ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চিত্রকে নাজলীর প্রদর্শনী ‘সৃষ্টি শান্তি ও বিস্ময়’

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২১ এপ্রিল ২০১৮

 চিত্রকে নাজলীর প্রদর্শনী ‘সৃষ্টি শান্তি ও বিস্ময়’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অদ্ভুত সুন্দর রং আশ্রিত চিত্রপটগুলো নয়নে ছড়ায় প্রশান্তি। ভাললাগার রেশ ছড়িয়ে যায় শিল্পরসিকের অন্তরে। ক্যানভাসে উঠে এসেছে চারপাশের চেনা জগত। রং আর রেখায় মোহনীয়ভাবে উদ্ভাসিত নদীমাতৃক বাংলাদেশ। আছে মনভোলানো ফুল, গাছ ও লতাপাতার ছবি। বিশেষ কৌশলে ক্যানভাসে জায়গা করে নিয়েছে একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধার চিঠি। মাকে লেখা মাতৃভূমির জন্য লড়াকু সৈনিকের চিঠিটি আবেগ সঞ্চার করে দর্শনার্থীর অন্তরে। শস্য নিয়ে ছুটে চলা পালতোলা নৌকার ছবিটি দারুণ দৃষ্টিনন্দন। নুসরাত জাহান নাজলীর আঁকা এমন কিছু চিত্রকর্ম নিয়ে ধানমন্ডির গ্যালারি চিত্রকে চলছে প্রদর্শনী। শিরোনাম ‘সৃষ্টি, শান্তি ও বিস্ময়’। শুক্রবার সন্ধ্যায় দশ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম। অনুভূতি ব্যক্ত নুসরাত জাহান নাজলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গ্যালারি চিত্রকের নির্বাহী পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান। এ্যাক্রেলিক মাধ্যমে আঁকা ৩০টি চিত্রকর্মে সজ্জিত প্রদর্শনীটি চলবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ৮টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। মঞ্চে ভাসল হাছন রাজার নাও ॥ বাংলার লোকসঙ্গীতের এক অনন্য লোককবি হাছন রাজা। তার গানের মতোই বিচিত্র তার জীবন। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রামপাশা, লক্ষণ শ্রী আর সিলেটের একাংশ নিয়ে পাঁচ লাখ বিঘার বিশাল অঞ্চলের জমিদার ছিলেন এই দেওয়ান হাছন রাজা চৌধুরী। প্রতাপশালী জমিদার হিসেবে বেপরোয়া জীবন ছিল তার। জাগতিক লালসার পেছনে ছোটা হাছন রাজা পরবর্তীতে হয়ে উঠেন মরমী কবি, বাউল সাধক। হাছন রাজার সেই বিচিত্র জীবনের গল্প এবার উঠে এলো নাটকের আশ্রয়ে। সংলাপের সঙ্গে সঙ্গীতের বহমান সে নাটকের ‘হাছনজানের রাজা’। শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে হাছন রাজার জীবনীভিত্তিক মঞ্চনাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। শাকুর মজিদের রচনায় ও অনন্ত হিরার নির্দেশনায় প্রযোজনাটি মঞ্চে এনেছে নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর। নাটকের শুরুতেই দেখা যায়, হাছন রাজা পিতা ও মাতা উভয়ের কাছ থেকে পাওয়া বিশাল জমিদারির মালিকানা পেয়ে যান কিশোর বয়সেই। অর্থ, বেহিসাবী সম্পদ আর ক্ষমতার দাপটে বেপোরোয়া জীবন যাপনে অভ্যস্থ হয়ে পড়েন তিনি। জাগতিক লোভ লালসা, ক্ষমতায়ন, জবরদখল করেও তিনি তার প্রতিপত্তি বাড়ানোর কাজে প্রবৃত্ত ছিলেন। কিন্তু এক সময় তার ভেতরের ভ্রান্তি ঘুচে যায়। মধ্য পঞ্চাশে এসে তিনি ভিন্ন এক মানুষে পরিণত হয়ে যান। তার বোধোদয় হয় যে এ জগত সংসারের সব অনাচারের মূলে আছে অতিরিক্ত সম্পদ। কিছু দিনের জন্য অতিথি হয়ে আসা মানুষেরা আসলে মহাশক্তির কাছে একেবারে নশ্বর। তিনি তার সম্পদ জনকল্যাণের জন্য উইল করে দিয়ে কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে