ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

মাঠে ধান ৮০ শতাংশ পাকলেই কেটে ঘরে তুলুন

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ১ মে ২০১৮

মাঠে ধান ৮০ শতাংশ পাকলেই কেটে ঘরে তুলুন

সমুদ্র হক ॥ কৃষি বিভাগের পরামর্শ- ঝড় বৃষ্টি শিলাপাতের কবল থেকে ফসল রক্ষা করতে ধান ৮০ শতাংশ পাকলেই তা কেটে ঘরে তুলুন। কৃষকের প্রশ্ন; ৮০ শতাংশ পাকার আগেই শিলাপাতে ধানের শীষ নেতিয়ে পড়েছে তার কী হবে। সহজ উত্তর- ক্ষতি। বৈশাখের মধ্যভাগে মেঘের গগন বিদারী আওয়াজ ঝড়, বৃষ্টি, শিলাপাতের সঙ্গে অনাহুত বর্ষার আক্রমণে শঙ্কিত হয়ে দিশেহারা কৃষকের কথা; শেষের বেলায় কী যে হয়! আশা ছিল এবারের বোরোর ফলন ভাল হবে। গেল আমন মৌসুমে দুই দফা বন্যা ও পোকার আক্রমণে কৃষক আশানুরূপ ফলন পায়নি। আশা করেছিল বোরোতে তা পুষিয়ে নেবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকের আশার গুড়ে বালি পড়েছে। এই চিত্র বগুড়ার। তবে উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় খোঁজ খবর করে একই চিত্র উঠে এসেছে। এ দিকে আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, আকাশের (প্রকৃতি) এই অবস্থা আরও কয়েকদিন থাকবে। তা হলে পরে, শেষ পর্যন্ত আবাদ উদ্বৃত্ত উত্তরাঞ্চলের বোরো ফসলের এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নাও হতে পারে। এই শঙ্কা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরেরও। তারা বলছে, যে ঝড় বৃষ্টি হয়েছে তাতে এখনও আশাবাদী। আরও ঝড় বৃষ্টি শিলাপাত হলে ক্ষতির পরিমাণও বাড়বে। উল্লেখ্য, দেশে যত ধান উৎপাদন হয় তার এক তৃতীয়াংশ হয় উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায়। এই অঞ্চল আবাদ উদ্বৃত্ত। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক প্রতুল চন্দ্র সরকার বললেন, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলা চারটি অঞ্চলে বিভক্ত। বগুড়া, রাজশাহী, দিনাজপুর ও রংপুর। এর মধ্যে দিনাজপুর ও বগুড়ায় ধান উৎপাদন হয় বেশি। বগুড়ায় এবারে বোরো মৌসুমে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ১শ’ ৫০ হেক্টর ভূমি। যা থেকে বোরো (চাল আকারে) উৎপাদনের টার্গেট করা হয়েছে ৭ লাখ ৪০ মেট্রিক টন। তিনি জানান, বিরূপ আবহাওয়ায় কৃষকদের অধিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে মাঠের ৮০ ভাগ ধান পাকলেই কেটে ঘরে তুলে নিতে বলা হয়েছে। অনেক কৃষক তা করছে। অনেকে তা করতে পারছেও না। কারণ ৮০ ভাগের কাছাকাছি ধান পাকার সময়ই মুষুল ধারায় বৃষ্টি ও শিলাপাতে ধানের শীষ খসে পড়ছে। আধাপাকা ধান কাদার মধ্যে পড়ছে। কৃষক তা কুড়িয়ে আনছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কথা; কয় দিনের চার দফা শিলাপাতে পাঁচটি উপজেলার অন্তত দুই হাজার হেক্টর জমির ফসলের কম বেশি ক্ষতি হয়েছে। বগুড়ার আগে ধান কাটা শুরু হয় পশ্চিমের নন্দীগ্রাম উপজেলায়। বৈশাখের শুরুতে প্রায় অর্ধেক জমির ধান কাটা হয়েছে। বাকি অর্ধেক জমি দুর্যোগের কবলে পড়েছে। সোমবার পর্যন্ত জেলার ১২ উপজেলার প্রায় ৩০ শতাংশ জমির বোরো কাটা হয়েছে। মাঠে আছে ৭০ শতাংশ। যার অর্ধেক পেকেছে। কৃষক যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি ধান কেটে ঘরে তুলছে। সোনাতলা উপজেলার রানীরপাড়া গ্রামের কৃষক বাসেত আলী বললেন ‘হাঁইরে শিল বাপো! এত বড় শিল বাপের জন্মেও দেকিনি। জমিত পরিচ্চে আর ধান গাছক সমানে শুতে ফাল্যে দিচ্চে। ঘরের চালের ওপর পড়লে মনে হচ্চে বোমা পরিচ্চে। পুরান টিন ফুট্যা হয়া ঘরের মধ্যে পানি ঝরঝর করে পরিচ্চে। এরই মধ্যে ধান কাটিচ্চি। (কী শিলরে বাবা! এত বড় শিল জন্মেও দেখিনি। জমিতে পড়ছে আর ধান গাছকে সমানে শুয়ে ফেলছে। ঘরের চালের ওপর পড়লে মনে হয় বোমা পড়ছে। পুরান টিন ছিদ্র হয়ে ঘরের ভিতরে পানি ঝরছে। এর মধ্যেই দান কাটছি)। সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা এলাকায় গেল ২৪ ও ২৫ এপ্রিল শিলাপাত হয়েছে। দুই দিন পর ২৮ এপ্রিল ফের শিলাপাত হয়। এই অবস্থায় কৃষকের মাথায় বাজ পড়ার উপক্রম। কৃষক রফিকুল বললেন ‘আকাশত আর কি বাজ পড়বি। হামাগেরে মাথাত বাজ পরিছে (আকাশে আর কি বিদ্যুত ঝলসাবে। আমাদের মাথায় বাজ পড়েছে)। এবার বোরো মৌসুমের শেষের বেলায় আবাদের এই অবস্থায় উত্তরাঞ্চলের কৃষককূল দিশেহারা। কী যে হয় শেষ পর্যন্ত...।
×