ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাতামুহুরীতে পাঁচ ছাত্রের সলিল সমাধি, পরিবারে মাতম

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১৬ জুলাই ২০১৮

 মাতামুহুরীতে পাঁচ  ছাত্রের সলিল সমাধি, পরিবারে মাতম

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ জেলার চকোরিয়া মাতামুহুরী নদীতে গোসল করতে নেমে একই সঙ্গে পাঁচ শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে তাদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। খাওয়া নেই, নাওয়া নেই, শোকে কাঁদতে কাঁদতে শুকিয়ে গেছে স্বজনদের চোখের জল। অকালে ঝরে যাওয়া পাঁচ শিক্ষার্থীর স্বজনরা শুধু নয়, পুরো চকোরিয়াবাসী নিষ্পাপ শিশু-কিশোরদের মৃত্যুতে শোকে ম্যূহমান। পুত্রহারাদের সমবেদনা জানাতে স্রোতের মতোই চার বাড়িতে ভিড় করছে নানা শ্রেণী-পেশার নারী-পুরুষ। রবিবার সকালে তাদের জানাজা ও স্থানীয় কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চকরিয়ার ধনাঢ্যশালী ব্যক্তি আনোয়ার শপিং কমপ্লেক্সের মালিক আনোয়ার হোসাইনের বাড়িতে দুই পুত্রকে হারিয়ে মা-বাবা, চাচা-চাচিসহ পরিবারের সব সদস্য নির্বাক। শোকে স্তব্ধ পরিবারের সদস্যরা যেন তাদের নয়নের মণি আমিনুল হোসাইন এমশাদ ও মেহরাব হোসাইনকে হারিয়ে কান্নারও শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। ব্যবসায়ী আনোয়ারের সংসার আলোকিত করে রেখেছিল তাঁর দুই পুত্র। পড়ালেখায়ও তারা ছিল বেশ মেধাবী। দুই পুত্রকে ঘিরে বড় স্বপ্ন ছিল আনোয়ার হোসাইনের। কিন্তু মুহূর্তেই চুরমার হয়ে গেল তার সেই স্বপ্ন। নিভে গেল একটি বাড়ির দুটি প্রদীপ। তার দুই পুত্রের বড় ছেলে এমশাদ চকরিয়া গ্রামার স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। অপর পুত্র মেহরাব একই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। জানা যায়, চকরিয়ার চিরিঙ্গা মাতামুহুরী নদীর চরে ফুটবল খেলা শেষে শনিবার বিকেলে হৈহুল্লা করে নদীতে গোসল করতে নেমে ৫ বন্ধু চিরতরে হারিয়ে যায়। মাতামুহুরী নদীতে জেগে ওঠা বালুচরে একই বিদ্যালয়ের অন্তত ২২ বন্ধু ফুটবল খেলে নদীতে গোসল করতে নেমেছিল। অন্যরা উঠে আসতে সক্ষম হলেও ছয় বন্ধু চিরতরে হারিয়ে যায়। এদের মধ্যে একজন হাবুডুবু খাচ্ছে দেখে বন্ধুরা গিয়ে তাকে জীবিত উদ্ধার করে নিয়ে আসে। তার সহপাঠীরা মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে চকরিয়া একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করেছে তাকে। তবে তাদের অজান্তে ৫ মেধাবী ছাত্রের সলিল সমাধি হয়েছে। তারা সকলে স্থানীয় গ্রামার স্কুলের শিক্ষার্থী। পরে ডুবুরি দল এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় রাত ১২টা পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়ে এক এক করে পাঁচজন শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এরা হচ্ছে, চকরিয়া গ্রামার স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র ও আনোয়ার শপিং কমপ্লেক্সের মালিক আনোয়ার হোছাইনের দু’পুত্র আমিনুল হোছাইন এমশাদ (১৭) ও তার ছোট ভাই একই স্কুলের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র আফতাব হোছাইন মেহেরাব (১৫), একই স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র ও মানিকপুর তর্দরূপ ভট্টাচার্যের পুত্র তুর্ণ ভট্টাচার্য (১৭), ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের পুত্র ও ১০ম শ্রেণীর ছাত্র সাঈদ জাওয়াদ আরভি (১৭) ও চিরিংগা সরকারী হাসপাতাল পাড়ার মোহাম্মদ শওকতের পুত্র ১০ম শ্রেণীর ছাত্র ফারহান বিন শওকত (১৭)। এদিকে ব্যবসায়ী, শিক্ষানুরাগীর পুত্র ছাড়াও ওই স্কুলের দুই শিক্ষকও হারিয়েছেন তাদের বুকের ধনকে। প্রধান শিক্ষক মোঃ রফিকুল ইসলাম তার বড় পুত্র দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইয়্যিদ জাওয়াদ আর্ভিকে হারিয়ে নির্বাক। একই অবস্থা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা জলি ভট্টাচার্য একমাত্র পুত্র তূর্য ভট্টাচার্যকে হারিয়েছেন। তাদের পরিবারেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
×