ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন নয়

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৮ এপ্রিল ২০১৮

গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন নয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গাজীপুর এবং খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সাত দিন আগে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। এছাড়াও এই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা, গাজীপুরের পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার, প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, নির্বাচনে সব প্রার্থীর প্রচারে সমান সুযোগের দাবিসহ মোট ২০ দফা লিখিত প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনে তুলে ধরেছে তারা। তবে কমিশন সচিব সাংবাদিকদের বলেন, সিটি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের চিন্তা ইসির নেই। ইভিএম বন্ধের যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তাও নাকচ করেন তিনি। তবে ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও নির্বাচনে সমান সুযোগ নিশ্চিতে যে দাবি করা হয়েছে তা আইনানুগভাবে বাস্তবায়ন করবে কমিশন উল্লেখ করেন। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে দলের ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এ সময় দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনের সমান সুযোগ নিশ্চিতে ২০ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক শেষে খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ভোটারদের আস্থা ফেরাতে গাজীপুর এবং খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েন জরুরী। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে পারছেন না। নির্বাচনের ওপর ভোটারদের আস্থা নেই। সেনা মোতায়েন হলে এই নির্বাচনে ভোটারদের আস্থা ফিরে আসবে। পরীক্ষামূলকভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিরোধিতার কথা জানিয়ে বলেন, ইভিএম-প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ। যেসব দেশের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে, সেসব দেশেও এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সিটি নির্বাচনে বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সহায়তা দিতে যে সমন্বয় কমিটি গঠন হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বলেন, বিভাগীয় কমিশনার রিটার্নিং কর্মকর্তার তুলনায় সিনিয়র। তিনি তদারকি করতে পারেন, সহায়তা নয়। এজন্য এই কমিটি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমরা এটাকে বাদ দিতে বলেছি। কেননা এটা ইসির ক্ষমতাকে খর্ব করেছে। আইনের কোন ধারায় কোন এখতিয়ারে ইসি এ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। কারণ অতীতে এ ধরনের কমিটি গঠনের উদাহরণ নেই উল্লেখ করেন। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেন, গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা যেন দেশের কোথাও নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে না পারেন। সে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। নির্বাচনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা দেশের যেখানেই নৌকায় ভোট চাইবেন, তার প্রভাব পড়বে সিটি নির্বাচনে। কেননা দলীয় প্রতীকে সিটি নির্বাচন হচ্ছে। এজন্য তাদের প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। বৈঠকে আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনার কথা জানিয়ে বলেন, এ নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে মানুষের মাঝে উৎকণ্ঠা রয়েছে। সবাই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। জাতীয় নির্বাচনের আগে দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, এ দুটি নির্বাচনে তার ইঙ্গিত থাকবে। আমরা বলেছি, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য খালেদা জিয়াকে মুক্ত থাকতে হবে। বিএনপি ও ২০ দল নির্বাচনে অংশ না নিলে তা অংশগ্রহণমূলক হবে না। বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব দাবি পেশ করা হয়েছে তাতে ভোটকেন্দ্রগুলোয় আনসার ও ভিডিপি মোতায়েনে সতর্ক থাকতে ইসির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে নিজ এলাকায় যেন ওই বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব না পান সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনে কমিউনিটি পুলিশের দায়িত্ব না দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে সমান সুযোগ সৃষ্টি করারও দাবি জানিয়েছে দলটি। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর দায়িত্ব পালনে দৃশ্যমান হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সাদা পোশাকে কেউ যেন নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বানও ইসির প্রতি করা হয়েছে। বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ও যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন। সেনাবাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা নেই Ñ ইসি সচিব ॥ এদিকে বিএনপির সঙ্গে বৈঠক শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন পরিকল্পনা নেই ইসির। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত নেই ইসির। ইভিএম ব্যবহার, বিতর্কিত কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারসহ অন্যান্য দাবির বিষয়ে কমিশন পরবর্তী সময়ে বৈঠকে আলোচনা করবে। কী কী দাবি গ্রহণ করা যায়, সে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ইভিএম নিয়ে বিএনপিকে বলা হয়েছে, ইভিএম নিয়ে সন্দেহ থাকলে বিএনপি সেগুলো আগে দেখে যেতে পারে। ইভিএম হ্যাক করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, বিএনপির কিছু প্রস্তাব কমিশন আইনানুগভাবে বাস্তবায়ন করবে। বিশেষ করে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ, পর্যবেক্ষণকদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করাসহ অনেক সুপারিশ ইতিবাচকভাবেই বিবেচনা করা হবে। গাজীপুর এসপি হারুন অর রশীদের নাম উল্লেখ না করে ইসি সচিব বলেন, তার বিষয়ে বৈঠকে তাৎক্ষণিক কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি ইসি। এসব বিষয় আইন-বিধির সঙ্গে যুক্ত। বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নিয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তা নিয়ে কমিশন পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবে। আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠিত হবে গাজীপুর এবং খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। ইতোমধ্যে এই দুই সিটিতে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষে আগামী ২৪ এপ্রিল থেকে প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে পারবেন। এই দুই সিটিতে ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রকিবউদ্দিন ম-ল গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে এবং খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ ইউনুস আলী খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন। নির্বাচনে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রার্থীসহ একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
×