ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এক শ’ আইফোন জব্দ

বসুন্ধরায় ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভের মুখে শুল্ক গোয়েন্দারা

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২০ মে ২০১৮

বসুন্ধরায় ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভের মুখে শুল্ক গোয়েন্দারা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবারও রাজধানীর অভিজাত বিপণি বিতান বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে অবৈধ মোবাইল সেট জব্দ করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। শনিবার দুপুরে এই অভিযান যাওয়ার পর শুল্ক গোয়েন্দাদের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। এ সময় শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী জিয়াউদ্দিনসহ কর্মকর্তারাও আটকা পড়েন। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে পড়ে ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত এক সাংবাদিককে শুল্ক গোয়েন্দার নির্দেশে র‌্যাব এর একজন কর্মকর্তা উঠিয়ে নিতে চাইলে। এতে বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা বিপণি বিতানটির সামনের পান্থপথ থেকে কারওয়ান বাজারমুখী রাস্তা দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় আটকে রাখেন। বিকেলে এ রিপোর্ট লেখার সময় জানা গেছে- জব্দ করা ১০০টি আইফোন নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শুল্ক গোয়েন্দা। এডিজি কাজী মো. জিয়াউদ্দিন শনিবার বেলা সোয়া ৩টার দিকে শপিং কমপ্লেক্সে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে একটা ফয়সালা করার চেষ্টায় ছিলেন। শেষ পর্যন্ত উভয়পক্ষের মধ্যে একটা সমঝোতা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে- দুপুর ১২টায় বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে অভিযানে নামেন শুল্ক গোয়েন্দারা। এক পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা বাধা দিলে র‌্যাব পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা চালায়। এ সময় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে র‌্যাব কর্মকর্তাদেরও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। তখন শুল্ক কর্মকর্তারা বিপণি বিতানের পেছনের দিক থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলে ব্যবসায়ীরা তাদের আটকে দেন। দুপুর ১টার পর রাস্তা আটকে দেন ব্যবসায়ীরা। যদিও ৩টার দিকে তারা রাস্তা ছেড়ে যান। মার্কেটের আরএম ট্র্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ী মোফাজ্জেল হোসেন মামুন বলেন-বিনা নোটিসে শুল্ক গোয়েন্দারা আমাদের মোবাইল মার্কেটে অভিযান চালিয়ে কোটি টাকার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে। তারা স্থানীয় পুলিশকে কিছু না জানিয়েই এ অভিযান চালায়। তাই বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীরা তাদের পথরোধ করে মোবাইলগুলো ফেরত চাইছে। ঊষা টেলিকমের মালিক উজ্জ্বল হোসেন বলেন- ৫টায় দোকান থেকে ২ কোটি টাকার মালামাল নিয়ে গেছে। তারা আইফোন নিয়ে গিয়েছে। এ সময় অন্য মোবাইলের বিষয় জানতেও চায়নি। বিক্ষোভরত এক ব্যবসায়ী মোঃ নাজিমউদ্দিন বলেন, ‘যদি অন্যায়ভাবে মোবাইলগুলো বাজারে আনা হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। তবে প্রতি ঈদের আগেই শুল্ক গোয়েন্দারা এখানে এসে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করে। তারা মোবাইল নিয়ে যায় এবং সেগুলো ফেরত দেয় না। এসব বিষয়ে অবরুদ্ধ থাকা শুল্ক কর্মকর্তা জিয়াউদ্দিন বলেন-নিয়ম মেনে বসুন্ধরা মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হলে তাদের বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় কাগজ পরীক্ষা করে মোবাইল ফেরত দেয়া হবে। তিনি জনকণ্ঠকে জানান-এর আগে রাজস্ব ফাঁকি ও লাগেজ পার্টির মাধ্যমে এ ফোনগুলো আনা হয়েছে বলে এগুলো জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর। অভিযানে শুল্ক গোয়েন্দারা ছাড়াও র‌্যাব, আনসার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর প্রতিবাদে বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীরা পান্থপথ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। অভিযান শেষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চলে যাওয়ার পর ২টার দিকে বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের সামনের পান্থপথ সড়কে নেমে আসেন মোবাইল ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার কথা বলে তাদের প্রায় ১০০টি আইফোন জব্দ করা হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৯০ লাখ টাকা। ব্যবসায়ীরা শুল্ক গোয়েন্দাদের অভিযান অবৈধ উল্লেখ করে দ্রুত জব্দ করা আইফোন ফেরত দেয়া এবং অভিযানের নামে ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধেরও দাবি জানান। তাদের প্রতিবাদের মুখে ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন শুল্ক গোয়েন্দারা। বৈঠকের খবরে ব্যবসায়ীরা সড়ক ছেড়ে দেন।
×