ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার অসুস্থতা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনীতি

প্রকাশিত: ০৫:০১, ১ এপ্রিল ২০১৮

খালেদার অসুস্থতা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনীতি

শরীফুল ইসলাম ॥ কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। বিএনপি বলছে তাকে জামিনে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি মিথ্যাচার করছে। তবে সিভিল সার্জন কারাগারে দেখে আসার পর বলেছেন খালেদা জিয়া সুস্থ আছেন। মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে প্রয়োজনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। এ পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে জনমনে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। খালেদা জিয়া অসুস্থ এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই জনমনে নানান প্রশ্ন দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি এবং সরকারের পক্ষ থেকেও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেয়া হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও গুঞ্জন ওঠে । এ জন্য সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু বিষয়ে সরকার ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতার চেষ্টার কথাও বাতাসে ভেসে আসে। তবে শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়া বিদেশে যাবেন কিনা বা সরকারের পক্ষ থেকে তাকে যেতে দেয়া হবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই তিনি অসুস্থ উল্লেখ করে বিএনপির পক্ষ থেকে মুক্তি দাবি করা হয়। পরে অবশ্য বিভিন্ন সময় খালেদা জিয়ার আত্মীয়স্বজন, আইনজীবী ও দলের সিনিয়র নেতারা কারাগারে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করার পর তিনি আপাতত ভাল আছেন বলেই সাংবাদিকদের কাছে জানান। কিন্তু ২৮ মার্চ খালেদা জিয়ার মামলার শুনানির দিনে তাক আদালতে উপস্থিত করার কথা থাকলেও পরে কারাকর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয় অসুস্থতার কারণে তাকে আদালতে নেয়া হয়নি। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুসারে ২৯ মার্চ বিকেলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করতে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশে রওনা দিলে সেখানে পৌঁছার আগেই কারাকর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানান হয় খালেদা জিয়া অসুস্থ। তিনি কি রকম অসুস্থতা কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে না জানানোর কারণে বিএনপির পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তবে ৩০ মার্চ কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত শেষে তার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান ও ছোট মেয়ে জাহিয়া রহমান অসুস্থতার কথা কাউকে বলেননি। কেউ ধারণা করছেন, লন্ডন থেকে আসার পরদিনই খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোকোর স্ত্রী ও মেয়ের সাক্ষাত খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে। ৩০ মার্চ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানান। তার এ দাবির পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রয়োজনে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে বলে আস্বস্ত করেন। আর এর পর থেকেই দেশব্যাপী শুরু হয়ে যায় গুঞ্জন; খালেদা জিয়া কি সত্যিই উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন। বিদেশে গেলে কিভাবে যাচ্ছেন, জামিন নিয়ে, না প্যারোলে মুক্তি পেয়ে। আর চিকিৎসার জন্য লন্ডন না অন্য দেশে যাচ্ছেন। আর লন্ডনে গেলে তিনি কি চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরবেন, না সেখানেই থেকে যাবেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন ইস্যুতে সমঝোতার ভিত্তিতে তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন বলেও কোন কোন মহল থেকে বলা হয়। এদিকে কারাবন্দী খালেদা জিয়ার অসুস্থতা এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য তার বিদেশে চলে যাওয়ার গুঞ্জনের বিষয়টি বিএনপি নেতাকর্মীদেরও ভাবিয়ে তুলেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে এখন বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক জল্পনাকল্পনা চলছে। একে অপরের সