ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আরও চার হাজার নার্স নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১২ মে ২০১৮

আরও চার হাজার নার্স নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন

নিখিল মানখিন ॥ রোগীর মানসম্মত ও উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে গুণগত নার্সিংসেবা অত্যন্ত জরুরী। এজন্য মানসম্মত ও আধুনিক নার্সিং শিক্ষাও অপরিহার্য বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, চিকিৎসা সেক্টরে সেবিকার অবদান অনস্বীকার্য। হাসপাতালে ডাক্তাররা যতই রোগীর চিকিৎসা দিন না কেন, নার্সদের সেবা ছাড়া ওই চিকিৎসা পূর্ণতা পাবে না। শুধু চিকিৎসক দ্বারা রোগীকে সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সেবিকার ভূমিকা অপরিসীম যা কেবল শিক্ষিত ও দক্ষ সেবিকা দ্বারাই প্রদান সম্ভব। বর্তমান সরকারের আমলে একসঙ্গে দশ হাজার নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আরও চার হাজারের বেশি নার্স নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। নার্সের সঙ্কট প্রকট না হলেও বেসরকারী পর্যায় থেকে বেরিয়ে আসা নার্সদের বড় অংশের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পাশাপাশি কয়েক সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভুয়া নার্স কাজ করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ শনিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব সেবিকা দিবস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে নার্সিং শিক্ষার সমস্যার মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ জটিল সমস্যা রয়েছে। নার্সিং কারিকুলামে প্রণীত ডিপ্লোমা ইন নার্সিং/সায়েন্স, ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি, বিএসসি ইন নার্সিং ও পোস্ট-বেসিক বিএসসি নার্সিং প্রোগ্রাম সমূহের প্রণীত বিষয়ের মধ্যে কিছু অনাবশ্যক সাবজেক্ট বাদ দেয়া প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে কিছু সাবজেক্ট বাদ দেয়া হলে শিক্ষার্থীগণ মৌলিক সাবজেক্ট ভালভাবে অধ্যয়ন করতে পারবে এবং তারা হাসপাতাল ও কমিউনিটির ব্যবহারিক কাজের দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। যেহেতু নার্সিংয়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত শিক্ষক/শিক্ষিকার প্রচুর ঘাটতি রয়েছে সেক্ষেত্রে প্রণীত সাবজেক্ট যা উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে কার্যকরী হবে সেই সাবজেক্টগুলোর বোঝা কমিয়ে কর্মমুখী প্রশিক্ষণে দক্ষতা বাড়াতে পারবে। এতে হাসপাতালের রোগী প্রকৃত সেবা পাওয়ার সুযোগ পাবেন। এই দক্ষতা অর্জন করতে পারলে তারা বহির্বিশ্বে কাজের সুযোগ পাবেন। যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নার্সিং একটি অত্যাবশ্যকীয় জরুরী সেবা। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নার্সিং শিক্ষা ও সার্ভিসে অনেক গবেষণা রয়েছে এবং তা বিভিন্ন ই-জার্নাল ও প্রিন্টেড জার্নালে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। রোগীর উন্নতমানের সেবাদান করতে হলে নার্সিং শিক্ষা সার্ভিসের ওপর গবেষণা একান্ত প্রয়োজন। নার্সিং শিক্ষা ব্যবস্থায়ও অনেক গবেষণার বিষয় রয়েছে। তবে বাংলাদেশে এ বিষয়ে তেমন কোন গুরুত্বারোপ করা হয়নি। এদিকে, দেশের সেক্টরের সার্বিক পরিস্থিতিতে বর্তমানে নার্স সঙ্কট রয়েই গেছে। বিপুল জনসংখ্যার তুলনায় নার্সের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। এর মধ্যে রেজিস্টার্ড নার্সের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সুষ্ঠুভাবে সেবা