ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বৃষ্টি উপেক্ষা করে দুই জোটের প্রার্থীদের গণসংযোগ

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৩০ এপ্রিল ২০১৮

বৃষ্টি উপেক্ষা করে দুই  জোটের প্রার্থীদের  গণসংযোগ

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, গাজীপুর/ নূরুল ইসলাম, টঙ্গী ও আলম সাহা, খুলনা থেকে ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (জিসিসি) নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এ নির্বাচন নতুন মোড় নিচ্ছে। বাড়ছে প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকের ব্যস্ততা এবং অস্থিরতা। প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারের সময়সীমার শেষদিকে এসে হিসাব-নিকাশ করে ছুটছেন বিভিন্ন এলাকায়। সেই সঙ্গে গাজীপুরে ১৪ দলীয় ও ২০দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় নেতাদের পদচারণাও বাড়ছে। কারণ, জিসিসির নির্বাচনকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের টার্নিং পয়েন্ট নিয়ে উভয় জোটের নেতৃবৃন্দ গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছে। এ নির্বাচনের মূল ফ্যাক্টর গার্মেন্টস কর্মীদের সমর্থন ও ভোট পেতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীগণ তাদের খোঁজে ছুটছেন বিভিন্ন মিল-কারখানা ও আবাসিক এলাকায়। রবিবার উভয় জোটের শরিকদলের শতাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সমাগম ঘটে গাজীপুরে। তারা গাজীপুরে এসে কর্মী-সমর্থক নিয়ে নিজ জোটের প্রার্থীর পক্ষে বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকে গণসংযোগ ও পথসভা করে দিনভর ব্যস্ত সময় কাটান। স্থানীয় নেতাদের নিয়ে প্রার্থীরা নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েও ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন। ইতোমধ্যেই জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের (নৌকা) পক্ষে নির্বাচনী ময়দানে নেমেছে। বসে থাকেনি নারী কর্মী-সমর্থক ও দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। দলীয় প্রার্থীর বিজয়ের জন্য প্রতিদিনের মতো আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরাগাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও উঠোন বৈঠক করেছেন। অপরদিকে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের (ধানের শীষ) পক্ষে শরিকদলের নেতা-কর্মীরাও মাঠে নেমেছেন। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তারা নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করছেন। ফলে ভোট গ্রহণের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমেই পাল্টে যাচ্ছে নির্বাচনী দৃশ্যপট। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে সাত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল লড়াই হবে ১৪ দলীয় ও ২০ দলীয় জোটের দুই মেয়র প্রার্থীর মাঝে। এদিকে, খুলনায় বসে নেই প্রার্থীরা। নারী কাউসিলর প্রার্থীরা শুরু করেছেন নজরকাড়া প্রচার। মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছেন খালেক। মঞ্জু বলছেন, ব্যবসায়ীরা মুক্ত হবেন চাঁদাবাজদের অত্যাচার থেকে। নৌকা প্রতীকে ভোট চাইলেন সাংবাদিক সমাজ। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম চান ধানের শীষের পক্ষে ভোট এবং হিন্দুদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন সুজিত নন্দী। গাজীপুরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা) রবিবার সকালে ছয়দানা হাজীরপুকুর এলাকায় তার বাসায় কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে তিনি তেলিপাড়া এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করার লক্ষ্যে গঠিত কেন্দ্র কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মোঃ কামরুল আহসান সরকার রাসেলের সভাপতিত্বে এ সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ হারুনুর রশীদ। এতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ছাড়াও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাত, মজিবুর রহমান চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যুবলীগের সমন্বয়ক মোঃ বদিউল আলম বদি, মোঃ ফজলুর রহমান আতিক, দফতর সম্পাদক কাজী আনিছুর রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইসমাইল হোসেন, মেঃ কমর উদ্দিন, মোঃ কামরুজ্জামান কামরুল এবং জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য