ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পার্বতীপুর এতিমখানা বিদ্যালয়ে অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ২২ এপ্রিল ২০১৮

পার্বতীপুর এতিমখানা বিদ্যালয়ে অনিয়ম

শ আ ম হায়দার, পার্বতীপুর ॥ পার্বতীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত দুস্থ এতিমখানা বিদ্যালটি বেহাল দশা। যেসব ভাগ্যবিড়ম্বিত অনাথ শিশু এখানে ঠাঁই নিয়েছে, তারাও চরম অবহেলা ও দুরবস্থার শিকার। শনিবার সকালে গিয়ে চোখে পড়ে স্যাঁতসেঁতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গোডাউনের মতো কক্ষ শিশুদের থাকার জায়গা । একটি মাত্র জরাজীর্ণ টয়লেট। তাও চাবি থাকে মালিকের হেফাজতে । বাধ্য হয়ে শিশুরা মলমূত্র ত্যাগ করে খোলা আকাশের নিচে পরিত্যক্ত স্থানে। তত্ত্বাবধায়ক না থাকায় বেশির ভাগ সময়ে গেটে তালা দিয়ে শিশুদের বন্দী অবস্থায় রাখা হয় । খাওয়া-দাওয়া অতি নিম্নমানের। সকালের নাস্তা দেয়া হয় শুধুমাত্র মুড়ি। মাছ-মাংস ও ভাল খাবার তাদের ভাগ্যে জোটে না। এ অবস্থায় বিবেক তাড়িত হয়ে শহরের শাহ হোটেলের মালিক আরাফাত প্রতি শুক্রবার দু বেলা খাবার পরিবেশন করেন। প্রতিষ্ঠানটির জম্ম ১৯৮৮ সালে। রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১৩৮/৮৯। এতিম বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও কোন শিক্ষক নেই, নেই লেখাপড়া। ছাত্ররা স্ব-উদ্যোগে রোস্তমনগর মাদ্রাসা, আদর্শ মহাবিদ্যালয় ও পার্বতীপুর টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজে গিয়ে লেখাপড়া করে। অথচ সমাজ সেবা অধিদফতর থেকে ক্যাপিটেশন গ্রান্ড ফান্ডের ১০ ছাত্রের জন্য বছরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ছাড়াও দোকান ভাড়া ৪৮ হাজার টাকা, দুই ঈদে ফেতরা ও দান অনুদানের কমপক্ষে ১৪ লাখ সবমিলে ১৭ লাখের মতো টাকা আয়ের খাতে জমা হয়। এ ছাড়াও মানতকারীরা ছাগল, ভেড়া, হাঁস মুরগি এতিমখানায় দিয়ে যায়। এত টাকা দান-অনুদান কোথায় যায় ? এতিমের হক এ ভাবেই বেহক করার কথা উঠেছে। সভাপতি ২৫ শতকের মধ্যে ১০ শতক প্রতিষ্ঠানের জন্য রেখে বাকি ১৫ শতক দখলে নিয়ে ব্যক্তিগত অবকাঠামো নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তার পুত্রও প্রতিষ্ঠানের একটি অংশ দখল করে দিব্যি অনলাইনের ব্যবস্থা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার ফাইফরমায়েশ খাটাসহ ব্যক্তিগত কাজে ছেলেরা নিয়োজিত। উপর্যুপরি অত্যাচার নির্যাতনে কিছুদিন আগে এতিমখানা থেকে আবু হায়াত নামে একটি শিশু পালিয়ে যায় । সার্বিক ব্যবস্থাপনার বিষয় জানতে চাইলে সমাজসেবা অফিসার তাপসকুমার রায় জানান ৭ সদস্যের ম্যানেজিং কমিটি অনাথ ও দুস্থ শিশুদের লেখাপড়া, লালন-পালন, খাওয়া-দাওয়া ও ভরণ-পোষণ সবকিছুই করবে। যদি না করে সেটা অপরাধ। অবশ্য প্রতিষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক মনসুর উর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি সেবার মনোভাব নিয়ে এতিমদের লালন-পালন করছেন । তবে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোহসীন আলী প্রামানিক দ্বিমত পোষণ করে বলেন, সভাপতি সঠিক কথা বলেনি । তিনি নিজেই সবকিছু করেন। কমিটির সদস্যদের ডাকেন না। তিনি আমার স্যার, তাই লজ্জায় কিছু বলি না। প্রয়োজনে কাগজপত্রে সহি-স্বাক্ষর দেই। এ ভাবেই চলছে এ এতিমখানা। শুরুতে সমাজহিতৈষী কতিপয় ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে এখানে হিল্লোল সাহিত্য সংঘ নামে একটি সংগঠন গড়ে ওঠে । পরবর্তীতে এই সাহিত্য সংঘটিই রূপান্তরিত হয় এতিমখানায়। তবে সূচনালগ্নের উদ্যোক্তারা এখন কমিটিতে নেই। তাদের পক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনসহ আরও অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, অধ্যাপক মনসুর-উর-রহমান কৌশলে তাদের সবাইকে বের করে গৃহপালিত কমিটি গঠন করে এতিমখানাটিকে নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন।
×