হাওড়ে হাওড়ে ভাসতে থাকেন। আর এর মধ্যে খুঁজতে থাকেন সেই মহাপরাক্রমশালী ষ্টাকে। সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজতে খুঁজতে এক সময় আবিষ্কার করেন, তার নিজের মধ্যেই তার বাস। তার যে পিয়ারীকে সবাই হাছনজান বলে জানে, সেই আসলে হাছন রাজা। জগতের মানুষের কাছে যিনি রাজা বলে চিহ্নিত ছিলেন, হাছন রাজার কাছে সে কেউ নয়, বরং পিয়ারী হাছনজানের ভেতরেই প্রকৃত হাছন রাজা বিরাজমান ছিলেন। এর আগে সুনামগঞ্জের আরেক বাউল শাহ আবদুল করিমের জীবনী নিয়ে নাটক ‘মহাজনের নাও’ লিখেছিলেন শাকুর মজিদ। হাছন রাজাকে নিয়ে লেখা নাটক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঐতিহাসিক চরিত্র নিয়ে লেখার সময় নায়ককে সর্বগুণে গুণান্বিত এক মহাপুরুষ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। আমি চেষ্টা করেছি এক সাধারণ পুরুষ হিসেবে উপস্থাপন করে তার ভেতরের মহাপুরুষের বৈশিষ্ট্যগুলো সবার সামনে প্রকাশ করতে। ‘হাছনজানের রাজা’ প্রাঙ্গণেমোরের ১৩তম প্রযোজনা। নাটকে হাছন রাজার চরিত্রে অভিনয় করেছেন রামিজ রাজু। অন্যান্য চরিত্রে রূপ দিয়েছেন আউয়াল রেজা, মাইনুল তাওহীদ, সাগর রায়, শুভেচ্ছা রহমান, সবুক্তগীন শুভ, জুয়েল রানা প্রমুখ। মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন ফয়েজ জহির। সঙ্গীত পরামর্শক শিল্পী সেলিম চৌধুরী ও পরিকল্পনা রামিজ রাজু। আলোক পরামর্শক ঠান্ডু রায়হান। আলোক পরিকল্পনা তৌফিক আজীম এবং পোশাক পরিকল্পনা করেছেন নূনা আফরোজ। আজ শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নাটকটির দ্বিতীয় প্রদর্শনী হবে। কিশোর থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন ॥ শিশু-কিশোরদের সাংস্কৃতিক বিকাশের লক্ষ্যে ১৯৮৩ সালে যাত্রা শুরু করে কিশোর থিয়েটার। ৩৫ বছর ধরে সংগঠনটি রাজধানী ঢাকায় শিশু-কিশোরদের নাট্যচর্চায় বিশেষ ভূমিকা রাখছে। শুক্রবার শিশু একাডেমিতে দলটি ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কীর আয়োজন করে। এ অনুষ্ঠানে কিশোর থিয়েটার পদক দেয়া হয় ছড়াকার আমীরুল ইসলাম ও আসলাম সানীকে। কিশোর থিয়েটারের ৩৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত মিলনমেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। কিশোর থিয়েটারের সভাপতি নিয়াজ আহমেদের সভাপতিত্বে এই আয়োজনটি উদ্বোধন করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। গ্যালরি কায়ায় কামালউদ্দিনের ‘অন্তঃদর্শন’ ॥ শুক্রবার সন্ধ্যায় উত্তরায় গ্যালারি কায়ায় তরুণ শিল্পী কামালউদ্দিনের ‘অন্তঃদর্শন’ শীর্ষক প্রথম চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চিত্রশিল্পী অধ্যাপক জামাল আহমেদ ও চিত্র-সমালোচক মঈনুদ্দিন খালেদ। মানুষের জীবনের বিশেষ এক অবস্থা চিত্রায়িত করেছেন কামালউদ্দিন। বেশির ভাগ ছবিতে তার মানুষের উপস্থিতি বাস্তববাদী শৈলীতে উপস্থাপিত হয়েছে। মাধ্যম তেল রং; তাই বিষয়ের প্রকাশ অপেক্ষাকৃত বেশি স্পষ্ট। দৃষ্টিপাত মাত্রই মানুষী ইমেজ ও অন্য অনুষঙ্গের সঙ্গে দর্শকের একটা আপাত সম্পর্ক তৈরি হয়। কামালউদ্দিনের সাম্প্রতিক আঁকা ৪০টি তেলচিত্র ও জলরঙের কাজ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। আগামী ৪ মে পর্যন্ত চলবে প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×