ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব ঘাটতি ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ৬ জুলাই ২০১৮

বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব ঘাটতি ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা

আবুল হোসেন, বেনাপোল ॥ দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দরে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি পণ্যের ওপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪ হাজার ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এতে ঘাটতি হয়েছে ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ১৮ লাখ ২ হাজার ২৮৪ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য। বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বন্দরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন সমস্যা, পণ্যের নিরাপত্তা শঙ্কা ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অযৌক্তিক হারে দিন দিন আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ককর বৃদ্ধিতে পাচার কার্যক্রম বেড়ে যাওয়া রাজস্ব সঙ্কটের কারণ। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৭শ’ ৬০ কোটি ৩০ লাখ টাকার বিপরীতে বছর শেষে আদায় হয়েছিল ৩ হাজার ৮০৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ছিল ৪৫ কোটি ৪০ লাখ। এছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ১৪৩ কোটি। বছরের শেষ মুহূর্তে আবার তা কমিয়ে ২,৮৫০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। পরে ২,৯৪০ কোটি টাকা আদায় করে উদ্বৃত্ত দেখানো হয়েছিল। এভাবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি ছিল ১৩৪ কোটি ৭৩ লাখ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ঘাটতি ৪৫২ কোটি ৮৯ লাখ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ১৯৪ কোটি। আমদানিকারক ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী জানান, কাস্টমসের অযথা হয়রানি, টেবিলে ঘুষ আর বন্দরে নিরাপত্তা সমস্যার কারণে আমদানি কমায় রাজস্ব আদায়ে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। হয়রানি বন্ধ ও ঘুষ কমলে এ পথে আরও আমদানি বাড়বে। কমবে দেশীয় বাজারে আমদানি পণ্যের মূল্য। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, বর্তমান সরকারের আমলে বন্দরে সবচেয়ে বেশি অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। যা আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে মারাত্মকভাবে বাধা সৃষ্টি করছে। অবকাঠামো উন্নয়ন হলে বর্তমানে যে রাজস্ব আসছে তখন তার দ্বিগুণ আসবে বলে মতপ্রকাশ করেন তিনি। বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিনুল হক জানান, দিন দিন আমদানি পণ্যের ওপর অযৌক্তিক হারে শুল্ককর বাড়ছে। এতে বৈধভাবে আমদানি কমে বাড়ছে শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে পণ্য পাচার। শুল্কহার স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখা হলে বৈধ পথে আমদানি বাড়বে। এতে বাড়বে রাজস্ব আয়। বেনাপোল সিএ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের বন্দরবিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন বলেন, গত দু’দশকে বেনাপোল বন্দরে আটটি অগ্নিকা-ের ঘটনায় ব্যবসায়ীরা শত শত কোটি টাকা লোকসানের শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় ক্ষতিপূরণ না পেয়ে অনেকের ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। কেউ আবার এ পথে ব্যবসা বন্ধ করে অন্য বন্দরে গেছেন। আমদানি পণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে আবার ব্যবসা বাড়বে। বেনাপোল কাস্টমস হাউসের পরিসংখ্যান শাখার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাহাবুব হোসেন রাজস্ব ঘাটতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বেনাপোল বন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) আমিনুল ইসলাম জানান, বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ ও আমদানি পণ্যের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। বন্দরে অগ্নিকা-ের ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন ধরনের সতর্কতামূলক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এসব কার্যক্রম চালু হলে এ বন্দর দিয়ে আমদানি সঙ্গে রাজস্বও বাড়বে বলে জানান তিনি।
×