ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাদকবিরোধী অভিযানে হয়রানি করলে কঠোর ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৭:২৪, ১০ জুন ২০১৮

মাদকবিরোধী অভিযানে হয়রানি করলে কঠোর ব্যবস্থা

শংকর কুমার দে ॥ দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানে ব্যাপক জনসমর্থন ও সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে দেশ-বিদেশে নানামুখী ষড়যন্ত্রের জাল ফেলা হয়েছে। কোটি কোটি টাকার ফান্ড গঠন করে মাদকবিরোধী অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ করার মাধ্যমে ব্যর্থ করে দিতে মাঠে নেমেছে মাদক মাফিয়া ডন ও তাদের মুনাফাভোগী দেশী-বিদেশী চক্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনাগুলোকে সামনে এনে মাদকবিরোধী অভিযান থামিয়ে দিতে পর্দার অন্তরাল থেকে নানামুখী চক্রান্তের অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, দেশে সরকার মাদকের বিরুদ্ধে যে জিরো টলারেন্স নিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তা থামিয়ে দিতে মাঠে নেমেছে অশুভ শক্তি। এ জন্য কোটি কোটি টাকার ফান্ড ব্যয় করে আন্তর্জাতিক সংগঠন ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। মাদক-বাণিজ্যের মাধ্যমে গোপনে সারাদেশে বিশাল অঙ্কের টাকা হাত বদল হয়ে দেশ-বিদেশে রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনসহ নানা ধরনের লবিস্টের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। সর্বগ্রাসী মাদক বাণিজ্য ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতায় আন্ডারওয়ার্ল্ডের সৃষ্টি হয়েছে। মাদক বাণিজ্যে আন্ডারওয়ার্ল্ডের বিস্তৃতি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতে গিয়ে শেকড় গড়ে উঠেছে। মাদকের কাঁচা টাকায় এখন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও গণমাধ্যমে মাদকবিরোধী নানামুখী অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে সর্বগ্রাসী মাদকের ভয়াল থাবা বিস্তারের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মাদক সংক্রান্ত অপরাধীদের মৃত্যুর ঘটনাগুলোকে হাতিয়ার হিসেবে সামনে আনছে সরকারবিরোধী চক্র। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান ক্রমেই যখন জনপ্রিয়তা অর্জন ও সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছে তখনই আন্তর্জাতিক সংগঠন ও গণমাধ্যমে নানা ধরনের অপপ্রচার ছড়িয়ে দিয়ে তা প্রচারের মাধ্যমে সরকারকে কোণঠাসা করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এই খাতে ব্যয় হচ্ছে মাদক বাণিজ্যের কাঁচা টাকা। মাদক বাণিজ্যের কোটি কোটি কাঁচা টাকা সরকারের নেয়া মাদকবিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে ব্যয় হওয়ার অভিযোগ পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, মাদক-বাণিজ্যের শিকড়বাকড় প্রশাসন ও রাজনীতির অনেক গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত। মাদক অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করার কাজটা খুবই কঠিন। মাদক আগ্রাসনের মূলোৎপাটন যে অত্যন্ত কঠিন কাজ তা আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত, যা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে মাদকবিরোধী অভিযানে তার প্রমাণ হয়েছে। মাদকবিরোধী অভিযানে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সঙ্গেও বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মাদকবিরোধী অভিযান সফল করাটা অত্যন্ত কঠিন কাজ জেনেও মাদকের আগ্রাসন থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রকে রক্ষার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মাদকবিরোধী অভিযানে সরকারের সাফল্য ও জনসমর্থন পাওয়ার ঘটনায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আন্তর্জাতিক সংগঠন ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অপপ্রচার চালানোর কৌশল নিয়েছে সরকারবিরোধী অশুভ মহলটি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাগুলোকে সামনে আন্তর্জাতিক সংগঠন ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে কল্পকাহিনী ছড়িয়ে মাদকবিরোধী অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টার মাধ্যমে ম্লান করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক