ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী রূপপুর পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্রের ঢালাই উদ্বোধন করবেন আজ

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১৪ জুলাই ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী রূপপুর পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্রের ঢালাই উদ্বোধন করবেন আজ

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা / স্টাফ রিপোর্টার, ঈশ্বরদী ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনায় আসছেন আজ। তিনি সকালে হেলিকপ্টারযোগে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্পের হেলিপ্যাডে অবতরণ করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের প্রথম কংক্রিট ঢালাইয়ের উদ্বোধন করবেন। এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাশান ফেডারেশনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউরি ইভানোভিচ বোরিসভ ও আইএইএ পরিচালক দোহী হান । এরপর প্রধানমন্ত্রী দুপুরে পাবনা পুলিশ লাইন মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। তিনি বক্তব্য রাখার পূর্বে পাবনা-মাঝগ্রাম রেল চলাচল, ২৯৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৬.৫২ কিলোমিটার ঈশ^রদী-রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেলপথ, ৬শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে পাবনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তসহ অর্ধশত উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। দীর্ঘ ১০ বছর পর পাবনা শহরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনে নেতাকর্মীদের মধ্যে যেমন ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে তেমনি উন্নয়নের কারণে সাধারণ মানুষও বেশ উচ্ছ্বসিত। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে স্বাগত জানিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ডে শহর ছেয়ে গেছে। মোড়ে মোড়ে নৌকাসদৃশ্য দৃষ্টিনন্দন অসংখ্য তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। গোটা পাবনা শহর যেন প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে উৎসবের শহরে রূপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আগমনে এ জনসমাবেশকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে গ্রামে-গঞ্জে গত ৭ দিন ধরে চলছে মিটিং-মিছিলসহ অবিরাম প্রচার। জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করে নিতে পাবনাবাসী সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে এবার স্মরণকালের সর্ববৃহত জনসমাবেশ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স প্রধানমন্ত্রীর এ সমাবেশকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে দিনরাত সাংগঠনিক নির্দেশনা দিচ্ছেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছেন। পাবনা পুলিশ লাইন মাঠে এ সমাবেশের জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। তবে এবার প্রধানমন্ত্রীর আগমনে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের যেভাবে ঢল নামবে তাতে পাবনা পুলিশ লাইন মাঠের সমাবেশস্থলে অর্ধেক লোকেরও স্থান সঙ্কুলান হবে কী না তা নিয়ে কয়েকদিন ধরে শহরের মুখে মুখে আলোচনা সমালোচনা চলছে। সরকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদেরও দম ফেলানোর যেন ফুরসত নেই। শহরের ভাঙ্গাচোরা রাস্তাঘাটও দিনরাত পরিশ্রম করে করা হচ্ছে মেরামত। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও শ্রেণীপেশার মানুষ এবার প্রধানমন্ত্রীর পাবনায় আগমনকে উন্নয়নের পজেটিভ আখ্যা দিয়ে তারা সমাবেশে যোগদানসহ সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছে। পাবনা চেম্বার অব কমার্স ১০ হাজার ব্যবসায়ী নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশে যোগদানের ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়াও তারা সমাবেশে আগতদের মোড়ে মোড়ে খাবার পানি সরবরাহেরও আশ^াস দিয়েছে। অন্যদিকে পাবনা সংবাদপত্র পরিষদসহ বিভিন্ন পেশাজীবী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাবনাকে সিটি কর্পোরেশন, ঢালাচর-আরিচায় ইউটাইপ ব্রিজ নির্মাণ, ইছামতি নদীর পানি প্রবাহ সৃষ্টি, তাড়াশ ভবনকে মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর, বিনোদন পার্ক স্থাপনসহ প্রাচীন জেলা পাবনাকে বিভাগ ঘোষণার দাবি তুলেছেন। ঈশ্বরদীকে জেলা করার দাবি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন ঘিরে ঈশ্বরদী, লালপুর, ভেড়ামারা ও আটঘরিয়াসহ সর্বত্র উৎসবের মেলা শুরু হয়েছে। সবখানে সাজ সাজ রব চলছে। ঈশ্বরদীবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের ও ন্যায্য দাবি ঈশ্বরদীকে জেলা দাবিতে হয়েছে মানববন্ধন, সমাবেশ ও প্রচার আন্দোলন। উপযুক্ত ও অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ স্থান হওয়া সত্ত্বে¡ও ঈশ্বরদীবাসী জেলার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। একটি জেলা হবার জন্য যে সকল শর্ত থাকার কথা তার বেশিরভাগই রয়েছে ঈশ্বরদীতে। তৎকালীন রেলমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ঈশ্বরদী নগরবাড়ী রেললাইন প্রকল্প ষড়যন্ত্র করে বন্ধ করেও লাভ হয়নি। গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা সে ষড়যন্ত্র নস্যাত করে দিয়েছেন। দীর্ঘদিন পরে হলেও জনগণের ন্যায্য দাবি পূরণ করেছেন সে প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে। ঈশ্বরদীকে জেলা করণ নিয়েও কিছু ষড়যন্ত্র কাজ করেছে এবং করছে। ঈশ্বরদীর রাজনৈতিক নেতৃত্ব আর সুশীল সমাজ মনে করে বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছে কোন ষড়যন্ত্রই ঠিকতে পারবে না। ঈশ্বরদীতে হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র। ঈশ্বরদীকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র সারাবিশ্বের কাছে নতুন করে পরিচিত ও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। সেই সূত্রেও ঈশ্বরদী উপজেলা পূর্ণাঙ্গ জেলার মর্যাদা পেতে পারে। নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন দিক থেকে বেশি ঝুঁকিমুক্ত থাকে যে কোন জেলা শহর। কারণ জেলা শহরে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দফতরের কার্যালয় থাকে। যেহেতু রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ও বিদেশীদের নিবিড় যোগাযোগ তাই রূপপুরের কথা বিবেচনা করে ঈশ্বরদীকে জেলা করা প্রয়োজন আছে বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা মনে করেন। ঈশ্বরদী উপজেলা অনেক জেলার চেয়েও সম্মৃদ্ধ। এখানে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ও লালনশাহ ব্রিজ, বাংলাদেশের একমাত্র সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট, ডাল কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, পাকশী বিভাগীয় অফিস, রেলওয়ে জংসন, বেনারসী পল্লী, পেপার মিল ও বিমান বন্দর ও শতশত শিল্প কলকারখানা। যে কারণে ঈশ্বরদী থেকে বছরে গোটা পাবনা জেলার মোট রাজস্বের শতকরা বিয়াল্লিশ ভাগ রাজস্ব আয় হয়ে থাকে। এ সকল ঐতিহ্যবাহী স্থান দেখতে অনেক পর্যটক আসেন। তাদের নিরাপত্তার স্বার্থেও জেলা করা প্রয়োজন। শতবর্ষ ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংসনের আধুনিকায়ন প্রয়োজন। ঈশ্বরদীর রাজনীতিকরা এবং সকল মহল বিশ্বাস করে সকল ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে শেখ হাসিনার পক্ষেই ঈশ্বরদীকে জেলা ঘোষণা করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর ঈশ্বরদীর রূপপুরে আগমন হবে ঈশ্বরদীবাসীর দীর্ঘদিনের ও প্রাণের প্রত্যাশা পূরণের আগমন।
×