ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লালদীঘিতে মহাসমাবেশ

আগামীতে জাতীয় পার্টিই সরকার গঠন করবে ॥ এরশাদ

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ৮ এপ্রিল ২০১৮

আগামীতে জাতীয় পার্টিই সরকার গঠন করবে ॥ এরশাদ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। গত ২৭ বছরে দু’দলের দুঃশাসনে জনগণের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তারা বাঁচতে চায়। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জোটকে ভোট দেবে। আমরা দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করব। চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে শনিবার বিকেলে আয়োজিত সম্মিলিত জাতীয় জোটের মহাসমাবেশে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি কোন দিকে না থেকে আলাদাভাবে নির্বাচনের ইচ্ছা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ভোট এখন আগের মতো নাই। কেন্দ্র দখল করে সিল মারা হয়। আমরা তো সিল মারতে পারব না। সিল মেরে যাতে ভোট নিতে না পারে সে জন্য শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে আমাদের লোক থাকতে হবে। চট্টগ্রামে এসে মোমবাতির (ইসলামী ফ্রন্টের নির্বাচনী প্রতীক) মিছিল দেখে সাহস সঞ্চয় করেছি। জোটবদ্ধভাবে আগামী নির্বাচন করে সরকার গঠন করব। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, আমাকে বলা হয় স্বৈরাচার। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থাকে স্বৈরাচারী বলেছে। দুর্নীতিতে দেশ পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দুই সরকারের সময়ে। সাতাশ বছরে সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণসহ নিজ আমলের উন্নয়ন কর্মকা-ের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি ৪৬০টি উপজেলা করেছি। এরশাদ সাহেব উপজেলা করেছে তাই বাদ দিতে হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেননি। আমরা প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা করতে চাই। দেশে ৭টি প্রদেশ হবে। একজন মানুষ ১৬ কোটি মানুষকে শাসন করবে তা হতে পারে না। পৃথিবীর কোথাও হয় না। শিক্ষা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষা বলতে এখন কিছু নেই। জিপিএ-৫ পাচ্ছে, কিন্তু নিজের নাম ভাল করে লিখতে পারে না। আগে পাস করা কঠিন ছিল। এখন ফেল করা কঠিন। শিক্ষামন্ত্রী নিজেই বলেছেন, ঘুষ খান, তবে একটু কম করে খান। নিজের আমলে সুশাসন ছিল বলে দাবি করে তিনি বলেন, আমার সময়ে দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়নি। ১০ ট্রাক অস্ত্র আসেনি। আগামী নির্বাচনে জনগণ জাতীয় পার্টিকেই সরকার গঠনের দায়িত্ব দেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরাই সরকার গঠন করব। মৃত্যুর আগে দেখে যেতে চাই দেশ থেকে দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। তিনি ভোট কেন্দ্রে সিলমারা ঠেকাতে শক্তি সঞ্চয় করার জন্য সম্মিলিত জাতীয় জোটের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের প্রসঙ্গ এনে এরশাদ বলেন, আপনারা অনেক ফ্লাইওবার করেছেন। কিন্তু নির্বাচনের আগে বলেছিলেন ১০ টাকায় চাল খাওয়াবেন, ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন। আজ চালের কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। রিক্সাচালক, শ্রমিক, কৃষক চাল কিনতে পারে না। দেশে ৪ কোটি ৮৬ লাখ যুবক বেকার। চাকরি না পেয়ে তারা মাদক ইয়াবাসহ বিভিন্ন ব্যবসা এবং অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। আগে শুনেছি ব্যাংকে এত টাকা যে, নেয়ার লোক নেই। কিন্তু এখন ব্যাংকে টাকা নেই। যারা ব্যাংকের টাকা মেরে দিচ্ছে তাদের বিচার হয় না। কিন্তু গরিব মানুষ ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে না পারলে তাদের ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করা হয়। শেয়ার বাজার ধ্বংস হয়ে গেছে। উন্নয়নের মহাসড়ক নয়, দেশ এখন দুর্নীতির মহাসড়কে। দুর্নীতিতে হাবুডুবু অবস্থা। এর থেকে জনগণকে উদ্ধার করতে হবে। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এমএ মান্নানের সভাপতিত্বে লালদীঘি মাঠের মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন বাবলু, ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব এমএ মতিন, যুগ্ম মহাসচিব স উ ম আবদুস সামাদ, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, সুনীল শুভ রায় প্রমুখ।
×