ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএনডির জলাবদ্ধতা নিরসন না হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ করে দেব ॥ শামীম ওসমান

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

 ডিএনডির জলাবদ্ধতা  নিরসন না হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম  মহাসড়ক বন্ধ  করে দেব ॥ শামীম ওসমান

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেছেন, সামনের বর্ষা মৌসুমে ডিএনডির জলাবদ্ধতা নিরসন না হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ করে দেয়া হবে। তিনি বলেন, আমি কিন্তু এটা করব। আমি সেই এমপিগিরি করতে চাই না। আমি এমপিগিরি করব আর আমার এলাকার মানুষ পানির নিচে তলিয়ে পচবে। আমার কোন অধিকার নেই সেই এলাকার জনপ্রতিনিধি হওয়ার। আমি চাই দ্রুত ডিএনডির জলাবদ্ধতার নিরসন হোক। বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে জনদুর্ভোগ লাঘবে ডিএনডির পানির নিষ্কাশন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন ও যানজট নিরসনের লক্ষ্যে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ডিএনডির জলাবদ্ধতা নিষ্কাশন প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল মাশফিক আলম ভূইয়া, নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মঈনুল হক এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিএনডির উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ আউয়াল মিয়া। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দফতরের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, সিটি কর্পোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক শীর্ষ নেতারা। সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, গত ৪ বছরেও ডিএনডির পানি নিষ্কাশনের কোন কূল কিনারা করতে পারছিলাম না। মাচা বেঁধে মানুষ বসবাস করছেন। লজ্জা পাই যখন দেখি মানুষ হাঁটুর ওপরে কাপড় তুলে চলাচল করছে। পানিটা হচ্ছে সম্পূর্ণ দুর্গন্ধযুক্ত ও দূষিত পানি। আর এই জলজট সৃষ্টি হয় প্রভাবশালী লোকদের কারণে। ডিএনডিবাসীকে পানির নিচে রেখে আমার এমপিগিরি করার কোন ইচ্ছা নেই। আমি মন্ত্রীকে বলে দিয়েছি, যদি ডিএনডির পানি নিরসন না করা হয় তাহলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক রোড বন্ধ করে দিব। এবং আমি এটা করব। ময়লা পানি দিয়ে প্রতিদিন মানুষ হেঁটে যায়। মানুষ যেন আর পানির নিচে না থাকে। আমি এই সমস্যার সমাধান চাই। তিনি বলেন, মানুষ চোখে যা দেখে তাই বিশ্বাস করে। সারা পৃথিবীতে দেশের সুনাম এনে দিয়েছে দেশের সেনবাহিনী। এই সেনাবাহিনী ৭৫ এর সেনাবাহিনী না। তাই ডিএনডি প্রকল্পের কাজ করানো হচ্ছে সেনাবাহিনী দিয়ে। ডিএনডির কাজ প্রথমে শ্বশুর বাড়ি থেকে কাজ শুরু করেছি। যে কোন ভাল কাজ করতে গেলে ৫ জন আপনার বিপক্ষে দাঁড়াবেই। তবে আমি চাই এই প্রকল্পের কাজের বিষয়ে কেউ যাতে আমার কাছে কোন তদবির নিয়ে না আসে। আমরা চাই না সেনাবাহিনীকে নিয়ে কোন বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা হোক। তারা ইচ্ছে করলে অবৈধ দখলদারদের স্থাপনা ভেঙ্গে দিতে পারত। কিন্তু তারা জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ধীরে সুস্থে এগুচ্ছে। শামীম ওসমান বলেন, দেশটা আমাদের সকলের। সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে যারা নারায়ণগঞ্জে দায়িত্ব পালন করছেন আমি মনে করি তারা সকলেই নারায়ণগঞ্জের নাগরিক। তাই সকলেরই মতামত দেয়ার অধিকার রয়েছে। আর সকলের মতামত নিয়েই সকল সমস্যার সমাধান করা হবে। এটার উদ্দেশ্য রাজনীতি করা না, মানুষের সেবা করাই একমাত্র উদ্দেশ্য। যানজট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রমজানের আগে থেকেই নারায়ণগঞ্জে যানজট শুরু হয়ে যায়। তাই যানজট নিরসনের জন্য রমজানের ৭ দিন আগে থেকেই জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের নিয়ে কাজ করা হবে। এতে করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রেম সৃষ্টি হবে। এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রশিক্ষণ দিবেন। আর গোয়েন্দা বিভাগে যারা কাজ করেন তারা কি কারণে যানজট সৃষ্টি হয় সে কারণগুলো আমাকে জানাবেন। আমি ব্যবস্থা নিব। যদি আমার দলের লোক হয় তার বিরুদ্ধে দ্বিগুণ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। মতবিনিময় সভায় ডিএনডির জলাবদ্ধতা নিষ্কাশন প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল মাশফিক আলম ভূইয়া বলেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধ এলাকায় পানি নিষ্কাশন প্রকল্পটি আমরা গেল বছরের ডিসেম্বরে ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছি। আমরা চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু করেছি। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও আমরা ২০১৯ সালের জুলাই মাসের মধ্যে শেষ করার প্ল্যান নিয়ে কাজ শুরু করেছি। অর্থাৎ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগেই আমরা প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে পারব। তিনি বলেন, হাতিরঝিলের প্রকল্পের কাজকে মাথায় রেখেই আমরা এগুচ্ছি। খালগুলো দখলমুক্ত করার পরে এর পাড়গুলো বাঁধাই করে দেয়া হবে। দুই পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। খালগুলোতে চলবে ওয়াটার ট্যাক্সি। এছাড়া ইটিপির মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট নিয়েও আমরা পরিকল্পনা করছি। তবে খালের পানিতে ময়লা ফেলা যাবে না। এ ক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করছি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ডিএনডির চেহারা বদলে যাবে। এই বছর ডিএনডি অধিবাসীরা কিছুটা দুর্ভোগ পোহালেও আগামীতে তাদের জন্য সুদিন অপেক্ষা করছে। উল্লেখ্য, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) সেচ প্রকল্প এলাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে এবং জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ডিএনডি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন (ফ্রেজ-২)’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
×