ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

১০ মিটার এয়ার রাইফেলে শেষ শটে স্বর্ণ জয়ের স্বপ্নভঙ্গ হওয়ায় দুঃখপ্রকাশ কৃতী এই শূটারের, চার বছর আগে গ্লাসগো গেমসের জেতা পদক অক্ষুন্ন রেখেছেন, পাচ্ছেন ১২ লাখ টাকার অর্থ পুরস্কার, প্রশংসার স্রোতে ভাসছেন তরুণ এই শূটার, চলমান গেমসে এটাই প্রথম পদক বাংলাদেশের, স

রৌপ্য জিতে লাল-সবুজ পতাকা ওড়ালেন বাকি

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ৯ এপ্রিল ২০১৮

রৌপ্য জিতে লাল-সবুজ পতাকা ওড়ালেন বাকি

জাহিদুল আলম জয় ॥ নামটা তার বাকি, পুরো নাম আবদুল্লাহ হেল বাকি। তবে কাজকর্মে কোন ফাঁকি নেই। যা দেন নগদে। শূটিং থেকে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে তিনি ধারাবাহিকভাবে দিয়ে চলেছেন তাক লাগানো সাফল্য। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা মাঝে মধ্যেই পত পত করে ওড়াচ্ছেন। আরও একবার স্মরণীয় এ কাজটি করেছেন ২৮ বছর বয়সী এই শূটার। রবিবার অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্টে চলমান ২১তম কমনওয়েলথ গেমসে বাংলাদেশকে প্রথম পদক উপহার দিয়েছেন বাকি। শূটিংয়ে পুরুষদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে ২৪৪.৭ স্কোর করে রৌপ্য জিতেছেন তিনি। চার বছর আগে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ গেমসের ২০তম আসরেও রৌপ্য জিতেছিলেন বাংলাদেশের এই তারকা। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে ৬১৬.০ স্কোর করে ফাইনালে ওঠা বাকী শুরু থেকেই দারুণ পারফর্মেন্স প্রদর্শন করেন। ২৪ রাউন্ডের খেলায় বেশ কয়েকবার শীর্ষে উঠে আসেন। ১৬তম রাউন্ডে থেকে স্বর্ণের জন্য তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার ডেইন স্যাম্পসন ও ভারতের রাভি কুমারের সঙ্গে। এর মধ্যে ২১তম রাউন্ড শেষে ২০৪.৬ পয়েন্ট নিয়ে ব্রোঞ্জ নিশ্চিত করে ছিটকে যান ভারতের কুমার। শেষ রাউন্ডে স্যাম্পসনের বাজে শটে বাকির সোনা জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল জয়। স্বর্ণ জয়ের জন্য ১০.১ স্কেরের প্রয়োজন হলেও ৯.৭ স্কোর করতে সমর্থ হন বাকি। ফলে গেমস রেকর্ড ২৪৫ স্কোর নিয়ে স্বর্ণ জেতেন অস্ট্রেলিয়ার স্যাম্পসন। আর ২৪৪.৭ স্কোর নিয়ে ২০১৪ কমনওয়েলথ গেমসের মতো এবারও রৌপ্য জিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় বাংলার বাকিকে। এই নিয়ে কমনওয়েলথ গেমসের ইতিহাসে সবমিলিয়ে সপ্তম পদক জিতেছে বাংলাদেশ। আগের ছয়টি পদকও শূটিং থেকে এসেছে। যার মধ্যে স্বর্ণপদক দু’টি। ১৯৯০ সালে অকল্যান্ডের আসরে প্রথমবারের মতো স্বর্ণপদক জিতেছিল বাংলাদেশ। আতিকুর রহমান ও আব্দুস সাত্তার নিনির হাত ধরে এসেছিল ১০ মিটার এয়ার পিস্তলের দলগত সেরার পদকটি। এরপর ২০০২ সালে ম্যানচেস্টারের আসর থেকে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় স্বর্ণপদক এনে দিয়েছিলেন আসিফ হোসেন খান। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের সেরা হয়েছিলেন তিনি। গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পতাকা বহন করা বাকি কোয়ালিফিকেশনে ৬১৬ স্কোর করে ষষ্ঠ হয়ে ফাইনাল রাউন্ডে উঠেছিলেন। বাংলাদেশের আরেক প্রতিযোগী মোঃ রাব্বি হাসান মুন্না ৬০৭.৬ স্কোর করে কোয়ালিফিকেশনে ১৪তম হন। একইদিনে হওয়া মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে বাংলাদেশের কোন প্রতিযোগী ফাইনাল রাউন্ডে উঠতে পারেননি। কোয়ালিফিকেশনে আরদিনা ফেরদৌস আঁখি নবম ও আরমিন আশা ১৭তম হন। ফাইনালে উঠে প্রথম আট প্রতিযোগী। ফাইনালের দ্বিতীয় পর্যায় এলিমিনেশন পর্বে প্রথম পাঁচ রাউন্ডে স্বর্ণজয়ী স্যাম্পসনের চেয়ে মোট স্কোরে এগিয়ে ছিলেন বাকি। ষষ্ঠ রাউন্ডের দুই শটে ৯.