ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্ভাবনী মেলায় সাফল্যের গল্প

মোবাইলে শিশুদের হাতে উপবৃত্তির টাকা, মিডডে মিল

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৫ জুন ২০১৮

 মোবাইলে শিশুদের হাতে উপবৃত্তির টাকা, মিডডে  মিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোন রকমের ভোগান্তি ছাড়াই কীভাবে শিওর ক্যাশের মাধ্যমে মোবাইল হয়ে উপবৃিত্তর টাকা যাচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের হাতে সে কথাই তুলে ধরছেন উদ্ভাবক। কোন উদ্ভাবক আবার তুলে ধরছেন, সারা দেশে শিশুদের মাঝে মিড-ডে মিল কীভাবে চালু করা যায়। আরও কম খরচে দ্রুততার সঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত প্রতিটি মানুষের কাছে তার পেনশন সুবিধা পৌঁছানো সম্ভব মেলায় তাই দেখাচ্ছেন কোন উদ্ভাবক। রবিবার সকালে রাজধানীর মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে শুরু দু দিনব্যাপী উদ্ভাবনী মেলা ও শোকেসিংয়ের চিত্র ঠিক এমনই। মেলায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অধীনস্থ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের তৈরি ৩০টি স্টল স্থান পেয়েছে। যেখানে উদ্ভাবকরা তুলে ধরছেন তাদের নতুন নতুন চিন্তা। আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে অধিদফতর পর্যায়ে ১৩টি, মাঠ পর্যায়ে ১৭২টি এবং ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে মাঠ পর্যায়ে ২৩২টি উদ্ভাবনী ধারণা ইতোমধ্যেই বাস্তবায়িত হচ্ছে। যার অনেকগুলোই ইতোমধ্যে প্রশংসাও কুড়িয়েছে। সকালে মেলার উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী এ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান। এ সময় মন্ত্রী বলেন, আমরা যা করি, আমাদের ভাবনা ও পরিকল্পনা নিয়ে উদ্ভাবনী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ মেলায় দেশের সব স্তরের মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। প্রাথমিক শিক্ষায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসছে। শিক্ষার্থীদের সঠিক শিক্ষা দিয়ে তাদের মেধা ও শরীর সঠিকভাবে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিকতা বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলতে প্রতিটি স্কুলে ক্রীড়া ও সংগীত বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। আমরা একটি অভিজ্ঞ টিম নিয়ে কাজ করছি। এ কারণে অল্প সময়ের মধ্যে সারাদেশে মোবাইলের মাধ্যমে উপবৃত্তি দেয়া, মিডডে মিল চালু করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে আরও বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবনী আইডিয়া নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। কম খরচে দ্রুততার সঙ্গে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর মাধ্যমে জনপ্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ইনোভেশন সেলের গৃহীত নানাবিধ উদ্ভাবনী উদ্যোগ ইতোমধ্যে অবদান রাখতে শুরু করেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপারিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব আসিফ উজ জামান, অতিরিক্ত সচিব এফ এম মঞ্জুর কাদির, অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোঃ রমজান আলী প্রমুখ। এ ছাড়া দেশী বিদেশী উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, মাঠ পর্যায় থেকে মেলায় অংশপ্রহণকারী ৩০ জন উদ্ভাবক সারাদেশ থেকে বাছাইকৃত ১০০ জন প্রধান শিক্ষক এবং মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দফতরের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে রাজধানীর বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও উপস্থিত ছিলেন। ‘আপনার উদ্ভাবনী ধারণা, শিক্ষায় আনবে সম্ভাবনা’ এই স্লোগান নিয়ে শুরু হয়েছে এবারের মেলা। ২০১৩ সালের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের আলোকে ‘ইনোভেশন টিম’ গঠন করা হয়। যার প্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরেও গঠিত হয় ‘ইনোভেশন টিম’ এবং শুরু হয় প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনের শোভাযাত্রা। এবারের উদ্ভাবন মেলায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্ভাবনী ধারণা প্রদর্শন করছে। যার মধ্যে আছে শিওর ক্যাশের মাধ্যমে মোবাইলে উপবৃত্তি বিতরণ, সারা দেশে শিশুদের মাঝে মিড-ডে মিল চালুকরণ, পেনশন সহজীকরণ, ই-মনিটরিং সিস্টেম, ডিপিই এ্যাকাউন্টিং সিস্টেম, ই-প্রাইমারী স্কুল সিস্টেম ও প্রাথমিক বিদ্যালয় ই-ব্যবস্থাপনা, টিচার রিক্রুটমেন্ট সিস্টেম, আমার স্বপ্ন আমার স্কুল, প্রয়াস, সততার দোকান, কর্মবীরসহ আরও বেশ কিছু ধারণা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের সঠিক শিক্ষা দিয়ে তাদের মেধা ও শরীর সঠিকভাবে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিকতা বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলতে প্রতিটি স্কুলে ক্রিড়া ও সঙ্গীত বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। আমরা একটি অভিজ্ঞ টিম নিয়ে কাজ করছি। এ কারণে অল্প সময়ের মধ্যে সারাদেশে মোবাইলের মাধ্যমে উপবৃত্তি প্রদান, মিড-ডে মিল চালু করা সম্ভব হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আসিফ উজ জামান বলেন, আমাদের মিড-ডে মিল ও মোবাইলের মাধ্যমে উপবৃত্তি প্রদান অনেক সাড়া পড়েছে। তিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় এমন আরও নতুন নতুন উদ্ভাবনী বা ভাবনা তৈরির জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান। অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, সকল শিশুর জন্য মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরা সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের ব্যাপক উদ্যোগ প্রাথমিক শিক্ষার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তারপরেও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা, শিখন-শেখানো কার্যাবলী, নৈতিকতার বিকাশ, সেবা প্রদান প্রক্রিয়াসহ বেশকিছু ক্ষেত্রে কিছুটা সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। যার প্রেক্ষিতেই ২০১৬-১৭ অর্থবছর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর প্রথমবারের মতো উদ্ভাবনী উদ্যোগ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
×