ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

বৈশাখের যত সাজসজ্জা

প্রকাশিত: ০৭:৩৪, ১৩ এপ্রিল ২০১৮

বৈশাখের যত সাজসজ্জা

গত দুই-দশক ধরে এদেশের ফ্যাশন ও বিউটি শিল্পে অনেক পরিবর্তন ও উন্নতি সাধিত হয়েছে। এই সময়ে স্টাইল ও ফ্যাশনের ক্ষেত্রেও তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষরা হয়েছেন অনেক বেশি রূপ-সচেতন ও রুচিসম্পন্ন। বিভিন্ন উৎসবে-অনুষ্ঠানেও এসেছে নতুনত্ব ও বৈচিত্র্য। তবে ফ্যাশন ও বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতে এই জাগরণ ও অগ্রগামিতার জন্য সর্বাগ্রে যার কথা আসে তিনি হলেন বাংলাদেশের অন্যতম বিউটি এক্সপার্ট, পারসোনা’র কর্ণধার কানিজ আলমাস খান। তিনি এই বৈশাখে সাজের ধরন ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানালেন তাঁর পরামর্শ। রঙিন বৈশাখী সাজ ... আমাদের ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী উৎসবটা আসলে অনেক কালারফুল একটি উৎসব। এই উৎসবের সঙ্গে রঙের অনেক সংমিশ্রণ থাকে। আগে আমরা বৈশাখটা রাঙাতাম সাদা আর লালে কিন্তু এখন সাদা-লালের সঙ্গে মোটামুটি আরও অনেক ব্রাইট কালার ব্যবহার হচ্ছে। যার জন্য বৈশাখটা এখন অনেক বেশি রঙিন ও ব্যাপক। যেমন আমরা ফাল্গুনের সময় আসলেই চিন্তা করি শুধুই হলুদ বা বাসন্তী রঙে নিজেকে রাঙাতে আর স্বাধীনতা দিবসে আমরা স্বভাবতই লাল-সবুজ ভাবি। তবে বৈশাখী সময়টা এখন আর সাদা-লালে থেমে নেই; বর্তমানে বাংলা নববর্ষকে সবাই বিভিন্ন রঙে নিজেকে উপস্থাপন করে। সেজন্য সাজগোজ করারও আরও অনেক সুযোগ বেড়েছে। নববর্ষে সাজের অনুষঙ্গ... আমি বৈশাখী সাজের ক্ষেত্রে সবসময় বর্তমান সময়ের স্টাইলিং নিয়ে ভাবতে পছন্দ করি। চিন্তা করি এখন তরুণ-তরুণী বা সব বয়সের মানুষ কি চায়; কি পছন্দ করে। এর সঙ্গে মিলিয়ে কপালে লাল টিপ, হাতভর্তি কাঁচের চুড়ি, মাথার খোঁপায় ফুলের শোভা দেয়াটা আমি বৈশাখী সাজের বেলায় পছন্দ করি। বর্তমান ট্রেন্ড ও রূপচর্চায় বাঙালী সংস্কৃতি... আমরা সবসময় সাজের দিক হতে আমাদের বাংলা সংস্কৃতিকে মাথায় রেখেই বাঙালীর প্রথম দিনকে উদ্যাপন করি। আমাদের দেশ, আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে কোন জিনিস মানায় সেটা নিয়েই ভাবতে হবে; তা না হলে বাংলা প্রথম দিনের উদ্যাপনের এই আনন্দ, উৎসব কিংবা ঐতিহ্যের আলাদা কোন বৈশিষ্ট্যই পরিলক্ষিত হবে না। আমি স্টাইলিং, ফ্যাশন এ্যান্ড বিউটির বেলায় এখনকার ফ্যাশন বা ট্রেন্ডের সঙ্গে বাঙালী হাজার বছরের সংস্কৃতির সংমিশ্রণ ঘটানোকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। বৈশাখে দিনের বেলায় সাজ... যেহেতু দিনের বেলায় মূলত বৈশাখ উদ্যাপনটা হয় সেহেতু সাজগোজের ক্ষেত্রে সবাইকে একটু সতর্ক থাকতে হবে যেন অতিরিক্ত মেকাপ বা সাজ যেন না হয়। কারণ এই সময় প্রচণ্ড গরমে মেকাপ নষ্ট হয়ে চেহারার সৌন্দর্যের সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে। তাই এক্ষেত্রে যারা এই দিন সারাবেলা বাইরে থাকার চিন্তা ভাবনা করবেন যেন মেকাপ ম্যাট হয়, অয়েলি না হয়। অনেক বেশি গিলিটারি বা গ্লসি না হয়। যেহেতু আমরা অনেক বেশি কালারফুল শাড়ি বা পোশাক পরিধান করছি সেক্ষেত্রে মেকাপ যেন বেশি কালারফুল না হয়। তাহলে বৈশাখী সাজ অনেক ব্যালেন্সড মনে হবে এবং দেখতে ভাল লাগবে। মেহেদি রাঙাহাতে বৈশাখ... এই সময়-ফ্যাশন ও রূপ সচেতন নারী, তরুণীরা মেহেদি দিয়ে হাত রাঙিয়ে নিতে পারে নজরকাড়া বৈচিত্র্য সব ডিজাইনে। কারণ কালের বিবর্তনে উৎসবে অনেক রীতিনীতির পরিবর্তন হলেও বৈশাখী সাজের ক্ষেত্রে মেহেদির ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। মেহেদির আলপনা আঁকতে পছন্দ সকল বয়সের নারীদের। তবে মেহেদি লাগাতে হবে উৎসবের আগের দিনে যেন নষ্ট না হয়ে যায়। দৃষ্টিনন্দন হেয়ার কালার ও হেয়ার কাটে সাজুক বৈশাখ... এই সময়ের তরুণ-তরুণীর জন্য নতুনত্ব হিসেবে আমরা মাথায় রাখছি হেয়ার কালার ও হেয়ার কাট। বৈশাখী লুকে পরিবর্তন আনতে এই ফ্যাশন ও স্টাইল অনেক বেশি অভিনব ও নতুনত্ব বলে আমার ধারণা। নিজেকে চেঞ্জ কর হেয়ার কালার ও হেয়ার কাটের মাধ্যমেÑ এটাই এই নববর্ষের আমাদের ট্রেন্ড। কারণ এই দুটি জিনিস মানুষের ইমেজকে অনেক বেশি পরিবর্তন করতে পারে। বৈশাখে বিউটি হাউসের ব্যস্ততা... বর্তমানে রূপ সচেতন তরুণ-তরুণীরা নিজেকে সাজাতে ও সুন্দরভাবে অন্যের নিকট উপস্থাপন করতে ভিড় করছে পার্লারে। ব্যস্ততা আগের থেকে এখন অনেক বেশি। বৈশাখের এক সপ্তাহ আগে থেকেই নিজেকে নতুন রূপে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পরে সকল নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণীরা। সাজের ক্ষেত্রে যে বিষয় গুরুত্বপূর্ণ... বৈশাখ বা যে কোন সময়ে সাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের যতœ। চেহারা বা সাজের বেইসটা ঠিক রেখে সাজতে হবে। অরজিনালি যেন একটা হেলদি স্ক্রিন ও হেয়ার থাকে। মেকাপ বেশি না করে নিজের ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করতে হবে। ড্রেস, অনুষঙ্গ ও সময়কে প্রাধান্য দিয়ে সাজাটা জরুরী। নিজেই সাজুন ঘরে বসেই... বৈশাখে ঘরে বসেই নিজেকে সাজাতে পারেন অতি সহজেই। নিজের প্রতি যতœ তো নিতেই হবে তারপর মুখে পিম্পল থাকলে, রোদে কম যাওয়া, তেল-চবি জাতীয় খাবার কম খাওয়া, দাগ থাকলে সবদা ক্লিন করা, পানি বেশি বেশি করে খাওয়া। প্রথম কথা হল ২ বেলা স্ক্রিন ক্লিনিং, তারপর ঘরে বসেই বিভিন্ন হারবাল রূপ চর্চার উপাদান ব্যবহার করতে পারেন বৈশাখের ১০ দিন আগে থেকেই। বাসায় বসে খাওয়া ঠিক রেখে অয়েলি স্ক্রিন বা ড্রাই স্ক্রিনের জন্য ভিন্ন রকম যতœ নিতে হবে। ত্বকের জন্যে পাকা টমেটোর রস আর চুলের জন্য টক দই ব্যবহার করতে পারেন ঘরে বসেই। ওয়েল মাসাজ করে চুলে ডিমের কুসুম লাগিয়ে ১/২ ঘণ্টার পর চুল ধুয়ে ফেলতে পারেন। এতে চুলের সৌন্দর্য বাড়ে ও চুল সফট হবে। খোঁপা ও আঁখি সাজুক এই বৈশাখে... নারীর খোঁপা কখনও আলতো করে পাঁকানো এলেমেলো হাতখোঁপা আবার কখনও নিপাট নিপুণতায়। প্রাচীন রোম হতে শুরু করে আজ এই খোঁপায় এসেছে নান্দনিকতা। এই বৈশাখে চুলের সাজে পরিবর্তন চোখে পড়বে সবার। খোঁপার ধরনে ও ডিজাইনে ভিন্ন মাত্রা দেখা যাবে। সাজগোজের ক্ষেত্রে চোখকে সাজাতে হবে বৈশাখী সাজে। কন্টারস্ট রঙের ব্যবহার চোখে ব্যবহার করতে হবে। আইশ্যাডো দিয়ে নেত্র সাজাতে হবে হাল্কাভাবে। রাত-দিনের সময়কে প্রাধান্য দিয়ে আর পশাক-অনুষঙ্গের ওপর ভিত্তি করে চোখ সাজাতে হবে। রূপচর্চার বৈশাখে খাবার সমাচার... বৈশাখের এই গরমে নিজের স্ক্রিনকে ঠিক রাখতে প্রচুর তরমুজ, ফলের জুস বা ঠাণ্ডা খাবার খেতে পারেন। এই সময় ত্বকের জন্যে সবজি খেতে পারেন। তেল-মশলা-ঝাল পরিহার করাই শ্রেয়। বিফ বাদ দিয়ে চিকেন বা মাছ খাওয়াই ভাল। ফলমূল প্রচুর খেতে হবে। বৈশাখে রূপচর্চার ঘুম, পানির ব্যবহার ও অন্যান্য... রাতের ঘুমটা যেন ভালভাবে হয়। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে ও৮-৯ গ্লাস পানি খেতে হবে শরীর ও ত্বকের যতেœর জন্যে। রোদে সবসময় রোদচশমা ব্যবহার করতে হবে। রোদে ছাতা ব্যবহার করা ভাল। হাল্কা পোশাক বা সাদা সুতির কাপড় পড়লে এই সময় আরাম ও স্বস্তি পাওয়া যায়।
×