ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

মজার খবর

নজরুলের মজার ঘটনা

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২৬ মে ২০১৮

 নজরুলের মজার ঘটনা

জাফর ওয়াজেদ * কবি কাজী নজরুল ইসলাম একবার সিরাজগঞ্জে সাহিত্যিক আসাদউদৌলা সিরাজীর আমন্ত্রণে বেড়াতে গেছেন। দুপুরের খাবারে সিরাজী নিজেই ইলিশ মাছ ভাজা দিচ্ছেন সবার পাতে। কবি এক টুকরো ইলিশ দিতে গেলে কবি বাধা দিয়ে বলেন, আরে আরে করছো কী, আমারে অত্তো ইলিশ দেবে না। শেষকালে বিড়ালে কামড়াবে যে। সবাই অবাক। কবি বললেন, ইলিশের গন্ধ মুখে লালা ঝড়ায়। বিড়াল সেই ঘ্রাণে হয় মাতাল। বেশি খেলে যে সারা দেহ হতে গন্ধ ছড়াবে। আর সে গন্ধ পেয়ে বিড়াল তেড়ে আসবে। শুনে হাসির হুল্লোড় বয়ে যায়। * ১৯২১ সালে কুমিল্লায় নজরুল ইন্দ্র সেনগুপ্তের বাড়িতে অঞ্জলি নামে ফুটফুটে একটি মেয়েকে দেখতেন পেয়ারা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে হাত-পা নেড়ে কার সঙ্গে যেন কথা বলছে। কবি ভাবলেন গাছে যে রয়েছে, সে হয়তো তাকে পেয়ারা দিচ্ছে না। গাছের নিচে গিয়ে দেখেন কেউ নেই গাছে। জিজ্ঞেস করেন, কার সঙ্গে কথা বলছো? অঞ্জলি বলল, ওই দুষ্টু কাঠবিড়ালির সঙ্গে। প্রতিদিন পেয়ারা খেয়ে পালিয়ে যায় দুষ্টুটা। একটাও খেতে দেয় না। সেই ঘটনা নিয়ে লিখলেন ‘খুকি ও কাঠবিড়ালী’ নামক ছড়া। * একবার নজরুলকে তাঁর বন্ধুরা খুঁজছেন। এ বাড়ি ও বাড়ি খোঁজা হচ্ছে। হঠাৎ দূর কোন বাড়ি থেকে অট্টহাসির শব্দ কানে আসতেই নজরুলের খোঁজ মিলল। এমনই ছিল নজরুলের হাসির সুনাম। নিজের হাস্যরসপূর্ণ চরিত্রকে নজরুল নিজেই তুলে ধরেছেন একটি হাসির গানে- ‘আমি দেখব হাসি আমায় দেখলে পরে হাসতে হাসতে পেয়ে যাবে কাশি। আমি হাসির হাঁসলী ফেরি করি এলে আমার হাসির দেশে বুড়োরা সব ছোঁড়া হয়, আর ছোঁড়ারা যায় টেঁসে আমার হাস-খালিতে বাড়ি, আমি হাসু-হানার মাসি।’ * কাজী নজরুল তখন গ্রামোফোন কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত। একদিন তিনি ওখানে দোতলায় বসে আছেন। এমন সময় এক কমর্চারী এসে বললেন, ‘কাজীদা, ইন্দুদি (সঙ্গীতশিল্পী ইন্দুবালা) আপনাকে নিচে ডাকছেন।’ এ কথা শুনে কবি সকৌতুকে বললেন, ‘আর কত নিচে নামব, ভাই?’ * পাড়ায় নতুন জামাই এসেছে। নজরুল বন্ধুদের নিয়ে ফন্দি আঁটলেন জামাইয়ের কাছ থেকে টাকা খসাতে হবে। তিনি জামাইকে গিয়ে বললেন, ‘নতুন জামাইদের দরমা পীরের দরগায় যেতে হয়। চলুন। নইলে অকল্যাণ হবে।’ নজরুলের বুদ্ধিতে একটা পোড়ো বাড়ির মধ্যে ‘দরমা ঘর’ আগে থেকেই লাল কাপড়ে ঢেকে রাখা হলো। জামাই সেখানে গিয়ে সালাম করে নগদ সালামি দিলেন। অথচ ‘দরমা’ মানে হলো হাঁস-মুরগির ঘর। যাই হোক, এবার বন্ধুরা মিছিল করে জামাইয়ের শ্বশুরবাড়ি এসে উপস্থিত হলো। গেটে দাঁড়িয়ে নজরুল ছড়া কাটতে শুরু করলেন : মাসি গো মাসি / তোমার জামাইয়ের দেখ হাসি/দরমা পীরে সালাম দেওয়ালাম/ খাওয়াও মোদের খাসি। কবির এক বন্ধু ছিল, শৈলেন নাম। কবি তার কাছ থেকে কেবল চা খেতেন। আর প্রতিদিন শৈলেনের কাছ থেকে চা খাওয়ার জন্য নিত্যনতুন ফন্দি আঁটতেন। একদিন আর কোন ফন্দি-ফিকির না পেয়ে তিনি শৈলেনের কাছে গিয়ে বললেন, ‘তুমি তো অনেক টাকা পাবে আমার কাছে, হিসেব করে রেখো, আপাতত দু’পেয়ালা চা দাও।’ শৈলেন তো অবাক! এ আবার কেমন কথা! অনেক টাকা পাওয়ার সঙ্গে দু’পেয়ালা, মানে দুই কাপ চায়ের কী সম্পর্ক? তিনি চোখ কপালে তুলে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘দু’পেয়ালা কেন?’ কবি বললেন, ‘আরে, লাখ পেয়ালা চা না খেলে টাকা হয় না। লাখ পেয়ালা হতে আমার এখনও দু’পেয়ালা বাকি আছে।’ নতুন খাবার কম্বলের অম্বল কেরোসিনের চাটনি, চামচের আমচুর খাইছ নি নাতনি? আমড়া-দামড়ার কান দিয়ে ঘসে নাও, চামড়ার বাটিতে চটকিয়ে কষে খাও। শেয়ালের ল্যাজ গোটা দুই প্যাঁজ বেশ করে ভিজিয়ে ঘুট করে খেয়ে ফেলো! মুখে কোন কথা এলো? ‘কি মজার চিজই এ।’ ঝুমকো লতার পাতা লাল পুতুলের মাথা বেঁধে কারো টিকিতে ঢেঁকিতে বেশ করে পাড় দিয়ে তার পরে খেয়ো মেখে ‘সিকি’তে। দাদার গায়ে কাদা সাথে ছেঁচা আদা খুব কষে মাখিয়ে, বেড়ালির নাকে কিংবা কারুটাকে- খেয়ো দেখি নেচি করে পাকিয়ে! শিশু-সওগাত ওরে শিশু, ঘরে তোর এলো সওগাত আলো পানে তুলে ধর ননীমাখা হাত। নিয়ে আয় কচি মুখে আধো আধো বোল, তুলতুলে গাল-ভরা টুলটুলে টোল। চকচকে চোখে আন আলো ঝিকমিক খুলে দেরে তুলে দেরে আঁধারের চিক। বাঁধ ভেঙ্গে ছুটে যায় দস্যুর দল মরা গাঙে নিয়ে আয় জোয়ারের জল। ধরাতল টলমল পদভরে তোর, লুট কর গুলবাগ নওল কিশোর। তোরে চেয়ে নিতি রবি ওঠে পুরবে, তোর ঘুম ভাঙিলে যে প্রভাত হবে। ডালে ডালে ঘুমজাগা পাখিরা নীরবে, তোর গান শুনে তবে ওরা পাবে সব। পরাতে না পেরে তোর নয়নে কাজল আকাশের নীল চোখ করে ছলছল। তোর দিন অনাগত, শিশু তুই আয়, জীবন-মরণ দোলে তোর রাঙা পায়। তোর চোখে দেখিয়াছি নবীন প্রভাত, তোর তরে আজিকার নব সওগাত। দিদির বে’তে খোকা ‘সাত ভাই চম্পা জাগো’- পারুলদি’ ডাকল, না গো? একি ভাই, কাঁদছ?-মা গো কি যে কয়-আরে দুত্তুর। পারায়ে সপ্ত-সাগর এসেছে সেই চেনা-বর? কাহিনীর দেশেতে ঘর তোর সেই রাজপুত্তুর? মনে হয়, মন্ডা মেটাই খেয়ে জোর আয়েশ মিটাই।- ভালো ছাই লাগছে না ভাই, যাবি তুই এ একেলাটি। দিদি, তুই সেথায় গিয়ে যদি ভাই যাস ঘুমিয়ে জাগাব পরশ দিয়ে রেখে যাস সোনার কাঠি কোথায় ছিলাম আমি মা গো। আমায় বলতে পারিস কোথায় ছিলাম আমিÑ কোন না-জানা দেশ থেকে তোর কোলে এলাম নামি? আমি যখন আসিনি, মা তুই কি আঁখি মেলে চাঁদকে বুঝি বলতিস-ওই ঘর-ছাড়া মোর ছেলে? শুকতারাকে বলতিস কি, আয় রে নেমে আয়- তোর রূপ যে মায়ের কোলে বেশি শোভা পায়। কাজলা দীঘির নাইতে গিয়ে পদ্মফুলের মুখে দেখতিস কি আমার ছায়া, উঠত কাঁদন বুকে? গাঙে যখন বান আসত, জানত না মা কেউ- তোর বুকে কি আসতাম আমি হয়ে স্নেহের ঢেউ? ... কালো জাম রে ভাই কালো জাম রে ভাই। আম কি তোমার ভায়রা ভাই? লাউ বুঝি তোর দিদিমা আর কুমড়ো তোর দাদামশাই ॥ তরমুজ তোর ঠাকুমা বুঝি কাঁঠাল তোমার ঠাকুর্দা, গোলাপজাম তোর মাসতুতো ভাই, জামরুল কি ভাই তোর বোনাই ॥ পেয়ারা কি তোর লাটিম রে ভাই, চিচিঙ্গে তোর লাঠি জাম্বুরা তোর ফুটবল আর লঙ্কা চুষিকাঠি। টোপাকুল তোর বৌ বুঝি আর বৈচি লিচু তোর জামাই ॥ নোনা আতা সোনা ভাই তোর রাঙ্গাদি’ তোর লাল মাকাল, ডাব বুঝি তোর পানি-পাঁড়ে ঢিল বুঝি তোর ভাদুরে তাল। গেছো দাদা, আয় না নেমে গালে রেখে চুমু খাই ॥
×