ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বললেন মরক্কোর এই শিক্ষিকা তীরন্দাজ

বাংলাদেশকে মনে রাখবেন ফাতিমা

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ৯ মে ২০১৮

বাংলাদেশকে মনে রাখবেন ফাতিমা

রুমেল খান ॥ ‘প্রথম বিদেশ সফর এবং প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নেয়ার কারণে বাংলাদেশকে কোনদিনই ভুলব না।’ মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামের টার্ফে চেয়ারে বসে লাজুক মুখে কথা বলছিলেন যিনি তিনি ফাতিমা যাহ্রা কারদৌদ। ঢাকায় এসেছেন ইসলামী সলিডারিটি আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে। মরক্কোর মরক্কেশ নগরীর অধিবাসী। কম্পাউন্ড ইভেন্ট আরচার। ১৯৯২ সালের ১৮ মার্চ জন্ম। মা গৃহবধূ, বাবা শিক্ষক (একটি হাইস্কুলের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক)। যাহ্রা নিজেও বাবার মতোই অন্য একটি হাইস্কুলের (ইবনেজা হাইস্কুল) শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক। এই স্কুলে যোগ দেন ২০১৪ সালে। সেই সঙ্গে পড়াশুনাটাও চালিয়ে যাচ্ছেন। পড়ছেন মরক্কোশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে। আরচারি, পড়াশুনা এবং শিক্ষকতাÑ সবমিলিয়ে সারাক্ষণই প্রচ- ব্যস্ততায় এবং চাপে থাকতে হয়। মজার ব্যাপারÑ আরচার হিসেবে এখনও নিজের পরিচয় স্কুলের শিক্ষার্থীদের দেননি। ‘কারণ খেলা নিয়ে এত ব্যস্ত থাকি বলার ফুরসতই পাইনি। তবে বাংলাদেশ থেকে ফিরে গিয়ে তাদের বলব। তবে পরিবার ও বন্ধুরা অবশ্য জানে।’ যতদিন ভাল লাগবে ততদিনই আরচারি খেলে যেতে চান যাহ্রা, ‘আমি আসলে এই খেলাটির মাঝে নিজেকে খুঁজে পাই। এটি আমার অস্তিত্বে। শিক্ষকতা করলেও আরচারি পরিচয়টাই আমার কাছে আগে।’ শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক হিসেবে নিজের শিক্ষার্থীদের কী শেখান? ‘আরচারি খেলা বা অনুশীলন না থাকলে দৈনিক চার ঘণ্টা করে সপ্তাহে পাঁচদিন ক্লাস নিই। থিওরিটিক্যাল এবং প্র্যাকটিক্যাল দুই ধরনের ক্লাস। প্রায় সবধরনের খেলা শেখাই। জিমন্যাস্টিক্স, এ্যাক্রোবেটিক্স, রাগবি, হ্যান্ডবল, ভলিবল, বাস্কেটবল ...।’ ২০১৬ সালে আরচারি ক্যারিয়ার শুরু। প্রথম বছরে রিকার্ভ এবং দ্বিতীয় বছর থেকে শুরু করেন কম্পাউন্ড ইভেন্টে খেলা। এই দুই ইভেন্টের মধ্যে কোনটি বেশি কঠিন? ‘দুটোই কঠিন। তবে রিকার্ভটাই বেশি কঠিন মনে হয়। টেকনিক আয়ত্ব করা এবং নিয়মিত অনুশীলনের কারণে কম্পাউন্ড ইভেন্টটা তুলনামূলক সহজ মনে হয়।’ ২৬ বছর বয়সী সুদর্শনা যাহ্রারা চার ভাই বোন। দুই ভাই, দুই বোন। সবমিলিয়ে যাহ্রা তিন নম্বরে। বাকি ভাই-বোনরাও যাহ্রার মতোই ক্রীড়াবিদ। তবে তারা আরচার নয়। ‘বড় বোন হিন্ড দূরপাল্লার দৌড়বিদ, বড় ভাই খালিল কারাতেকা এবং ছোট ভাই জালিল রাগবি খেলোয়াড়।’ এত খেলা থাকতে আরচারি বেছে নেয়ার কারণ? ‘মনোসংযোগের উন্নতির জন্য এই খেলাটি বেছে নিয়েছি। পরিবারও যথেষ্ট সমর্থন করেছে। মরক্কো জাতীয় আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপে কম্পাউন্ডে একবার রৌপ্য ও একবার তাম্রপদক জেতার পরবর্তী লক্ষ্য আগামীতে এই আসরে স্বর্ণ জেতা। লক্ষ্য : ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে স্বর্ণ জিততে চাই। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মরক্কোতে খুবই গরম থাকে। সে তুলনায় বাংলাদেশের তাপমাত্রা কম হলেও আর্দ্রতা বেশি থাকায় এখানে খুব কষ্ট পাচ্ছি। এখানকার খাবার খুব মজা করে খেয়েছি। মাছ, মুরগির মাংস খুবই ভাল লেগেছে। মরিচের ঝাল খেয়ে চোখে জল আসলেও স্বাদটা দারুণ লেগেছে। ঢাকায় কিছু স্থানে ঘুরেছি। শপিংও করেছি। ভাল লেগেছে। তবে এখানকার ট্রাফিক জ্যাম অসহ্য লেগেছে। প্রচ- শব্দ দূষণ। অবিবাহিতা যাহ্রার মাস্টার্সে ডক্টরেট করার বাসনা আছে। কাজ করতে চান হেলথ এডুকেশন নিয়ে। অলিম্পিকে বর্তমানে রিকার্ভ ইভেন্টে খেলা হলেও কম্পাউন্ড খেলা হয় না। তবে আগামী অলিম্পিকেই কম্পাউন্ড ইভেন্ট অন্তর্ভুক্ত হবার সম্ভাবনার কথা শুনে উচ্ছ্বসিত যাহ্রা। ২৪ বছর বয়সে আরচারি খেলা শুরু। এত দেরিতে কেন? ‘মরক্কোতে আরচারি জনপ্রিয় নয় এবং প্রচলিতও নয়। আসলে আরচারি এ্যাসোসিয়েশন ও ক্লাবগুলোর সক্রিয় হবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এভাবেই ২০১৬ সালে সন্ধান পাই আরচারির।’ যাহ্রার ব্যাখ্যা। আরচারিতে সম্পৃক্ত হবার আগে নানা ধরনের খেলা খেলতেন। ১৫০০ মিটার দৌড়, ফ্রিস্টাইল সাঁতার, ফুটবল (পজিশন : গোলরক্ষক)। স্কুল পর্যায়ে এগুলো খেলে গোটা দশেকের মতো পদক জিতেছেন। যার অর্ধেকের বেশিই সোনা। যাহ্রার শখ সাঁতার কাটা, যে কোন ধরনের বই পড়া, বেস গিটার বাজানো। প্রিয় ফুটবলার মরক্কোর বেনাতিয়া, যিনি ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলবেন। মেসি, রোনাল্ডোর মধ্যে মেসিকেই সেরা মানেন তিনি। ‘মেসি বুদ্ধিমান এবং চৌকস।’ পরিবার ছাড়া প্রথম বিদেশ সফর। ‘পরিবারকে মিস করছি খুব। তবে ইন্টারনেটে কথা বলে কিছুটা শান্তি পাচ্ছি। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে যাহ্রা জানান, মরক্কোতে আরচারির অবকাঠামো ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে। এখন আনুমানিক শ’খানেক তীরন্দাজ আছে। আগামীতে সংখ্যাটা আরও বাড়বে।’ বাংলাদেশকে আজীবন হৃদয়ে রাখা যাহ্রা আগামীতে তীরন্দাজ হিসেবে কেমন সাফল্য পাবেন সেটাই দেখার বিষয়।
×