ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বাউফলে কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা লুট

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ২ জুলাই ২০১৮

  বাউফলে কাজ না করেই  প্রকল্পের টাকা লুট

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, ১ জুলাই ॥ বাউফলে অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই বরাদ্দকৃত টাকা হরিলুট করা হয়েছে। প্রকল্পগুলো হলো বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি), রাজস্ব, কাজের বিনিময় খাদ্য (কাবিখা), কাজের বিনিময় টাকা (কাবিটা) সাধারণ ও বিশেষ বরাদ্দ, টেস্ট রিলিফ সাধারণ ও বিশেষ বরাদ্দ, প্রাইমারী স্কুলের সিলিভ ফান্ড, ক্ষুদ্র মেরামত ও লেট্রিন মেরামত। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে গত অর্থবছরে (২০১৭-১৮) বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ৪ কিস্তির মাধ্যমে ৫৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। এই টাকায় ৪৪টি প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও কোন প্রকল্প দৃশ্যমান নেই। পরিবহন ও যোগাযোগ, কৃষি ও সেচ, স্যানিটেশন এবং শিক্ষা খাতে এ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। উপজেলা পরিষদের রাজস্ব আয় থেকে (হাট-বাজার ও বাসা ভাড়া) ৭২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ৭৬টি প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও অধিকাংশ প্রকল্পই আলোর মুখ দেখেনি। এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, কাজ না করে টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। আমরা কাজ তদারকি করেই বিলের টাকা দিয়েছি। কাজের বিনিময় খাদ্য (সাধারণ) ৮৫ টন চাল দিয়ে ১৮ প্রকল্প ও কাজের বিনিময় টাকা (সাধারণ) ৩৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৯ প্রকল্প, কাজের বিনিময় খাদ্য (বিশেষ) ১শ’ ৪৭ টন চাল দিয়ে ১৮ প্রকল্প ও কাজের বিনিময় টাকা (বিশেষ) ৫৭ লাখ ৬২ হাজার ১৯ প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু সরেজমিন অধিকাংশ প্রকল্পেরই কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। টেস্ট রিলিফ (সাধারণ) ৫৪ লাখ ৯ হাজার ৩শ’ ৮০ টাকা ব্যয়ে ৬৬টি প্রকল্প এবং টেস্ট রিলিফ (বিশেষ) ৯৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪১ টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ৩০ জুনের মধ্যে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। বরং প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে টাকা শোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পীযুষ চন্দ্র দে বলেন, কাজ শেষ হওয়ার পরেই বিলের টাকা দেয়া হয়েছে। যে সব কাজ শেষ হয়নি, আমি তার বিলের টাকা দেইনি। পরিপত্রের আলোকে ওই টাকা এ্যাকাউন্টে জমা রেখেছি। কাজ শেষ করার পরেই বিল পরিশোধ করা হবে। তবে কি পরিমাণ কাজের টাকা জমা রাখা হয়েছে তা বলেননি। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রাজিব বিশ্বাসও একই কথা বলেছেন। অপরদিকে উপজেলা শিক্ষা বিভাগের আওতায় ২শ’৩৩টি সরকারী প্রাইমারী স্কুলের অনুকূলে সিলিভ প্রকল্পের আওতায় ৪০ হাজার টাকা করে মোট ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এই টাকা দিয়ে ওইসব স্কুলে শিক্ষা উপকরণ ও ক্ষুদ্র মেরামত করার কথা ছিল। কিন্তু বাস্ত চিত্র হলো ভিন্ন। ৩০ জুনের মধ্যে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা উপকরণ ক্রয় করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। অথচ আগাম বিল ভাউচার জমা দিয়ে টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। একই বিভাগের ১২টি প্রাইমারী স্কুলের ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ১ লাখ টাকা করে মোট ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। স্কুলগুলো হলো উত্তর কালাইয়া, আলী আকবর, মধ্য কেশবপুর, কালাইয়া কোটপাড়, দক্ষিণ রাজাপুর, সার্নেস্বর, উত্তর কপুরকাঠি, পশ্চিম ছিটকা, কেশবপুর এনএস, উত্তর পশ্চিম রামনগর, উত্তর মধ্য রাজাপুর ও কালিশুরী সরকারী প্রাইমারী স্কুল। এর মধ্যে কোন কোন স্কুলে নামমাত্র কাজ করা হলেও অধিকাংশ স্কুলে কাজ করা হয়নি। এ ছাড়াও ১০টি প্রাইমারী স্কুলে লেট্রিন মেরামতের জন্য ২০ হাজার টাকা করে ২ লাখ টাকা টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও কাজ না করেই টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। ৩০ জুনের মধ্যে এসব সংস্কার কাজ করার নির্দেশ ছিল। স্কুলগুলো হলো নিজ তাঁতেরকাঠি, উত্তর পূর্ব কাছিপাড়া, শিবপুর, পশ্চিম মাঝপাড়া, মধ্য নওমালা, দক্ষিণ মহাশ্রাদ্দি, দক্ষিণ বিলবিলাস, উত্তর সাবপুরা, উত্তর পাকডাল ও দক্ষিণ পোনাপুরা সরকারী প্রাইমারী স্কুল। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ রিয়াজুল ইসলাম বলেন, স্কুলের সিলিভ ফান্ডের টাকা এখন পর্যন্ত দেয়া হয়নি। তদারকি করে টাকা দেয়া হবে। স্কুলের ক্ষুদ্র মেরামত ও লেট্রিন সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাজ শেষ হওয়ার পরেই টাকা দেয়া হয়েছে। তারপরেও কোন অনিয়ম পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপর দিকে সমন্বয়হীনতার কারণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত ১ কোটি টাকা ফেরত গেছে। ৩০ জুনের মধ্যে বরাদ্দকৃত টাকা খরচ করার কথা ছিল। অভিযোগ রয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সমন্বয়হীনতার কারণে প্রকল্পগুলো যথাসময়ে দাখিল করা হয়নি।
×