ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘ব্রেক্সিট ইস্যুতে ইউকে-ইইউ সম্পর্ক সবচেয়ে জটিল পর্যায় অতিক্রম করছে’

হতাশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১১ জুলাই ২০১৮

হতাশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে বরিস জনসনের পদত্যাগে হতাশা প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ ক্লদ জাঙ্কার কিছুটা তীর্যকভাবে বলেছেন, ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার এখন ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন। ব্র্রেক্সিট মন্ত্রী ডেভিড ডেভিসসহ তার মন্ত্রণালয়ের দুজন জুনিয়র মন্ত্রীর পদত্যাগের পর জনসনও সরে দাঁড়ালেন। স্পষ্টতই ধারণা করা যায়, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’র সামনে রাজনৈতিক সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট। একের পর এক মে’র মন্ত্রিসভার সদস্যদের পদত্যাগে ইইউর দুই শীর্ষ কর্মকর্তা হতাশা প্রকাশ করেছেন। মে শুক্রবার ব্রেক্সিট নিয়ে একটি পরিকল্পনা প্রকাশের পর থেকে সর্বশেষ এ রাজনৈতিক সঙ্কট শুরু হয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান জ্যঁ ক্লদ জাঙ্কার সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার ঐক্য এখন খুবই প্রয়োজন। চেকার্স পরিকল্পনা নামে পরিচিত মে’র শুক্রবারের পরিকল্পনা নিয়ে জাঙ্কার রবিবার বিকেলে মে’র সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। এর কয়েক ঘণ্টা পরই জনসন পদত্যাগ করেন। একই সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, এটি দুর্ভাগ্যজনক যে ব্রেক্সিটের পুরো প্রক্রিয়াটি ডেভিস তত্ত্বাবধান করে যেতে পারলেন না। তিনি আরও বলেন, ব্রেক্সিট ইস্যুতে ইউকে-ইইউ সম্পর্ক এখন ইতিহাসের সবচেয়ে জটিল পর্যায় অতিক্রম করছে। ডেভিস ছাড়া যেমন এই সমস্যার পুরোপুরি সমাধান সম্ভব নয়। আবার তিনি থাকলেও যে এর সমাধান হয়ে যেত সেটাও বলা যায় না। জনসনের বিদায় সম্পর্কে তিনি কি দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে টাস্ক বলেন, আমার বক্তব্য তাদের দুজনকে ঘিরেই। এর আগে দিনের শুরুতে কমিশনের একজন মুখপাত্র বলেন, ব্রেক্সিট বিষয়ক ব্রিটেনের মুখ্য আলোচক ডেভিসের পদত্যাগ ব্রিটেনের জন্য হতে পারে তবে ব্রাসেলসের জন্য বড় কোন সমস্যা নয়। ওয়েস্টমিনস্টারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে ইইউ গতানুগতিক প্রতিক্রিয়া দেখালেও তার মে সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন বলে জানা গেছে। কমিশনের প্রধান মুখপাত্র মারগারিটিস শিনাস বলেন, ডেভিসের বিদায় আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। যুক্তরাজ্যের জন্য সেটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে। আমরা ২৭ সদস্যবিশিষ্ট জোট। জোটের পক্ষ থেকে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে আমরা শুধু তার প্রতিই দায়বদ্ধ থাকব। তিনি বলেন, অভিজ্ঞতা থেকে এটি দেখা গেছে রাজনৈতিক পর্যায়ে গৃহীত প্রতিশ্রুতি যে কোন প্রক্রিয়াকে জোরদার করে থাকে। তারপরও আমি বলব আমরা এখান থেকে কোন পদ্ধতি ঠিক করে দিতে পারি না। ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ায় ডেভিসের ভূমিকা আসলেই খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। ডিসেম্বর থেকে তাকে কিছুটা নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছিল। চলতি বছর তিনি কেবলমাত্র দুবার ব্রাসেলস সফর করেছেন। ব্রেক্সিট বিষয়ক ইইউর মুখ্য আলোচক মাইকেল বার্নিয়ারের সঙ্গে তার দুবার বৈঠক হয়েছে। একবার ব্রাসেলসে আরেকবার লন্ডনে। মে’র নতুন পরিকল্পনাটি কাজে আসবে না বলে নিজ দলের এমপি ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তারা তাকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির ইইউ বিরোধী রক্ষণশীল এমপিরা এই বলে তাকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে এ ধরনের নীল নক্সার চেয়ে কোন চুক্তি না করাও ভাল। পরিকল্পনাটি ব্রাসেলসে উপস্থাপন করার আগে সেটি পার্লামেন্টে পাস করিয়ে নিতে হবে। এই পরিকল্পনায় ব্রেক্সিটের পরও ইউরোপীয় কোর্ট অব জাস্টিসকে ব্রিটিশ আইন ব্যবস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার সুযোগ দেয়া হয়েছে। অনেক ব্রেক্সিট সমর্থনকারীই এ বিষয়টিতে আপত্তি জানিয়েছেন। লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ইয়ান লেভরি বলেছেন, সরকারে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে, ডেভিসের পদত্যাগের পর মে’র হাতে কোন কর্তৃত্বই আর থাকতে পারে না। লেবার নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের সামর্থ্য টেরেসা মে’র নেই। ২০১৬ সালের গণভোটে যুক্তরাজ্যের জনগণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে ভোট দেয়। এই বিচ্ছেদকেই বলা হচ্ছে ব্রেক্সিট, যা ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যে শেষ করতে দুই পক্ষের মধ্যে দর কষাকষি চলছে।
×