ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রঙে রঙে রাঙানো বৈশাখ

প্রকাশিত: ০৭:৩৩, ১৩ এপ্রিল ২০১৮

রঙে রঙে রাঙানো বৈশাখ

বাঙালীর ইতিহাস ঐতিহ্য হাজার বছরের। নিজস্ব কৃষ্টি কালচারের বর্ণোচ্ছটায় আলোকিত বাঙালীর ঐতিহ্য দেখে বিমোহিত পুরো বিশ্ব। একটি জাতির ঐতিহ্য এতটা সমৃদ্ধশালী হতে পারে তা অনেকেরই মনে বিস্ময় সৃষ্টি করে। বাঙালীর রীতিনীতির ধরনটাই যেন আলাদা। একেকটি উৎসব পার্বণ পালিত হয় একেক আঙ্গিকে। প্রতিটি উৎসবেই প্রাণের আবেগে মিলিত হয় সবাই। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এককাতারে এসে দাঁড়ায় সবাই। বাঙালীর তেমনি একটি চিরায়ত উৎসব পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। পুরো জাতি মেতে ওঠে বৈশাখী উৎসবে। অন্যান্য আট দশটা উৎসবের চেয়ে বৈশাখী উৎসবটা একটু ভিন্ন। ধীরে ধীরে এ উৎসবটি বাঙালীর অন্যতম উৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রাণের উচ্ছ্বাসে, নাড়ির টানে একে অপরের ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে উদযাপন করে পহেলা বৈশাখ। প্রতিটি ঘরে ঘরে চলে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি। বাঙালীর জীবনে বৈশাখ আসে নব জাগরণের বার্র্তা নিয়ে। এ উৎসবে কালবৈশাখীর প্রলয়ঙ্করীর ঝড়ও যেন তুচ্ছ হয়ে যায়। চারদিকে পড়ে যায় সাজসাজ রব। বর্ণিল হয়ে ওঠে উৎসবের আকাশ। জীবন যেন বৈশাখে অন্যমাত্রা খুঁজে পায়। যার প্রভাব পড়ে দৈনন্দিন জীবনে। ঘর গোছানো থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়া পর্যন্ত পাল্টে যায়। বৈশাখ উপলক্ষে নিজেদের মধ্যে যেন বাঙালীয়ানার একটা ছাপ খুঁজে পাওয়া যায়। কদর বেড়ে যায় দেশীয় মোটিভের গৃহস্থালি জিনিসপত্রের। খাবারের তালিকাতেও স্থান করে নেয় দেশীয় খাবার, যেমন নানা রকম শাক, ভর্তা, ভাজি, ভাত, মাছ ও সবজি। আর সাজ পোশাকের কথা তো বলাই বাহুল্য। বাঙালিয়ান সাজ সাজতে ঘরে তো বটেই বিউটি পার্লারগুলোতে পর্যন্ত হিড়িক পড়ে যায়। চুল বাঁধা ও মেহেদি লাগানো, নাকে নোলক, হাতে চুড়ি সবকিছুই যেন পরিপাটি থাকা চাই। এ দিনটিকে উদযাপন করতে চলে নানা আয়োজন। আর এ আয়োজনের বড় একটি অংশ হচ্ছে পোশাক। বৈশাখী উৎসবকে রাঙিয়ে দিতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে ফ্যাশন হাউসগুলো। বরাবরের মতো এবারও দেশীয় বুটিক ক্রেতাদের আকৃষ্ট করবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়েছে ফ্যাশন হাউসগুলো। পসরা সাজিয়েছে পছন্দসই পণ্যের। উপস্থাপন করেছে নতুন নতুন ডিজাইনের শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, শর্ট পাঞ্জাবি, কুর্তাসহ ছোটবড় বিভিন্ন ধরনের পোশাক। এর পাশাপাশি শোভা পাচ্ছে গয়না, গিফট আইটেম, গৃহসজ্জা সামগ্রীসহ নানা রকম আইটেম। যা বৈশাখী আয়োজনে এনেছে ভিন্ন মাত্রা। একেক ফ্যাশন একেক থিম নিয়ে সেজেছে এবার। কেউ ট্রেডিশনাল মোটিভ, কেউ বা আবহমান বাংলার চিরায়ত রূপ, কিংবা জেনারেশন চয়েস যেভাবেই বলা হোক না কেন সবারই উদ্দেশ্য এক। প্রাণবন্ত করে তোলা বৈশাখী উৎসব। রং হিসেবে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে সাদা লাল, অরেঞ্জ, অফ হোয়াইট, নীল এবং মেরুন। কাপড় হিসেবে সুতি, মসলিন, এন্ডি কটন, কোটা, তাঁত এবং এন্ডি সিল্ককে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ডিজাইনেও থাকছে চমক। কারচুপি, এম্ব্রয়ডারি, ব্লক, স্প্রে, ফোরাল এবং জিওমেট্রিক্যাল ডিজাইন। নববর্ষের শাড়ি এ বছরে শাড়ির বৈচিত্রপূর্ণ ডিজাইনের একটি বড় আয়োজন উপস্থাপনা করেছে। বিভিন্ন ডিজাইনে বোনা তাঁতের শাড়িতে থাকছে বুননরীতি, মোটিফের ব্যবহার উপস্থাপনা, কালার বিন্যাস, ভ্যালু অডিশনে নানা মিডিয়ার ব্যবহার এ নিপুনতা। এবারের বৈশাখের কাজে বিষয় হিসেবে নানারকম ভিন্নতা আনা হয়েছে। পটচিত্র, ট্রাইবাল মোটিফ, গ্রিক আর্চ মোটিফ, ফ্লাওয়ার মোটিফ ইত্যাদি বিষয় রয়েছে। উইভিং ডিজাইনে বোনা তাঁতের শাড়িতে মার্জিত কালার ও উন্নত ফিনিশিং এ ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্ট, এল্পিক, হাজার বুটির কাজ করা হয়েছে। এছাড়া কিছু শাড়িতে এম্ব্রয়ডারি কাজ দেখা যাবে। সালোয়ার কামিজ নরসিংদী তাঁতে বয়নকৃত সুতি টুটন স্ট্রাইপ, টুইল, গুঁড়িচেক, নাচনাকাঠি, কাঁথা, ডবি ও জ্যাকার্ড স্টাইলে ডিজাইন করা নিজস্ব উইভিং ডিজাইনের কাপড় এবং ইয়ার্ন ডায়েড ও ন্যাচারাল এন্ডি ও জয়সিল্কের কম্বিনেশনে সালোয়ার কামিজের বৈশাখী আয়োজন থাকছে। সালোয়ার কামিজের কালেকশনে রং হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে কোড়া, সাদা, লাল, মেরুন, ইটলাল, অরেঞ্জ, ম্যাজেন্টার নানা কম্বিনেশন। প্রধান উজ্জ্বল রং ব্যবহারের পোশাকগুলোকে উৎসবমুখী করা হয়েছে। প্রচলিত মাধ্যমের নানা মাত্রিক ব্যবহার এ পোশাকগুলো নববর্ষের উৎসবের আমেজকে ফুটিয়ে তুলেছে রং, কাট ও উপস্থাপনার বৈচিত্র্যে। সালোয়ার কামিজগুলো গরমে পরবার উপযোগী, এলিগেন্ট এবং উৎসবমুখী। মেয়েদের ফতুয়া-টপস বৈশাখী আয়োজনে উপস্থাপিত ফতুয়া ও টপসে দেখা যাবে কাটের বৈচিত্র্য, ফেব্রিক্স এ নিজস্ব উইভিং ডিজাইন, প্লেন এ্যান্ড সিম্পলের পাশাপাশি কাটিং এ স্মার্ট