কারণেই রাশিয়া বিশ্বকাপকে বহুকাল মনে রাখবে ফুটবলপ্রেমীরা। ২০১৮ বিশ্বকাপে কেতন উড়েছে নবীন দেশেরও। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালের টিকেট কেটেছে ক্রোয়েশিয়া। এই বিশ্বকাপ দেখেছে বেলজিয়ামের দাপটও। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর আবারও সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয় তারা। অতীতের সর্বোচ্চ অর্জন ‘চতুর্থ স্থান’কে ছাপিয়ে তিনে থেকে বিশ্বকাপের একুশতম আসর শেষ করেছে নিজেদের সেরা সাফল্য নিয়েই। রাশিয়া বিশ্বকাপের শুরু থেকেই বেলজিয়াম-ক্রোয়েশিয়ার পারফর্মেন্স ছিল প্রশংসনীয়। গ্রুপ পর্বের শুরু থেকেই দাপট দেখিয়েছে এই দুই দল। ‘জি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন বেলজিয়াম পানামাকে হারিয়ে নিজেদের মিশন শুরু করেছিল। এরপর তিউনিসিয়া এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও জয়ের স্বাদ পায় তারা। তিন ম্যাচ থেকে ৯ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া রবার্তো মার্টিনেজের দল শেষ ষোলোতে জাপানের মুখোমুখি হয়। এশিয়ার শেষ প্রতিনিধিদের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত রোমাঞ্চকর জয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট কাটে বেলজিয়ানরা। শেষ আটে ফেবারিটের তকমাটা গায়ে মাখিয়ে রাশিয়ায় আসা ব্রাজিলকেও হারিয়ে দেয় হ্যাজার্ড-লুকাকুরা। সেইসঙ্গে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর আবারও বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয় তারা। কিন্তু শেষ চারে ফ্রান্সের কাছে হেরেই জয়রথ থেমে যায় বেলজিয়ামের। তবে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয় হ্যাজার্ড-লুকাকুরা। তবে এই ম্যাচে প্রতিপক্ষকে পাত্তাই দেয়নি বেলজিয়াম। শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মার্টিনেজের শিষ্যরা। সেইসঙ্গে নিজেদের অতীত সাফল্যকেও ছাড়িয়ে যায় তারা। ৩২ বছর আগে চারে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করা বেলজিয়াম এবার তিনে থেকে নিজেদের ইতিহাসের সেরা সাফল্য নিয়েই বাড়ি ফিরেছে। এমন অর্জনে দারুণ উচ্ছ্বসিত বেলজিয়াম শিবির। রবার্তো মার্টিনেজ তার শিষ্যদের পারফর্মেন্সের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ভিনসেন্ট কোম্পানিও এমন অর্জনে তার দেশ ‘গর্বিত’ বলে মন্তব্য করেছেন। বেলজিয়াম তিনে থেকে ২০১৮ বিশ্বকাপ শেষ করে নিজেদের অতীত সাফল্যকে ছাড়িয়ে গেছে। ক্রোয়েশিয়াও গড়েছে নতুন ইতিহাস। প্রথমবারের মতো স্বপ্নের বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নেয় তারা। গ্রুপ পর্বে নাইজিরিয়া, আর্জেন্টিনা এবং আইসল্যান্ডকে হারিয়ে শেষ ষোলোর টিকেট কাটে লুকা মডরিচের দল। এরপর ডেনমার্ক, রাশিয়া এবং ইংল্যান্ডকে বিদায় করে বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নেয় তারা। সেইসঙ্গে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার অবিস্মরণীয় কীর্তিও গড়ে মডরিচ-মানদুকিচরা। প্রথম সোনালি ট্রফি জয়ের সামনে ক্রোয়েশিয়ার বাধা হয়ে দাঁড়ায় ফ্রান্স। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে রবিবার একে অপরের মুখোমুখি হয় তারা। কিন্তু দুর্ভাগ্য ক্রোয়েশিয়ার। নকআউট পর্বের তিন ম্যাচের তিনটিতেই সৌভাগ্যের ছোঁয়ায় জয় পাওয়া ক্রোয়েশিয়া এদিন শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে মারিও মানদুকিচের আত্মঘাতী গোলে! যা বিশ্বকাপের ইতিহাসেরই প্রথম আত্মঘাতী গোল। তারপরও হাল ছাড়েনি জøাতকো দালিচের দল। ২৮ মিনিটে পেরিসিচের গোলে দুর্দান্ত কামব্যাক করে ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু এর পরেই দেখা যায় গ্রিজম্যান-পগবা-এমবাপের জাদু। দলের সেরা তিন তারকার গোলে ৪-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ক্রোয়েশিয়ার হয়ে ৬৯ মিনিটে মানদুকিচ এক গোল করে ব্যবধান কমালেও জয়ের দেখা পায়নি বলকান অঞ্চলের দেশটি। তারপরও রানার-আপ হয়েই সন্তুষ্ট ক্রোয়েশিয়া। কেননা, এটাই যে তাদের এযাবৎকালের ইতিহাসে সেরা সাফল্য!
×