৫ ও ১০.৩ স্কোর করে স্যাম্পসনের (১০.৪, ১০.০) চেয়ে দশমিক ৫ পয়েন্ট পিছিয়ে পড়েন তিনি। শেষ রাউন্ডের দুই শটে (১০.৪, ৯.৭) ব্যবধান আর ঘোচাতে পারেননি বাকি। খেলা শেষে বাকি বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। আমি আমার সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাই। শেষ শটের জন্য দুঃখিত। শেষ শট প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, শুধু চিন্তা করেছি পারফেক্ট শটটা করার। যদিও ওর লাস্ট শটটা আমি দেখে ফেলেছিলাম ভুলবশত। সেটাই আমার মাথায় ঘুরছিল। তবুও চেষ্টা করেছিলাম। দেশকে পদক এনে দিতে পেরেই খুশি বাকি। বলেন, জানতাম সবাই আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি স্বর্ণের দিকে নজর দেইনি। আমার টার্গেট ছিল পদক। সেটা পেয়েছি বলে ভালই লাগছে। স্বীকার করলেন আরেকটু মনোযোগী হলে হয়তো স্বর্ণও পেতে পারতাম। হুট করে আগেরদিন ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে অংশ নেয়ার কথা জানেন বাকি। তাতে তিনি বিচলিত হন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাকে ঢাকাতেই ধারণা দেয়া হয়েছিল এমন কিছু হতে পারে। তাই আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম। যদিও আমার ফোকাস ছিল ৫০ মিটার রাইফেলে। যখন জানলাম আমি ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে অংশ নেব। তখন কিছু সময় এ জন্য অনুশীলন করি। শেষ পর্যন্ত সাফল্য এসেছেÑ এটাই বড় কথা। বাকির কাছে গ্লাসগো থেকে গোল্ড কোস্টের রৌপ্য অর্জন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বলেন, গ্লাসগো গেমসে আমার সঙ্গে অবিনভ বিন্দ্রার তফাত অনেক ছিল। কিন্তু এবার খুবই কাছে ছিলাম। আরেকটু হলে স্বর্ণও পেতে পারতাম। দুর্দান্ত সাফল্যে দেশের মুখ উজ্জ্বল করলেও এই ইভেন্টে খেলারই কথা ছিল না বাকির। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১০ মিটারে আমার খেলার কথা ছিল না। অনেক কষ্ট করার পর পারফর্মেন্স করার পর নির্বাচিত হয়েছি। সবকিছু মিলিয়ে চাপ ছিল। এরপরও চেষ্টা করেছিলাম নিজের সেরাটা দিতে। এখানে অনেক শক্তিশালী প্রতিযোগী ছিল। অস্ট্রেলিয়ানরা শক্তিশালী, ব্রিটিশরাও। ভারত তো আছেই। এর ওপর গতবার আমি রৌপ্য জিতেছিলাম। বাকির দারুণ সাফল্যে উচ্ছ্বাসে ভাসছে বাংলাদেশ। সবার প্রশংসার স্রোতে ভাসছেন নিপাট ভদ্রলোক খ্যাত এই শূটার। স্বাভাবিকভাবেই বাকির মতো মহাখুশি বাংলাদেশ শূটিং স্পোর্ট ফেডারেশন। ফেডারেশনের মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ অপু বলেন, কোচ বাকিকে নিয়ে বাজি খেলেছিলেন। তার সেই গেম প্লান সফল হয়েছে। পদক জয়ের পর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাকি শূটিং ফেডারেশনের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকার অর্থ পুরস্কার পাবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) পক্ষ থেকে আরও ৫ লাখ টাকার অর্থ পুরস্কার পাবেন। সবমিলিয়ে ১২ লাখ টাকার অর্থ পুরস্কার পাচ্ছেন তিনি। এদিকে গেমসের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে বাংলাদেশের দ্রুততম মানব-মানবী মেজবাহ আহমেদ ও শিরিন আক্তার কেউই নিজেদের সেরা টাইমিং ছাপিয়ে যেতে পারেননি। ছেলেদের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ১০.৯৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে দৌড় শেষ করেন মেজবাহ। ছয় নম্বর হিটে সাত প্রতিযোগীর মধ্যে পঞ্চম এবং সবমিলিয়ে হিটের ৬৫ প্রতিযোগীর মধ্যে ৫৩তম হন তিনি। আর মেয়েদের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ১২.৭২ সেকেন্ড সময় নেন শিরিন। ১ নম্বর হিটে সাত প্রতিযোগীর মধ্যে ষষ্ঠ ও সবমিলিয়ে ৪১ জনের মধ্যে ৩৮তম হয়েছেন তিনি।
×