ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার বছরজুড়ে পর্যটকদের ভিড় ॥ সৌন্দর্য বর্ধনের মহাপরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ৩০ জুন ২০১৮

দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার বছরজুড়ে পর্যটকদের ভিড় ॥ সৌন্দর্য বর্ধনের মহাপরিকল্পনা

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার প্রাকৃতিক দান। একদিকে পাহাড় আবার পাহাড় ঘেষে বিশাল সমুদ্র সৈকত বিশ্বে বিরল। পর্যটন নগরী কক্সবাজার শহরের কলাতলী হয়ে ইনানী বীচে যাবার সময় মনোরম এ দৃশ্য দেখে যেন সকলের মন জুড়ে যায়। কি অপূর্ব দৃশ্য। পূর্বদিকে সুউচ্চ পাহাড় আর পশ্চিমে মাত্র এক শ’ গজের মধ্যে সমুদ্র। মাঝখানে মেরিন ড্রাইভ সড়কের উপর দিয়ে বয়ে চলেছে মনপ্রাণ শীতল হওয়ার মতো বাতাস। একই স্থানে সাগর ও পাহাড় মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। পর্যটক ও স্থানীয়দের সুবিধার্থে শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রশস্তকরণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের এক মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। গোটা বছরই পর্যটক আসা-যাওয়া থাকলেও শীতকালীন সময়ে বেড়াতে উপযুক্ত সময় মনে করেন ভ্রমণ পিপাসুরা। প্রতি বছর শীতকালীন সময়ে শুরু হয় বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে পর্যটন মৌসুম। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা এসে ভিড় জমায় সৈকত রাণী কক্সবাজারে। এমনকি বিদেশী পর্যটকদের অনেকে প্রতি বছর ভ্রমণে আসে এখানে। নবেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রত্যহ লাখো পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের বালিয়াড়ি। দেশের বিভিন্ন স্থানে দর্শনীয় স্থান রয়েছে। তবে পাথুরে বীচসহ কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকদের পছন্দ বেশি। একদিকে বিশাল সাগর অন্যদিকে সুউচ্চ পাহাড়, টিলা, পর্বত সম গিরিপথ, আদিনাথ মন্দির, দেশের মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সেন্টমার্টিন এবং পাশে রয়েছে মিয়ানমার রাষ্ট্র। এছাড়াও বিশাল বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউয়ে ছিটকে পড়া জলরাশি ও প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্টি পাথরের লুকোচুরি খেলায় নান্দনিক সৈকতে পরিণত হয়েছে সাগর কন্যা ইনানী। সমুদ্রের পূর্বদিকে বৃহত্তম অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত কক্সবাজারে উখিয়ার ইনানী হচ্ছে হাতি, হরিণ, চশমা বানরসহ অসংখ্য বন্য প্রাণীর আবাসস্থল। সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি নয়নাভিরাম ইনানীর পাহাড়ের মায়া (আবাসস্থল) ত্যাগ করেনি এখনও অসংখ্য বন্য প্রাণী। উখিয়ার উপকূলীয় জনপদ ২৮ কিলোমিটার সৈকত সংলগ্ন সাড়ে ১০ হাজার হেক্টর বনাঞ্চল নিয়ে ইনানীর অবস্থান। দেশের মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সেন্টমার্টিন ও ছেরাদিয়ায় ভ্রমণ করতে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ আসে দেশ-বিদেশ থেকে। সমুদ্রের মাঝখানে চতুর্দিকে নারকেল বাগানে ভরপুর এ দ্বীপে রাতে জোসনার আলোতে প্রিয়জনকে নিয়ে গল্প করার এক মূখ্য মৌসুম হচ্ছে শীতকাল। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের লীলাভূমি কক্সবাজারে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের টইটুম্বর অবস্থা হয়ে উঠে শীতকালীন সময়ে। তখন লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে কক্সবাজারের সী-বীচ ও আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রগুলো। তখন সৈকতের বালিয়াড়িতে তিল পরিমাণ জায়গা খালি থাকে না। সূর্য্য ডুবির আগে উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয় সৈকতের বালিয়াড়িতে। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ নগর জীবনের কোলাহল থেকে সাময়িক মুক্তির জন্য বেড়াতে এসে কক্সবাজারে আনন্দে মেতে উঠে। তারা ছুটে যায় গন্তব্য স্থান বিশ্বের দীর্ঘতম সী-বীচ ছাড়াও হিমছড়ি ঝর্ণা, ইনানী পাথুরে বীচ, প্রাণী জযাদুঘর, আদিনাথ মন্দির, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, রামকুট ও প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনসহ বিভিন্ন স্থানে। ইনানী ও সেন্টমার্টিন বীচ এলাকাজুড়ে প্রকৃতি নিজ খেয়ালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে অসংখ্য কোরাল। এসব কোরালের রহস্যময়ী অবস্থান অবলোকন করে পর্যটকদের ভ্রমণে ভিন্ন আনন্দ এনে দেয় বলে জানিয়েছেন ভ্রমণ পিপাসুরা। ইনানী ও সেন্টমার্টিন সমুদ্রের পানি যেমন নীলাভ দেখায়, তেমনি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কোরাল পাথুরের ওপর ছোটাছুটি স্মৃতির মানসপটে ফটোসেশন করা, সূর্যাস্ত দর্শন ভ্রমণ পিপাসুদের মনকে আরও বেশি আনন্দিত করে তোলে। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থী শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভরে ওঠে কক্সবাজারের বিশাল সমুদ্র সৈকত। ছেলেমেয়ে ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসা বাসিন্দারা বিনোদন কেন্দ্র ও বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে ঘুরতে থাকে অনেকটা মনের আনন্দে। শীতকালে লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের বালুকাবেলা। রজততটে দাঁড়িয়ে বিকেলের সূর্যাস্ত দেখতে একই সঙ্গে লাখ লাখ লোকের সমাগম, নারী পুরুষের মহা সম্মিলন সব বয়সের শিশু কিশোর, তরুণ-তরুণীর উচ্ছ্বাস রাঙ্গিয়ে তোলে সাগরকন্যা নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজারকে। বিশ্বের দীর্ঘতম এ সমুদ্র সৈকতকে আরও উন্নীত করার মানসে যানজট নিরসন, পর্যটন এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও পরিকল্পিত শহর গড়ে তুলতে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। বাস্তবায়নে রয়েছে, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক), সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, কক্সবাজার পৌরসভা ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) ফোরকান আহমদ বলেন, কক্সবাজারকে আধুনিক ও পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে এ মহাপরিকল্পণা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পর্যটন শহর কক্সবাজারের চেহারাই পাল্টে যাবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী শহরের ভেতরে-বাইরে চারটি সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্ত করা হবে। সড়কগুলো হচ্ছে প্রধান সড়ক, বাইপাস-কলাতলী সড়ক, সৈকত সড়ক ও বাঁকখালী বিকল্প সড়ক। জুলাই থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে শেষ হবে ২০২০ সালের জুলাই মাসে। এছাড়া শহরতলির লিংক রোড থেকে বাইপাস সড়ক হয়ে কলাতলী হোটেল-মোটেল জোন হয়ে সৈকতের লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত আট কিলোমিটার সড়কটিও উন্নীত হচ্ছে চার লেনে। এর জন্য সওজের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৯৪ কোটি টাকা। সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী রানাপ্রিয় বড়ুয়া বলেন, সড়কটির প্রস্থ হবে ৮০ ফুট। -এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে
×