ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দখল-দূষণের কবলে আন্ধারমানিক

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৫ এপ্রিল ২০১৮

দখল-দূষণের কবলে আন্ধারমানিক

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২৪ এপ্রিল ॥ আন্ধারমানিক নদী কলাপাড়াবাসীর প্রাণ। সেই প্রাণের স্পন্দন এই নদীর জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিক প্রবাহ। নদীর পুরোটা সাগর মোহনা পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার এলাকা ইলিশের অভয়ারণ্য হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে। এই নদী ইলিশের প্রজননকালীন আশ্রয়সহ পোনা ইলিশের বড় হয়ে ওঠার নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে রাখা হয়েছে। এমনিতেই নদীতে পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে এবছর ভয়াবহ দখল-দূষণ শুরু হয়েছে। ভূমিদস্যুদের আগ্রাসী থাবায় পায়রা বন্দরের উত্তর পাশে টিয়াখালী নদীর সংযোগ স্থল থেকে বালিয়াতলী খেয়াঘাট পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার নদী তীর দখল করে রিংবেড়িবাঁধ দিয়ে বালু ভরাট চলছে। কেউ কেউ স্লুইস সংযুক্ত নদীর সঙ্গে সংযোগ খাল পর্যন্ত ভরাট করে দখল করে নিয়েছে। পায়রা বন্দর ঘেঁষা এই দখলদারিত্ব চলছে। এক-দেড় বছর আগের বনজঙ্গলে ঘেরা সবুজ অরণ্য এখন বিরানভূমি। বালুর আস্তরণে ঢেকে গেছে। পাঁচ-সাত ফুট বালুর নিচে চাপা পড়েছে প্রকৃতির রং, বাস্তবতা। এখন খাঁ খাঁ করছে নদীর ওয়াটার লেভেল পর্যন্ত। জোয়ারে কোমর সমান পানি ওঠে। শত শত একর সরকারী খাসসহ নদী তীর ভরাট চলছে ফ্রি-স্টাইলে। পরিবেশ বাদীসহ সকলের মন্তব্য জোয়ারের সময় নদী তীরে যতদূর পানিতে প্লাবিত হয় ততদূর নদীর সীমানা। কিন্তু এখন আন্ধারমানিক নদীর দীর্ঘ এলাকা দখল-দূষণের গ্রাসে। দখলদারদের আগ্রাসী থাবায় ইলিশের অন্যতম আবাসস্থল আন্ধারমানিক এখন চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বালিয়াতলী খেয়াঘাট থেকে কলাপাড়া পৌরসভার সীমানা পর্যন্ত আবার ইটভাঁটির মালিকরা ভরাট ও দখল করে যাচ্ছে। এরা আবার সোনাতলী নদীর দুই পাড় কেটে টপসয়েল এনে ব্যবহার করছে ইট তৈরির কাজে। তাও লোনা পানির ইট। পৌর এলাকায় আবার দখলদাররা নদী তীরে তুলছে পাকা ও সেমিপাকা স্থাপনা। এমনিভাবে বহুমুখী দখল চলছে আন্ধারমানিক নদীর দীর্ঘ এলাকায়। উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ সুলতান মাহমুদ জানান, ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে অনেকে দখল করছে নদীর পাড়। যা ভূমি অফিসের লোকজন বাধা দিচ্ছে না। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকার খাস সম্পত্তি বেহাত হচ্ছে। অপরদিকে নদীরও চরম ক্ষতি হচ্ছে। দখল ছাড়াও পলিতে নদীর দুই পাড় ভরাট হয়ে গেছে। এখন নিশানবাড়িয়া, টুঙিবাড়িয়া, নিউপাড়া, নিজামপুরের উল্টোদিকে বিশাল এলাকাজুড়ে চর জেগে উঠেছে। চরম নব্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বর্তমানে ইলিশের অভয়াশ্রম এই নদী রক্ষায় সরকারী কোন উদ্যোগ নেই। নদীতে এখন ভরাটের পাশাপাশি ফ্রি-স্টাইলে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। খোদ কলাপাড়া পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হয় এই নদীতে। তবে দখলদার ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তানভীর রহমান জানিয়েছেন। তবে সচেতন মহলের অভিমত এখনই দখল-দূষণ ঠেকাতে কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
×