ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী অর্থবছর কার্যকর

সরকারী কর্মচারীরা ৩০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা গৃহঋণ পাবেন

প্রকাশিত: ০৫:০০, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

 সরকারী কর্মচারীরা ৩০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা গৃহঋণ পাবেন

এম শাহজাহান ॥ গ্রেডভেদে ত্রিশ থেকে ৭৫ লাখ টাকার গৃহঋণ পাবেন সরকারী চাকরিজীবীরা। বাড়ি নির্মাণ কিংবা ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য তাদের ৫ শতাংশ সুদে এই ঋণ দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে গৃহঋণ নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। যদিও এই ঋণের মোট সুদহার হবে ১০ শতাংশ। তবে এই ১০ শতাংশ সুদের ৫ শতাংশ সরকার এবং বাকি ৫ শতাংশ ঋণ গ্রহীতা পরিশোধ করবেন। ছয় মাসের গ্রেস পিরিয়ডে ২০ বছর মেয়াদে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আবাসন সঙ্কট মেটাতে নতুন এ ঋণ সুবিধা আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকরে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, সরকারী কর্মচারীদের গৃহনির্মাণে ঋণের মাধ্যমে অর্থের যোগান দিতে এ নীতিমালা করা হলেও সরকারের আওতাধীন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর, পরিদফতর ও কার্যালয়গুলোতে স্থায়ী পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত বেসামরিক কর্মচারীরাও এ সুবিধা পাবেন। তবে সামরিক, রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি, পৃথক বা বিশেষ আইন দ্বারা সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত কর্মচারীরা এ নীতিমালার আওতাভুক্ত হবেন না। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যাংক থেকে এ ধরনের গৃহনির্মাণ ঋণ সুবিধা পেয়ে আসছেন। ঋণপ্রাপ্তির যোগ্যতার ক্ষেত্রে নীতিমালায় বলা হয়েছে, গৃহনির্মাণ বা ফ্ল্যাট ক্রয়ে ঋণের জন্য আবেদনকারীকে সরকারী প্রতিষ্ঠানে রাজস্ব খাতভুক্ত স্থায়ী পদে কর্মরত হতে হবে। সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মকাল ন্যূনতম পাঁচ বছর থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫৮ এর মধ্যে হতে হবে। তবে কোন সরকারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু এবং দুর্নীতি মামলার ক্ষেত্রে চার্জশীট দাখিল হলে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ নীতিমালার আওতায় ঋণ গ্রহণের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। পাশাপাশি সরকারী চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক, খ-কালীন ও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত কোন কর্মচারী এ নীতিমালার আওতায় ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন না। নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, কোন কর্মচারী ঋণ নেয়ার পর স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়লে বা বাধ্যতামূলক অবসর, বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত হলে আদেশ জারির তারিখ থেকে ঋণের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য সুদ বাবদ সরকার কোন ভর্তুকি দেবে না। এক্ষেত্রে ঋণের অপরিশোধিত অর্থ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর পেনশন সুবিধা বা আনুতোষিক সুবিধা থেকে আদায় করা হবে। ঋণগ্রহীতার মৃত্যু হলে তার পারিবারিক পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা থেকে যতটুকু সম্ভব ঋণ পরিশোধ করা হবে। এরপরও ঋণ পাওনা থাকলে উত্তরাধিকারদের কাছ থেকে তা আদায় করা হবে। প্রসঙ্গত, অষ্টম পে-স্কেল ঘোষণার পর থেকেই সরকারী চাকরিজীবীরা বাড়ি নির্মাণ ও ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে জোরালো দাবি জানিয়ে আসছিলেন। ইতোপূর্বে নামমাত্র ঋণের ব্যবস্থা থাকলেও সুদ হার বেশি থাকায় সেই ঋণে আগ্রহ ছিল না সরকারী চাকরিজীবীদের। বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অর্থ বিভাগের সভাকক্ষে এ সংশ্লিষ্ট আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভায় ‘সরকারী কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা, ২০১৮’- এর খসড়াটি সামান্য পরিবর্তন করে চূড়ান্ত করা হয়েছে। সভায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ ইউনুসুর রহমানসহ কমিটির অন্য সদস্যারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, বেতন স্কেলের গ্রেডভেদে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ এবং সর্বনিম্ন ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের বিধান রেখে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য তার কাছে নীতিমালাটি পাঠানো হবে। অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের পর মন্ত্রিসভার বৈঠকে শীঘ্রই উপস্থাপনের জন্য পাঠানো হবে। এদিকে, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এখন বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দেয়ার কারণে দেশের বাইরে রয়েছেন। সম্মেলন শেষে দেশে ফেরার পর নীতিমালাটি তিনি অনুমোদন করতে পারেন। জানা গেছে, সরকারী চাকরিজীবীদের জন্য গৃহঋণের সুদ হার পাঁচ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বর্তমানে এ সুদ হার ১০ শতাংশ। নীতিমালা অনুযায়ী, একজন সরকারী কর্মচারী সর্বোচ্চ ঋণ পান এক লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু এখন থেকে উপ-সচিব থেকে সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা, জাতীয় বেতন স্কেলের পঞ্চম থেকে প্রথম গ্রেডভুক্তরা ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ২০ বছর মেয়াদী এ ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ কিংবা ফ্ল্যাট ক্রয় করতে পারবেন। সর্বনিম্ন ১৮ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পাবেন। চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে সরকারী চাকরিজীবীরা এ ঋণ নিতে পারবেন। সর্বোচ্চ ৫৮ বছর বয়স পর্যন্ত এ ঋণ নেয়া যাবে। সরকারী কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র মালিকানাধীন তফসিলী ব্যাংকসমূহ এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে সরকারী কর্মচারীদের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তবে সরকার অন্য যেকোন বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে। এ ঋণের সরল সুদ হবে ১০ শতাংশ। ১০ শতাংশ সুদের মধ্যে পাঁচ শতাংশ সুদ ভর্তুকি হিসেবে পরিশোধ করবে সরকার। বাকি পাঁচ শতাংশ সুদ পরিশোধ করবেন ঋণগ্রহীতা চাকরিজীবী। এদিকে, চূড়ান্ত নীতিমালা অনুযায়ী, জাতীয় বেতনকাঠামোর পঞ্চম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা, যাদের বেতন স্কেল ৪৩ হাজার বা এর বেশি তারা প্রত্যেকে ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় শহরে গৃহনির্মাণে ঋণ পাবেন ৭৫ লাখ টাকা। জেলা সদরে এর পরিমাণ হবে ৬০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকায় ৫০ লাখ টাকা। বেতনকাঠামোর নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেড পর্যন্ত বা যাদের মূল বেতন ২২ হাজার থেকে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা, তারা ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদর এলাকার জন্য ৬৫ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৫৫ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৪৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। দশম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত যাদের মূল বেতন ১১ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা তারা ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৫৫ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৪০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৩০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। ১৪তম থেকে ১৭তম গ্রেড বা নয় হাজার থেকে ১০ হাজার ২০০ টাকা বেতন স্কেলে ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৪০ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৩০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ২৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। ১৮তম থেকে ২০তম গ্রেড বা আট হাজার ২৫০ টাকা থেকে আট হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত মূল বেতন পান এমন কর্মচারীরা ঢাকাসহ সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণ পাবেন ৩০ লাখ টাকা। জেলা সদরে এটি হবে ২৫ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য পাবেন ২০ লাখ টাকা। নীতিমালা অনুযায়ী, গৃহনির্মাণ ঋণ দেয়ার আগে যে সম্পত্তিতে ঋণ দেয়া হবে, তা ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান বরাবর রেজিস্টার্ড দলিলমূলে বন্ধক রাখতে হবে। বাস্তুভিটায় বাড়ি করার ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতার মালিকানাধীন অন্য কোন সম্পত্তি বন্ধক রাখা যাবে।
×