লুক। ভ্যালু এ্যাডিশন ও একসেসরিজ এ চমৎকারিত্ব। টপস ও ফতুয়ার ডিজাইনে হাতের কাজে শেডওয়ার্ক, কাঁথা কাজ, মানিকগঞ্জের ভরাট, এপলিকের কাজ করা হয়েছে। সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রঙে সিকোয়েন্স, বিডস ও হাজার বুটি করা হয়েছে। শিশুদের জন্য আয়োজন শিশুদের জন্য এই নববর্ষে রয়েছে বিশেষ আয়োজন। ২ বছর থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য থাকছে প্রায় ২৫টি নতুন ডিজাইনের পোশাক। শিশুদের সালোয়ার কামিজ, মেয়েদের ফ্রক, স্কার্ট-টপস ও ফতুয়া থাকছে বিভিন্ন দামে, লাল, কমলা, হলুদসহ উজ্জ্বল নানা রঙে। এ পোশাকগুলো কটবেসডের পাশাপাশি এম্ব্রয়ডারি, সিকোয়েন্স, হাতের কাজ, প্রিন্টেড থাকছে। ছেলেদের থাকছে বৈশাখী ফতুয়া-প্যান্ট, শাট-প্যান্ট, টিশার্ট ও পাঞ্জাবির কালেকশন। নববর্ষের পাঞ্জাবি নববর্ষে পাঞ্জাবির ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ফ্যাশন হাউসগুলো। কাট, ফিনিসিং একসেসরিজের ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ যতœ নিয়ে পাঞ্জাবির ডিজাইন করা হয়েছে। সুতি এন্ডি ও সিল্কে হাতের কাজ ও এম্ব্রয়ডারি কাজের পাঞ্জাবি থাকছে সাদা, মেরুন, ব্রিকরেড, কালোসহ নানা রঙে। প্রধানত জ্যামিতিক নকশায় কাঁথা, সাটিন স্টিচ এ অলঙ্কৃত এই কালেকশনটি সব বয়সী ক্রেতাকেই সন্তুষ্ট করতে পারবে। শর্ট পাঞ্জাবির বিশেষ অয়োজন থাকছে তরুণ মনের ক্রেতাদের জন্য। কাট এ নতুনত্ব, উপস্থাপনায় বৈচিত্র্য, রঙের বিন্যাসে চমৎকারিত্ব শর্ট পাঞ্জাতিতে দেখা যাবে। লেন্থ এ কিছুটা খাটো, ভ্যালু এ্যাডিশনে পরিমিতি বোধ, কলার এ পরীক্ষা-নিরীক্ষা থাকছে শার্ট পাঞ্জাবিতে। স্ক্রিনপ্রিন্ট, হাতের কাজ, ভিন্ন লেআউটে প্যাচ ওয়ার্ক রে?িন, মেটাল ইত্যাদি। এছাড়াও বুনন ও নকশায় শর্ট পাঞ্জাবিতে ব্যবহৃত উপকরণে থাকছে এ?ক্লুসিভিটি। ছেলেদের ফতুয়া ও শার্ট তরুণ মনের মানুষের কথা চিন্তা করে ডিজাইন করা ফতুয়ার কালেকশনটিতে ফেব্রিকের নানা ভ্যারিয়েশন থাকছে। স্ট্রাইপ, চেক, সলিড ও ডবি বুননের ফতুয়াগুলো কাট ও ফিনিশ এ উন্নত। কাট বেসড ফতুয়ার পাশাপাশি ভ্যালু এ্যাডিশন হিসেবে এসেছে হাতের কাজ, এম্ব্রযডারি, প্রিন্ট, ইরি কাজসহ নানা মিডিয়া। বাঙালীর জন্য বৈশাখ এক মহামিলন মেলা। আর এ উৎসবকে রাঙিয়ে তুলতে যে যার মতো সাজিয়ে নেন আপন ভুবন। যে ভুবনে হারিয়ে যাওয়া যায় নিজের মতো করে। শাড়ি ও পাঞ্জাবির মডেল : জেসমিন মৌসুমী ও সেলিম ছবি : তাহসিন কিবরিয়া, পোশাক : আরশি সালোয়ার-কামিজ : দেশীয়ার শাড়ি, কামিজ ও ছোটদের পোশাক : নিপুণ
×