নিশ্চিত করতে হলে একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন নার্স থাকা চাই। বাংলাদেশে এমন আদর্শ চিত্র হয়ত কেউ প্রত্যাশা করেন না। কিন্তু ন্যূনতম সংখ্যক নার্স ছাড়া রোগীর সেবার মান রক্ষা করা সম্ভব নয়। চিকিৎসা সেবার মান্নোয়ন প্রশ্নে দক্ষ ও মানবিক চিকিৎসকের প্রশ্নটি এখনও বড় করে দেখা হয় বাংলাদেশে। কিন্তু, বিশ্বব্যাপী এই সেবায় সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয় দক্ষ নার্সের ওপর। এ কারণেই তো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নার্স ও চিকিৎসকের মানসম্পন্ন অনুপাত ঠিক করেছে ৩:১; যা থেকে বাংলাদেশ বহু দূরে। দক্ষ নার্স তৈরিতে তাড়াহুড়ো করে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষার জন্য সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা, বিএসসি এবং মাস্টার্স কোর্স চালু করা হলেও এখনও নানা সঙ্কটে জর্জরিত এ বিশেষায়িত শিক্ষা ব্যবস্থা। নার্সি ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের তথ্য মতে, দেশে মোট ৯৮টি নার্সিং ইনস্টিটিউট আছে। সরকারী ৪৩টি, স্বায়ত্তশাসিত ১টি, বেসরকারী ৫৪টি। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করে বর্তমানে সরকারী হাসপাতালে কর্মরত নার্সের সংখ্যা ৩০ হাজার। পাবলিক সার্ভিস কমিশন ২০১৬ সালে ১০ হাজার নিয়োগ দেবার পরও, চিকিৎসক ও নার্সের অনুপাত ৮:৯। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে জানান, চিকিৎসা সেক্টরে চিকিৎসক ও নার্স উভয়ের দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন চিকিৎসক রোগীর পাশে সর্বক্ষণিক অবস্থান করতে পারেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ ও নির্দেশনা অনুযায়ী রোগীর পরিচর্যা করেন একজন নার্স। তাই একজন নার্সকে অবশ্যই দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সনদধারী হতে হবে। ভুয়া নার্সের পক্ষে চিকিৎসকের পরামর্শ ও নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় স্বাস্থ্য আন্দোলনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ রশিদ ই মাহবুব জনকণ্ঠকে জানান, চিকিৎসা সেক্টরে সেবিকার অবদান অনস্বীকার্য। মানসম্পন্ন সেবা ব্যবস্থাপনা পরিপূর্ণ করতে হলে অবশ্যই রোগী, ডাক্তার ও নার্সের সংখ্যাগত সমন্বয় সাধন জরুরী। বিশেষ করে হাসপাতালে ডাক্তাররা যতই রোগীর চিকিৎসা দিন না কেন, নার্সের সেবা ছাড়া ওই চিকিৎসা পূর্ণতা পাবে না। পর্যাপ্ত নার্স না থাকলে ডাক্তারের কিছুই করার থাকে না। কিন্তু আমাদের দেশে এ খাতে জনবল বাড়ানোর গতি খুবই মন্থর। আগের চেয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনও প্রতি শিক্ষাবর্ষে ডাক্তারি আর নার্সিং শিক্ষায় ছাত্রছাত্রী ভর্তির হার প্রায় সমান সমান। ফলে গোড়াতেই ঘাটতি শুরু হয়। নাসের সংখ্যা বাড়াতে হলে প্রতিবছর মেডিক্যাল কলেজগুলোয় যে সংখ্যক ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়, নার্সিংয়ে এর চেয়ে কমপক্ষে তিনগুণ ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা দরকার। এ ছাড়া এখনও যেহেতু নার্সিং পেশায় অপেক্ষাকৃত কম সচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরা যুক্ত হয়, তাই শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং চাকরি- সব ক্ষেত্রেই তাদের বিভিন্নমুখী আর্থিক ও আবাসিক সুবিধার ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। শুধু চিকিৎসা দ্বারা রোগীকে সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সেবিকার ভূমিকা অপরিসীম যা কেবল শিক্ষিত ও দক্ষ সেবিকা দ্বারাই প্রদান সম্ভব বলে মনে করেন অধ্যাপক ডাঃ রশিদ ই মাহবুব।
×