দফতর ‘অফিস ফর ড্রাগস এ্যান্ড ক্রাইম’ (ইউএনওডিসি) বলেছে, তারা বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে এবং মাদক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে মানবাধিকার ভিত্তিক কৌশল অবলম্বনের জন্য সব সদস্য দেশের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশে রাজনৈতিক হত্যাকা-কে আড়াল করতে এই ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধ’কে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে লন্ডনের দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে। এর আগে লন্ডনের আরেকটি সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ান বাংলাদেশের মাদকবিরোধী যুদ্ধকে ফিলিপিন্সের সঙ্গে তুলনা করে বলেছিল, এর ফলে দেশজুড়ে এক ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। টেকনাফে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সেখানকার পৌর কাউন্সিলর ও স্থানীয় যুবলীগের সাবেক সভাপতি মোঃ একরামুল হকের নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে রেকর্ডকরা অডিও প্রকাশ হওয়ার পর এ নিয়ে ব্যাপক শোরগোল তৈরি করে আন্তর্জাতিক সংগঠন ও গণমাধ্যমে অপপ্রচার করানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। মাদকবিরোধী অভিযানে টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের মর্মান্তিক ও দুঃখজনকভাবে নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা চলছে। চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের প্রতি বিপুল জনসমর্থন সত্ত্বেও এই আলোচনা-সমালোচনার মূলে রয়েছে নানা মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রকাশিত ও প্রচারিত একটি অডিও। যদিও এ ঘটনাটির জন্য তদন্ত কমিটি গঠন, ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে তদন্ত, র‌্যাবের অভ্যন্তরীণ তদন্তের নির্দেশ, বন্দুকযুুদ্ধের বিষয়ে আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তদন্ত চলছে। তদন্তে নিহত একরাম নিরপরাধ প্রমাণিত হলে এবং কোন প্রকার অস্বচ্ছতা পাওয়া গেলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে তিনি বলেছেন, মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। কারণ যুবসমাজকে বাঁচাতে হবে। বর্তমান জটিল প্রেক্ষাপটে মাদকবিরোধী অভিযান থামিয়ে দেয়ার জন্য নানামুখী অপতৎপরতার কথাও বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের অভিমত, সর্বগ্রাসী মাদকের আগ্রাসন যেই পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে রাষ্ট্র তো নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারে না। সকলের চোখের সম্মুখে একটি প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। নীরবে নিভৃতে তার কুফল ভোগ করছে অসংখ্য পরিবার। সেই সঙ্গে মারাত্মক হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে গোটা সমাজকে। সর্বগ্রাসী মাদক বাণিজ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে দিন দিন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে অপরাধ প্রবণতা। সব চেয়ে আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, মাদক-বাণিজ্যের মাধ্যমে গোপনে সারাদেশে যে বিশাল অঙ্কের টাকার হাতবদল হচ্ছে, সেই টাকা কারা কোথায় কী কাজে ব্যবহার করছে, তা রাষ্ট্র বা সরকারের উদ্বেগের কারণ যার তদন্ত করা অপরিহার্য। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাইরের কারও চাপে দেশব্যাপী চলমান মাদকবিরোধী অভিযান বন্ধ হবে না। যতক্ষণ না সর্বনাশা মাদকের ছোবলকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় ততদিন অভিযান চলবে। জাতিসংঘের অফিস অন ড্রাগস এ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি) বাংলাদেশে চলমান এই মাদকবিরোধী অভিযান গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানানোর পর গত রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মেট্রোরেল প্রকল্পের প্যাকেজ-৭ এর এ চুক্তি সই অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই কথা বলেছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণের অধিকার রয়েছে, তা তারা করুক। আমাদের বিদেশী কোন বন্ধু পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে করুক। কারও চাপের কাছে আমরা নতি স্বীকার করব না।
×