ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কেমন আছে ওসি সালাউদ্দিন ও গোয়েন্দার এসি রবিউলের পরিবার

হলি আর্টিজানের পাচক নিহত সাইফুলের স্ত্রীর জীবনযুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৭:৩৭, ১ জুলাই ২০১৮

হলি আর্টিজানের পাচক নিহত সাইফুলের স্ত্রীর জীবনযুদ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জীবন আর পরিবার নিয়ে রীতিমতো সংগ্রাম করে যাচ্ছে গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার ঘটনায় নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও রেস্তরাঁটির পাচক সাইফুলের পরিবার। শুধু এ তিন পরিবারে নয়, নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারে চলছে মাতম। যা কোনদিনই শেষ হবে না। অথচ এমন শোকের যারা জন্ম দিয়েছে সেই জঙ্গীদের অন্যতম ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ জঙ্গী মেজর জিয়া আজও গ্রেফতার হয়নি। জিয়া ছাড়াও আরও দুই জঙ্গী এখনও পলাতক রয়েছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই জঙ্গীরা গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় ইতিহাসের জঘন্যতম নির্মম হত্যাযজ্ঞটি চালায়। জঙ্গীরা প্রথমেই হলি আর্টিজানে ঢুকে সেখানে থাকা দেশী-বিদেশীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। পরে তাদের নির্মমভাবে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে, জবাই করে ও গুলি চালিয়ে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করে। হত্যার পর পুরো রেস্তরাঁয় রক্তের বন্যা বয়ে যায়। তার ছবি তুলে দেশ বিদেশে পাঠায়। হত্যার দায় স্বীকার করে বিবৃতিও আসে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএসের নামে। হলি আর্টিজানে জঙ্গীদের হাত থেকে দেশী-বিদেশীর উদ্ধার করতে সেখানে অভিযান চালাতে গিয়ে জঙ্গীদের গ্রেনেড হামলা ও গুলিতে নিহত হন বনানী মডেল থানার ওসি সালাউদ্দিন আহমেদ খান ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল করিম। তাদের পরিবারে চলছে মাতম। সে মাতম আজও শেষ হয়নি। এই দুই পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারকে আর্থিকভাবে বিরাট সহযোগিতা করেছে সরকার। পুলিশ কর্মকর্তা রবিউলের স্বপ্ন পূরণে সহযোগিতা চান তার স্ত্রী উম্মে সালমা। তিনি জানান, তার স্বামী মানিকগঞ্জে নিজ এলাকায় প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য একটি বিদ্যালয় গড়ে তুলেছেন। পাশাপাশি একটি বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তোলার স্বপ্নও ছিল তার স্বামীর। স্বামীর সেই স্বপ্ন পূরণে সবার সহায়তা চান তিনি। রবিউল নিহতের সময় অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন সালমা। এক মাস পর পৃথিবীতে আসে কামরুন্নাহার রায়েনা নামের মেয়েটি। রায়েনার বয়স এখন প্রায় দুই বছর। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কাটিগ্রামেই বসবাস করে রবিউলের পরিবার। জঙ্গীদের হামলার পরদিন সেনাবাহিনীর সুদক্ষ কমান্ডোরা অভিযান চালায়। অভিযানে জিম্মি থাকা ৩৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করেন কমান্ডোরা। আর ২০ জনের লাশ উদ্ধার হয়। লাশের মধ্যে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গী নিবরাজ ইসলাম, মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বলের লাশের সঙ্গে রেস্তরাঁটির পাচক সাইফুল ইসলাম চৌকিদারের লাশও ছিল। প্রথম দিকে পাচকের পোশাক পরিহিত সাইফুলকেও জঙ্গী ভাবা হয়েছিল। পরবর্তীতে তদন্তে বেরিয়ে আসে সাইফুল ছিল রেস্তরাঁর পাচক। কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন তথ্য মিলছিল না। আর সাইফুলের লাশের সঙ্গেই ছিল জঙ্গীদের লাশও। তাই অনেক চেষ্টার পরেও নানা জটিলতায় সাইফুলের লাশটি আর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা যায়নি। জঙ্গীদের সঙ্গে সাইফুলের লাশও জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহত সাইফুলের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কলুকাঠি গ্রামে। তার পিতা মরহুম আবুল হাসেম চৌকিদার। পাঁচ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন সাইফুল। সাইফুলের স্ত্রী সোনিয়া আক্তার জানান, তার তিন শিশু সন্তান সামিয়া (১১), ইমলি (৯) ও ১০ মাস বয়সী হাচানকে নিয়ে অনেকটাই নিরানন্দ জীবন কাটে তাদের।
×