ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

টুপি রফতানি হচ্ছে বিদেশে

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১১ জুন ২০১৮

টুপি রফতানি হচ্ছে বিদেশে

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ সে এক বিশেষ কায়দায় সেলাই ও ভাঁজ করে কাপড় দিয়ে বানানো হচ্ছে টুপি। সবার হাতে সুঁই-সুতা ও কাপড়। সুঁইয়ের ফোঁড়ে নান্দনিক নক্সা ফুটে উঠছে একেকটা কাপড়ে। নওগাঁর এই নক্সা করা টুপি যাচ্ছে দেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে। দেশে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। আর এসব টুপি তৈরি করছেন, গ্রামীণ নারীরা। টুপি তৈরির আয় থেকে অভাবের সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। এসেছে সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য। ঈদকে সামনে রেখে নওগাঁ সদর, রানীনগর ও মহাদেবপুরে এই টুপি তৈরির কাজে ব্যস্ততা বেড়েছে গ্রামীণ নারীদের। জানা গেছে, জেলার তিনটি উপজেলার ৭০টি গ্রামের বিভিন্ন বয়সী প্রায় ৫০ হাজার নারী কারিগর এই বিশেষ ধরণের টুপি তৈরির কাজের সঙ্গে জড়িত। তবে মহাদেবপুর উপজেলার খোসালপুর, কুঞ্জবন, খাজুর, রনাইল ও ভালাইন, সুলতানপুর, শিবগঞ্জ, তাতারপুর, মধুবন, হরমনগর, উত্তরগ্রামসহ কয়েকটি গ্রামের টুপি তৈরির কারিগর বেশি। আর ঈদকে সামনে রেখে তাদের বেড়েছে চরম ব্যস্ততা। কেউ বাড়ির উঠানে আবার কেউ দলবদ্ধভাবে টুপি তৈরি করছেন। নওগাঁ ও মহাদেবপুরের খুচরা ব্যবসায়ীরা বিদেশী ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন নক্সার ছাপ দেয়া সাদা রঙের টুপির কাপড় ও সুতা এসব কারিগরদের কাছে পৌঁছে দেন। এসব কাপড়ে সুঁই-সুতা দিয়ে সুন্দর সুন্দর নক্সা ফুটিয়ে তোলেন নারী কারিগররা। টুপিতে নক্সা তৈরিতে সময় এবং শ্রমের ওপর ভিত্তি করে কারিগরদের পারিশ্রমিক দেয়া হয়। কোন টুপিতে নক্সা তুলতে ২০-২৫ টাকা আবার কোন টুপিতে নক্সা করতে ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা পর্যন্ত দেয়া হয়। টুপিতে নক্সা তৈরির কাজে একজন নারী কারিগরের মাসে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা আয় হয়। বেশির ভাগ বোতাম সেলাই ও চেইন সেলাই টুপি তৈরি করা হয়। নিপুন হাতে প্রতিটি টুপি তৈরি করতে প্রকার ভেদে ৭ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে। এ কাজে স্বাবলম্বী হলেও সময়ের ন্যায্য মজুরি পান না তারা। এসব নক্সা করা টুপি যাচ্ছে, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কুয়েত, কাতার, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। দেশে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। মহাদেবপুর উপজেলার মধুবন গ্রামের গৃহবধূ সাজেদা খাতুন। টুপির প্রাথমিক কাজটি করেন তিনি। তিনি বলেন, এক থান কাপড় থেকে প্রকারভেদে ৯০ থেকে ১শ’ পিস টুপি তৈরি হয়। পলিথিনের কাগজে সুঁই দিয়ে বিভিন্ন ফুলের ডিজাইন করা হয়। এরপর সাইজ করা টুপির কাপড়ে ডিজাইন পলিথিন রেখে তেল ও ব্লু (নীল রং) দিয়ে ছাপ দেয়া হয়। ছাপ দেয়া ফুলের ওপর সিঙ্গার মেশিন দিয়ে সেলাই করা হয়। এ কাজটি করতে ১-২ দিন সময় লাগে। যার মজুরি পান ৭শ’ টাকা। এরপর এ টুপিটি বিভিন্ন কারিগরদের কাছে হাতের কাজ করতে দেয়া হয়। খোসালপুর গ্রামের রাবেয়া খাতুন বলেন, অভাবের সংসারে কোন দিন খাই তো কোন দিন খাই না। তাই এক প্রতিবেশীর উৎসাহে টুপিতে নক্সা তোলার কাজ শুরু করি। স্বামী ও নিজের আয় দিয়ে এখন সংসার চলছে স্বাচ্ছন্দ্যে। নিজেদের উপার্জিত টাকা দিয়ে তিন শতক জমি কিনে তাতে ইটের বাড়িও তুলেছি। রনাইল গ্রামের কলেজ ছাত্রী আরিফা খাতুন বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি টুপি তৈরির কাজ করে মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা আয় হয়। এতে কলেজে যাওয়া-আসার খরচসহ আনুষঙ্গিক কাজে ব্যয় করা হয় এবং পরিবারেও দেয়া হয়। তবে পরিশ্রমের তুলনায় পারিশ্রমিকটা কম পাওয়া যায়। মহাদেবপুরের খুচরা টুপি ব্যবসায়ী মাজহারুল ইসলাম জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে এই এলাকায় বিদেশী টুপি তৈরির কাজ শুরু হয়। আগে শুধু ‘কুপিয়া’ টুপি তৈরি হতো। এটি ওমানের জাতীয় টুপি। এখন পাকিস্তান, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কুয়েত, কাতার, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এখানকার তৈরি টুপি যাচ্ছে। তিনি জানান, এসব টুপি ঢাকার চকবাজার, বাইতুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে পাঠানো হয়। সেখানকার ব্যবসায়ীরা আবার মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এসব টুপি রফতানি করেন। কাপড় ও নক্সাভেদে এসব টুপি ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয়। সারাবছরই আমরা কারিগরদের টুপির অর্ডার দিয়ে থাকে। তবে রমজান ও ঈদ উপলক্ষে টুপির চাহিদা বেড়ে যায়।
×