ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে গাছ কাটার হিড়িক

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১ জুলাই ২০১৮

বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে গাছ কাটার হিড়িক

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ৩০ জুন ॥ সামাজিক বনবিভাগ পাবনার আওতাধীন তাড়াশ-নিমাইচড়া বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের তাড়াশ উপজেলার মান্নাননগর বিশ^রোড থেকে বাঘলবাড়ি পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার বাঁধে চলছে গাছ কাটার হিড়িক। টেন্ডারের বিক্রিকৃত গাছ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় ঠিকাদার অন্যান্য গাছও কেটে সাবাড় করছে। এদের হাত থেকে ছোট ছোট গাছও রেহাই পাচ্ছে না। অন্যদিকে সরকারী নিয়মে এ গাছের অংশ সুফলভোগী রোপণকারী সদস্যদের দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা পালন করা হয়নি। প্রকৃত গাছ রোপণকারীদের বাদ দিয়ে বাইরের লোককে সুফলভোগী বানানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, তাড়াশ-নিমাইচড়া বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের তাড়াশ উপজেলার মান্নাননগর থেকে বাঘলবাড়ি পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার বাঁধে নতুন পুরাতন মিলে প্রায় ৫ হাজার ইউক্যালিপটাস, অর্জুন, ছাতিম, বাবলা, মেহগনি, আম, জাম, শিশু ও নিমগাছসহ নানা প্রজাতির গাছ রয়েছে। যার প্রকৃত মূল্য প্রায় কোটি টাকা। এ গাছগুলো রোপণ ও পরিচর্যা করে বড় করে তুলেছেন বাঁধে আশ্রয় গ্রহণকারী গৃহহীন মানুষেরা। বিদ্যুত লাইন বসানোর অজুহাতে ২ মাস আগে পাবনার সামাজিক বনবিভাগ থেকে ৯টি লটে এক হাজার একশ ২৬টি গাছ কাটার দরপত্র আহ্বান করে। প্রায় ৯ লাখ টাকায় এ গাছগুলো বিক্রি করা হয়। নামমাত্র মূল্যে গাছগুলো বিক্রি করায় সরকারকে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সিডিউল অনুযায়ী যে গাছে মার্কিং থাকবে শুধু সেই গাছই কাটার নিয়ম থাকলেও তা পালন করা হচ্ছে না। ঠিকাদারের লোকজন ইচ্ছামতো সব গাছই কেটে সাবাড় করে নিয়ে যাচ্ছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারের লোকজন ১ নং লটের ২২৬টি মার্কিংযুক্ত গাছ ছাড়াও অন্তত আরও ২শ ৫০টি ছোট বড় গাছ কেটে নিয়েছে। অন্যান্য লটে এভাবে নির্বিচারে গাছ কেটে নিলে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়সহ বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে এলাকার সাধারণ মানুষ। সিডিউলে গাছের মোথা ৩ ইঞ্চি থেকে ৬ ইঞ্চি কা-সহ মাটিতে রেখে গাছ কাটার নিয়ম থাকলেও তা পালন করা হচ্ছে না। ঠিকাদারের লোকজন বনকর্মীদের সামনেই মাটি খুঁড়ে বড় বড় গর্ত করে গাছের শিকড়সহ গাছ কাটায় বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মার্কিং ছাড়া অবাধে গাছ কাটার সময় বাঁধে বসবাসকারীরা প্রতিবাদ করলে তাদের নানা আইনকানুনের ভয় দেখানো হচ্ছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে বিদ্যুত লাইন বসানোর জন্য বনবিভাগের এত বিপুল পরিমাণ গাছ না কাটলেও চলত। বনবিভাগ নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য বিপুলসংখ্যক গাছ টেন্ডার দিয়ে বিক্রি করেছে। এ টেন্ডারকৃত গাছের সঙ্গে ঠিকাদারের লোকজন ছোটবড় অন্যান্য গাছও কেটে নিচ্ছে। বাঁধে আশ্রয় গ্রহণকারী সাধারণ মানুষ আরও জানিয়েছেন, বনবিভাগ সরকারী বিধান না মেনে গাছ বিক্রির টাকা এলাকার একটি বিশেষ মহলকে দিয়ে তারা মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাত করছেন। সরকারী বিধানে যারা গাছ লাগিয়েছিল তাদের সুফলভোগী না বানিয়ে বনবিভাগ বাইরের লোককে সুফলভোগী দেখিয়েছেন। বাঁধে বসবাসরত বাসিন্দা শাহাজাহান আলী জানান, বাঁধ থেকে প্রায় প্রায় ১০ ফুট দূরে তিনি ২৫টি শিশু গাছ লাগিয়েছিলেন সে গাছগুলো এখনই কাঁটার উপযুক্ত সময় না হলেও তার গাছগুলো কেটে নেয়া হচ্ছে। দরপত্রে এ গাছগুলো উল্লেখ বা মার্কিং না থাকলেও ঠিকাদার ভয়ভীতি দেখিয়ে এ গাছগুলো কেটে নিচ্ছে। বাঁধে আশ্রয় গ্রহণকারী আছিয়া খাতুন জানান, তিনি ১৪টি গাছ লাগিয়ে বড় করে তুলেছেন। এ গাছগুলোও কেটে নেয়ার পাঁয়তারা চলছে। ওরা পুলিশের ভয় দেখাচ্ছে।
×