ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রমজান মাসে নামানো হচ্ছে নারী গোয়েন্দা

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২২ মে ২০১৮

রমজান মাসে নামানো হচ্ছে নারী গোয়েন্দা

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানী ঢাকায় নামানো হচ্ছে নারী গোয়েন্দা। পবিত্র রমজান মাস থেকে ঈদ পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার মৌসুমি অপরাধ দমনসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে তারা। অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, ছিনতাই, প্রতারণাসহ মৌসুমি অপরাধ দমনে মাঠে নেমে পুলিশের পাশাপাশি কাজ করবে নারী গোয়েন্দা সদস্যরা। রাজধানীর ব্যস্ততম শপিংমল, জনবহুল এলাকা গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করবে তারা। মৌসুমি অপরাধীদের ধরতে তারা মাঠে নেমে ওঁৎ পেতে ফাঁদ ফেলাবে ছদ্মবেশে। পবিত্র রমজান মাসের মৌসুমি অপরাধ ঠেকাতে পুলিশের নারী গোয়েন্দা মাঠে নামিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ঈদ পর্যন্ত মাঠে থাকবে পুলিশের নারী গোয়েন্দা। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, পবিত্র রমজান মাস থেকে শুরু করে ঈদের কেনাকাটা নির্বিঘœ করতে পুলিশের পাশাপাশি ছদ্মবেশে নারী গোয়েন্দা মোতায়েনের উদ্যোগ হচ্ছে অপরাধী ধরার কৌশল। সাধারণ নারীবেশে সন্দেহভাজন অপরাধীদের গতিবিধির ওপর নজর রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে তারা। ছদ্মবেশী নারী গোয়েন্দাদের সহযোগিতা করবেন পুলিশের সদস্যরা। পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন মার্কেটের নিরাপত্তারক্ষী ও আনসার সদস্যরাও সহযোগিতা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতর। ঢাকা মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে শপিংমল ও শৌখিন স্থানগুলোতে মাঠে থাকেন চৌকস নারী গোয়েন্দারা। এতে ওই এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য ঠিকমতো পাওয়া যায়। অপরাধী ও দুবর্ৃৃত্তরা ছদ্মবেশী নারী সদস্যদের দেখে বুঝতেই পারেন না যে তারা পুলিশের নারী গোয়েন্দা সদস্য। পবিত্র রমজান মাস ও ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্নস্থানে মাঠে কাজ করছেন পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে ডিবি, এসবি, এনএসআই, র‌্যাবের গোয়েন্দারাও। এর মধ্যে তাদেরকে সহযোগিতায় থাকবে পুলিশের নারী গোয়েন্দারা। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এক কর্মকর্তা জানান, পবিত্র রমজান মাস থেকেই মূলত ঈদের আগ পর্যন্ত কেনাকাটার জন্য অভিজাত শপিংমল ও ব্যস্ততম এলাকায় মানুষের ভিড়ের চাপ হয় অত্যধিক। রাজধানীর আশপাশের লোকজন তো বটেই, এমনকি বিভিন্ন জেলা থেকেও মানুষজন কেনাকাটা করতে আসেন। ব্যস্ত হয়ে ওঠে শপিংমলগুলো। বেড়ে যায় টাকার লেনদেন। তৎপর হয়ে ওঠে মৌসুমি অপরাধী চক্র। তখন শপিংমলগুলোর ভেতরে ও বাইরে দুর্বৃত্তরা সক্রিয় থাকে। কেনাকাটা করতে আসা নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষজনকে হয়রানি করে অপরাধী চক্র। বিশেষ করে নারীরা ইভটিজিংয়ের শিকার হয়। কেউবা শপিংমলের ভেতরে পকেটমার ও বাইরে ছিনতাইয়ের শিকার হয়। উচ্ছৃঙ্খল বখাটেরা দলবেঁধে ঘুরে বেড়ায়। তারা নারীদের উদ্দেশে বিভিন্ন মন্তব্য ছুঁড়ে কখনও কখনও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির পাশপাশি লাঞ্ছিত করার ঘটনাও ঘটে। এই ধরনের অপরাধের ঘটনা প্রায়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় অপরাধী চক্রের সদস্যরা। পুলিশের নারী গোয়েন্দাদের মাধ্যমে এই ধরনের অপরাধ দমনে ফাঁদ পাতা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, পবিত্র রমজান মাসে মৌসুমি অপরাধী চক্রের সদস্যদের শনাক্ত ও ধরতে পুলিশের সদস্যদের পাশাপাশি নারী গোয়েন্দারা মাঠে কাজ করার ফলে অপরাধ দমনে সহজ হবে। এরই মধ্যে ইভটিজিং ও ছিনতাই রোধে বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণ করেছে ডিবি পুলিশ। ওই কৌশলের অংশ হিসেবে নারী গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যদের মাঠে নামানো হয়েছে। বিপণিবিতান ও মার্কেটের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় প্রধান মনিটরে বসে পুলিশ পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে। ক্যামেরায় কোন যুবককে সন্দেহ হলে তার পেছনে ওই নারী গোয়েন্দাদের লাগিয়ে দেয়া হবে। এমন ব্যবস্থা ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোতেও করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বিপণিবিতান, শপিংমল ছাড়াও রাজধানীর গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, পল্টনসহ যেসব এলাকায় ঈদের কেনাকাটা উপলক্ষে জনসমাগম ঘটার স্থলগুলোতে নজরদারি করবে নারী গোয়েন্দারা। চোখে মলম লাগিয়ে, নাকে রুমাল ধরে অজ্ঞান করে, ব্লেড দিয়ে পকেট কেটে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়া অপরাধী চক্রের ওপর নারী গোয়েন্দাদের নজরদারি করার ফলে সহজেই ধরা পড়ে যাবে। নারী গোয়েন্দারা মাঠে থাকার ফলে পবিত্র রমজান মাস থেকে ঈদ পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ে অপরাধী চক্রের হাত থেকে মানুষজনের জানমাল রক্ষাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে ডিএমপি পুলিশ কর্মকর্তার দাবি।
×