মোঃ সফিকুল ইসলাম বাবুল, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মোঃ আলতাব হোসেনসহ স্থানীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মেয়রপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ নেতাকর্মীরা খুবই মেধাবী ও পরিশ্রমী। সেই মেধা ও শ্রম দিয়ে সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রতীককে বিজয় সুনিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে যুবলীগসহ সবাইকে কা-ারি হিসেবে কাজ করতে হবে এবং বিজয়ের ধারা অব্যাহত রেখে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যুবলীগকে নির্বাচনের ময়দানে থাকতে হবে। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীক তথা আমাকে বিজয়ী করতে মহানগরের ৫৭ ওয়ার্ডে যুবলীগকে সমন্বয় করে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। এদিন দুপুরের পর কর্মী-সমর্থকের সঙ্গে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের গণসংযোগে বের হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে তা বিলম্বিত হয়। বৃষ্টির পর বিকেলে তিনি হাড়িনাল বাজারে পথসভার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। পরে গাজীপুর শহরের জোড়পুকুরপার, রাজবাড়ি মোড়, মজিদ আকন উচ্চবিদ্যালয় মাঠ, ডুয়েট, কলাবাজার, জয়দেপুর বাজার, লক্ষ্মীপুরা, জয়দেবপুর বাস টার্মিনাল, মারিয়ালিসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। শিবাবাড়ি মোড়ে পথসভার মাধ্যমে এদিনের গণসংযোগ শেষ হয়। এর আগে মহানগরের ২৫, ২৬, ২৭ ও ২৮ নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ নয়ন, সহসভাপতি ও গাজীপুর বারের জিপি এ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন বাবুল, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক মোঃ বাছির উদ্দিন, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিনা ইউনুছ, ২৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল জব্বার নূর, সাধারণ সম্পাদক শরিয়ত উল্লাহ, শিক্ষক নেতা আক্তার হোসেন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার রবিবার সকালে টঙ্গী এলাকার নিজ বাসায় কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে তিনি টঙ্গী থানা বিএনপির কার্যালয়ে নির্বাচন নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন। সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি’র প্রধান সমন্বয়ক ড. খন্দকার মোশারফ হোসেনসহ জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম ফজলুল হক মিলন ও সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, বিএনপির কেন্ত্রীয় সদস্য ও বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীর মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়কারী ডাঃ মোঃ মাজহারুল আলমসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব ও ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে দলের মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের (ধানের শীষ) পক্ষে কোনাবাড়ি ও আশপাশের এলাকায় বিকেল পর্যন্ত গণসংযোগ করেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও পেশাজীবী নেতা অধ্যাপক ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন নগরীর মীরের বাজার এলাকায় প্রচার কাজ করেন। বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া নগরীর কাউলতিয়া ও সালনা এলাকায় প্রচার কাজ করেন। অপরদিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এবারের নির্বাচনে অন্য প্রার্থীরাও দিনভর ব্যাপক গণসংযোগের মধ্য দিয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। তবে কয়েক দফা ঝড় ও বৃষ্টির কারণে প্রার্থীদের গণসংযোগ কিছুটা ব্যাহত হয়। চার কাউন্সিলর প্রার্থীসহ ছয়জনকে জরিমানা ॥ আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে রবিবার বিকেলে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের চার কাউন্সিল প্রার্থীসহ ছয়জনকে ৯৮হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সহকারী রিটার্নিং অফিসার তানিয়া আক্তার জানান, আলোকসজ্জা, আঠা দিয়ে দেয়ালে ও গাড়িতে পোস্টার আটকানোর অভিযোগে দুজন সাধারণ এবং দুইজন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর প্রার্থী এবং দুই মেয়র প্রার্থীর দুই কর্মীকে ৯৮হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী বিচারকরা হলেন গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জুবের আলম ও রুবাইয়া ইয়াসমিন। গাজীপুরের এসপিকে প্রত্যাহার দাবি বিএনপির ॥ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়ক খন্দকার মোশারফ হোসেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, গাজীপুরের পুলিশ সুপার প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত। বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে একটি দলের পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় এই এসপিকে ওই নির্বাচনের সময় সাময়িকভাবে গাজীপুর থেকে প্রত্যাহার করেছিল নির্বাচন কমিশন। এবার সিটি নির্বাচনে মিথ্যা অপবাদে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে গত ২৭এপ্রিল আমাদের সমর্থিত মহানগর জামায়াত নেতাসহ ৪৫ কর্মীকে গ্রেফতার করে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। যে সদিচ্ছা নিয়ে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। নির্বাচনের প্রথম থেকেই তারা আমাদের প্রত্যাশাকে, আমাদের আশাকে ভঙ্গ করেছে। তিনি রবিবার সকালে টঙ্গীতে বিএনপির কার্যালয়ে নির্বাচন নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওইসব কথা বলেন। এ সময় মেয়র প্রার্থী মোঃ হাসান উদ্দিন সরকার, জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম ফজলুল হক মিলন ও সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও মেয়র প্রার্থীর মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়কারী মোঃ মাজহারুল আলমসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। গ্রেফতারকৃতদের দ্রুত মুক্তি দাবি জানিয়ে খন্দকার মোশারফ হোসেন আরও বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনী প্রচারকালে আমাদের কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। বাড়িতে পুলিশ গিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের অযথা হয়রানি করছে। পুলিশ প্রশাসন এখন থেকেই আমাদের নেতা-কর্মীদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে একটা কৌশল অবলম্বন করছে। তাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে তিনি আবারও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার কথা বলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তথা নির্বাচন কমিশনকে এর জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং প্রশাসনকে এখানে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিতে হবে, আর যারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না তাদের অনতিবিলম্বে এ নির্বাচনী এলাকার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। মোশারফ বলেন, এ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সিটি নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচন কি ধরনের হবে তার ইঙ্গিত বহন করবে এ সিটি নির্বাচন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচন হলো বর্তমান নির্বাচন কমিশন ও সরকারের জন্য একটা অগ্নিপরীক্ষা। সিটি নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ সরকার, এই নির্বাচন কমিশন, এই প্রশাসন, কি করবে তা জনগণের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। তাই আমরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার পূর্বশর্ত হিসেবে এই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে মূল্যায়ন করব। তাই তিনি সিটি নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে ২০দলীয় নেতা-কর্মীদের হয়রানী না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। নির্বাচনী প্রচার পরিচালনা কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় ॥ বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হলে গাজীপুরের মানুষের অধিকার থাকবে। বিএনপি নির্বাচিত হলে নাশকতার রাজনীতি আবার ফিরে আসবে। শুধু গলাবাজি করে, স্লোগান দিয়ে সংগঠন চলে না, শুধুমাত্র আন্দোলন করে সংগঠন চলে না। গলাবাজির আন্দোলনের দিন শেষ। এখন মেধাভিত্তিক, কৌশলভিত্তিক আন্দোলন প্রণয়ন করতে হবে। তিনি গাজীপুর সিটির তেলিপাড়া এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থনে প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করার লক্ষ্যে গঠিত কেন্দ্র কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওইসব কথা বলেন। গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মোঃ কামরুল আহসান সরকার রাসেলের সভাপতিত্বে ওই সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ হারুনুর রশীদ। এতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য মোঃ সফিকুল ইসলাম বাবুল, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মোঃ আলতাব হোসেনসহ স্থানীয় বিভিন্ন নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। খুলনায় ৪০ নারী প্রার্থীর নজরকাড়া তৎপরতা ॥ খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে একটি সাধারণ ওয়ার্ডে একাধিক পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে এক নারী প্রার্থী এবং সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে ৩৯ নারী পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। এই ৪০ নারী প্রার্থী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। মাইকে প্রচারের পাশাপাশি পোস্টার ঝুলিয়ে দেয়া, গণসংযোগ করা, লিফলেট বিতরণ সবই করছেন প্রায় সব নারী প্রার্থী। প্রচারে পুরুষ প্রার্থীদের ন্যায় তারাও দিচ্ছেন উন্নয়নের নানান প্রতিশ্রুতি। তাদের তৎপরতাও নজর কাড়ছে নগরবাসীর। খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে কোন নারী প্রার্থী নেই। অতীতেও কোন দল এই পদে কোন নারীকে মনোনয়ন দেয়নি। এমনকি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিল পদেও নারী প্রার্থী হয়ে দলীয় সমর্থন পায়নি। গত নির্বাচনে একাধিক নারী সাধারণ ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন। বড় দুটি দলে কিছু নারী নেতৃত্ব রয়েছেন যারা প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্য হলেও দল বিবেচনা না করায় তারা উৎসাহিত হন না। দলগুলো নারীদের ওই সংরক্ষিত কোটায় থাকাকেই উৎসাহিত করেন বলে রাজনীতিতে সক্রিয় একাধিক নারী নেত্রী জানান। এবার সব মিলিয়ে কেসিসি নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ডে ১ জন এবং সংরক্ষিত আসনে ৩৯ নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দিনরাত প্রচারে ব্যস্ত তারা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে প্রার্থী ও তাদের কর্মীরা যাচ্ছেন। ভোট প্রার্থনা করছেন। পাশাপাশি ঘরোয়া সভা সমাবেশ করেও তারা মতবিনিময় অব্যাহত রেখেছেন। মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করা হবে- খালেক ॥ কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক রবিবার সকালে নগরীর ৩০নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন ও একাধিক পথ সভায় বক্তব্য রাখেন। এ সময় নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করে খালেক বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করা হবে। জলাবদ্ধতা নিরসন, মশা নিধন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি করা হবে। সিটি কর্পোরেশন হবে জবাবদিহিমূলক স্বচ্ছ ও দুর্নীতি মুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান। খালেক বলেন, ২০০৮ সালে তিনি মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের সময় খুলনা সিটি কর্পোরেশন ছিল একটি দেনাগ্রস্ত ও দুর্নীতিতে জর্জরিত প্রতিষ্ঠান। দায়িত্ব নেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ দিয়েছিলেন। বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে ২শ’ ৭৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল। সিটি কর্পোরেশন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মতো একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার সব ধরনের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু আজ আবারও সিটি কর্পোরেশন দেনা ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। গত ৫ বছরে নগরবাসী নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তিনি একটি পরিচ্ছন্ন মডেল নগরী গড়ে তুলতে চান। চাঁদাবাজদের অত্যাচার থেকে মুক্ত হবেন ব্যবসায়ীরা- মঞ্জু ॥ কেসিসি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু রবিবার সকালে ২০নং ওয়ার্ড এলাকার দেবেন বাবু রোড, শেখপাড়া মেইন রোড, সঙ্গীতা হল সংলগ্ন মার্কেট, শেখপাড়া লোহাপট্টি, শেখপাড়া পাকা বাজার-কাঁচা বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেন। