ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২৯ জুন ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ চিরচেনা রূপে ফিরেছে ঢাকা। ঈদের ছুটি শেষে প্রায় সকলেই কাজে যোগ দিয়েছেন। এখন কর্মচঞ্চল রাজধানী। যে যার মতো ব্যস্ত। গত কয়েকদিন শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো ব্যবহার করে মনে হয়েছে, গাড়ি সংখ্যা অনেক বেড়েছে। যানজটও। মূল সড়ক দিয়ে যাতায়াতের সময় যানজটে পড়তে হচ্ছে। বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করেও বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। গত বুধবারের কথাই বলা যাক, পুরান ঢাকার বাংলামোটর থেকে বিজয় সরণি পর্যন্ত আসতে রীতিমতো যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়েছে। তেজগাঁ থেকে বিজয় সরণি পর্যন্ত আসতে ছোট্ট একটি ফ্লাইওভার। দুপুরে সেটি অতিক্রম করতেই চলে গেছে চল্লিশ মিনিটেরও বেশি সময়। অবশ্য রাস্তায় নয় শুধু, এখন সবখানেই ভিড়। অফিসপাড়া মতিঝিলে সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকছে সব। সরকারী অফিস ব্যাংক বীমার কর্মকর্তা কর্মচারীদের শতভাগ উপস্থিতি সহজেই অনুমান করা যায়। আদালত পাড়ায় পুরনো ভিড়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা চলছে। শহরের সব রেস্তরাঁ খোলা। যেসব দোকানপাটে চাঁদ রাত পর্যন্ত বিপুল বিক্রি হয়েছে, সেগুলোতে এখন কিছুটা আলসেমির ভাব। কিন্তু খোলা। বেচা কেনাও শুরু হয়েছে নতুন করে। ঢাকার সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের কর্মকা-ে একটা ধীরগতি ছিল। সেটাও আর নেই। এভাবে ক্রমে আপন চেহারায় ফিরেছে ঢাকা। ঈদের ঠিক আগে আগে শুরু হয়ে গিয়েছিল আষাঢ়। আর আষাঢ় মানেই প্রিয় ঋতু বর্ষার শুরু। ইতোমধ্যে মাসের অর্ধেক সময় গত হয়েছে। বৃষ্টিও হচ্ছে বেশ। অবশ্য বর্ষাকে আলাদাভাবে অনুভব করার যে বিষয়টি ছিল, এবার সেটি কিছুটা মার খাচ্ছে। কারণ আষাঢ়ের অনেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল বৃষ্টি। প্রকৃতিতে বর্ষার রূপ পরিলক্ষিত হচ্ছিল। আগাম বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছিল শহর ঢাকার অলিগলি ফুটপাথ। অবশ্য বর্ষা যখন শুরু হলো তখনও জলের কোন অভাব হচ্ছে না। নিয়মিতই কান্না করছে আকাশ। কখনও মুষলধারে কখনও অঝর ধারা বৃষ্টি। বর্ষার বৃষ্টির প্রতি অদ্ভুত টান আছে বাঙালীর। রিমঝিম বৃষ্টি নিয়ে কত গান কবিতা! প্রতিবছর আষাঢ়ের প্রথম দিনে বরণ করে নেয়া হয় বর্ষাকে। শহর ঢাকায় থাকে নানা আনুষ্ঠানিকতা। এবার ঈদের কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। তবে আজ শুক্রবার নাচ গান কবিতা কথনে হবে বর্ষা উৎসব। চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় উৎসবের আয়োজন করবে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। সকাল সাড়ে ৭টায় বর্ষার রাগ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হবে। রাগসঙ্গীত পরিবেশন করবেন শেখর ম-ল। গানে গানে বর্ষা বন্ধনা করবেন শিল্পী ফাহিম হোসেন চৌধুরী, লিনা তাপসী খান, সুমন মজুমদার, অনিমা রায় ও মামুন জাহিদ খান। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবেন নৃত্যজন, নটরাজ, স্পন্দন, বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস, স্বপ্ন বিকাশ কেন্দ্রের শিল্পীরা। আবৃত্তি করবেন নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি, মাশকুর-এ-সাত্তার কল্লোল প্রমুখ। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবেন স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র, বহ্নিশিখা, পঞ্চভাস্কর, সমস্বর ও আয়োজক শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। এসবের বাইরে ধরিত্রীকে সবুজ করার লক্ষ্যে প্রতীকীভাবে শিশুদের মাঝে বনজ, ফলজ ও ঔষধী গাছের চারা বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট। বিশ্বকাপ উন্মাদনার কথা না বললেই নয়। পুরোদমে জমে উঠেছে ফুটবল বিশ্বকাপ। সারা দুনিয়ার মতো বাংলাদেশেও চলছে উৎসব। আমাদের ফুটবল নেই। অথচ খেলাটি নিয়ে যে আবেগ, অটুট আছে। শহর ঢাকার অলিতে গলিতে নানা ভাব ও ভাষায় ভালবাসার প্রকাশ ঘটানো হচ্ছে! সারাদেশের মতো ঢাকায়ও আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের সমর্থক বেশি। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভালয় ভালয় দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌঁছবে তো? নাকি কোন অঘটনের শিকার হবে? চিন্তার বলিরেখা কপালে নিয়েই খেলা দেখেছেন সমর্থকরা। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মাঠে নামে আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশ সময় রাত ১২টার পর খেলা শুরু হয়। অথচ মনে হচ্ছিল দিনের বেলা। প্রায় প্রতিটি ঘরের আলো জ্বলছিল। অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি চলছিল খেলা দেখার। একটু পর পর গোল গোল বলে চিৎকার। শুধু জিতলে হবে না একই সময় চলা অন্য খেলাটির ফলাফলের দিকে লক্ষ্য রাখতে হচ্ছিল মেসি ভক্তদের। অবশেষে জয় এবং দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা নিশ্চিত হয়। খেলা শেষ হতেই আনন্দ মিছিল। টিএসসি সড়ক দ্বীপের সামনে সমবেত হয়েছিলেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। ছেলেরা মেয়েরা মিলে বিজয় উদযাপন করেছে। তারও আগে পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারে গিয়ে চোখ ছানাভরা। এলাকার সব তরুণ-তরুণীরা যেন রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। সবারই গায়ে আর্জেন্টিনা দলের জার্সি। আর তার পর বুধবার দিবাগত রাতে ছিল ব্রাজিলের পরীক্ষা। যথারীতি খেলাটি নিয়ে ছিল বাড়তি উত্তেজনা। দিনের বেলায়ই হলুদ টি-শার্ট পরে প্রস্তুত ছিলেন নেইমার ভক্তরা। রাতে সবাই বসে যান টেলিভিশনের সামনে। হ্যাঁ, তারাও পৌঁছে গিয়েছেন দ্বিতীয় রাউন্ডে। এখন সামনে থাকছে নকআউট পর্ব। একটি ম্যাচ হারলেই বিদায়। কী হবে? পারবে তো নেইমার? মেসির এত সম্ভাবনা, পারবে তো দেশের জন্য কিছু করে দেখাতে? আবারও শুরু হয়ে গেছে জল্পনা কল্পনা। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ আলোচনা চলবে।
×