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে পরিকল্পিতভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। তাকে কারামুক্ত করার আন্দোলনে অগ্নিস্ফূলিঙ্গ সৃষ্টি করতে কেসিসি নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীককে বিজয়ী করার কোন বিকল্প নেই। মেয়র প্রার্থী মঞ্জু ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নির্বাচিত হলে মাদকমুক্ত নগর গড়ে তোলা হবে, কারা মাদকের ব্যবসা করেন আর কারা তাদের গডফাদার তা নগরবাসী জানে। তিনি বলেন, চাঁদাবাজদের অত্যাচারে ব্যবসায়ীরা অতীষ্ঠ। তিনি নির্বাচিত হলে চাঁদাবাজির হাত থেকে ব্যবসায়ীরা মুক্ত হবেন বলে মঞ্জু আশ্বাস দেন। নৌকা প্রতীকে ভোট চাইলেন খুলনার সাংবাদিক সমাজ ॥ কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের সমর্থনে রাজপথে নৌকা প্রতীকে ভোট চাইলেন খুলনার সচেতন সাংবাদিক সমাজ। রবিবার দুপুর ১২টায় খুলনা প্রেসক্লাব চত্বর থেকে কর্মসূচী শুরু করা হয়। এ সময় মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক উপস্থিত ছিলেন। তার নেতৃত্বে সচেতন সাংবাদিক সমাজের ব্যানারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান হয়। এরপর নগরীর পিকচার প্যালেস চত্বর, জলিল টাওয়ার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাজার কালিবাড়ি, কেডি ঘোষ রোড, অফিস-ব্যাংক, ডাকবাংলো, ক্লে রোড, শহীদ হাদিস পার্ক এলাকায় গণসংযোগ করেন। ধানের শীষের পক্ষে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের গণসংযোগ ॥ কেসিসি নির্বাচন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুর ইসলাম মঞ্জুর ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে রবিবার প্রচারে অংশ নেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতৃবৃন্দ। সকাল থেকে তারা নগরীর চাঁনমারী বাজার, জোড়াকল বাজার, করের বাজার, মিয়াপাড়া, পিটিআই মোড় এলাকায় গণসংযোগ করে না। এ সময় আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আব্দুল মালেক, এস আর ফারুক, গোলাম মাওলা, মোমরেজুল ইসলাম, মাসুম আল রশিদ, মুজিবর রহমান, চৌধুরী আব্দুস সবুর, শরিফুল ইসলাম জোয়াদ্দার, আসাদুল ইসলাম, এমদাদুল হক হাসিব, ওমর ফারুক বনি, রফিকুল ইসলাম, খালিদ হাসান জনি, বজলুর রহমান রাজা, শামীম আহসান, মিজানুর রহমান, মনিরুজ্জামান খোকন, শেখ রফিকুল ইসলাম, মোঃ আসলাম, কামাল হোসেন, শেখ কামাল, সোবহান সরদার প্রমুখ। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে চাইÑ ইসি ॥ নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী (অব) বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি আইনানুগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে চায়। দেশবাসীসহ সারা বিশ্ব এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি রবিবার সকালে খুলনা সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন-২০১৮ এর বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে অবহেলা ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্বাচন কমিশন পিছপা হবে না। বিশাল একটি যজ্ঞ নিয়ে নির্বাচন কমিশন মাঠে নেমেছে, এই যজ্ঞে তিনি সকলকে সহযোগিতার আহ্বান জানান। এ সময় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন। খুলনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে সুজিত নন্দীর মতবিনিময় ॥ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী রবিবার সকালে খুলনা মহানগরীর শিতলাবাড়ি মন্দিও প্রাঙ্গণে পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা কৃষ্ণ পদ দাসের সভাপতিত্বে ও সাবেক ছাত্রনেতা অসিত বরন বিশ্বাসের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য আমিরুল আলম মিলন, এ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী, এ্যাডভোকেট নিমাই চন্দ্র রায়, জাহাঙ্গীর হোসেন খান, সুজিত কুমার সাহা, বিজয় ঘোষ, প্রশান্ত কুন্ডু, রবীন্দ্রনাথ মন্ডল, সৌমেন বোস, সঞ্জিব সাহা, দীপক চন্দ্র মন্ডল, রতন মিত্র, শ্যামল চক্রবর্তী প্রমুখ। এরপর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সুজিত রায় নন্দীর নেতৃত্বে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করা হয়। নগরীর উমানন্দ শিব মন্দির থেকে শুরু করে শামসুর রহমান রোড, বাইতিপাড়া ও ধর্মসভা এলাকায় গণসংযোগ করা হয়। এ সময় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও ২৩ নং ওয়ার্ডের দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী ফায়েজুল হক টিটো, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী কনিকা সাহা এই গণসংযোগে অংশগ্রহণ করেন।
×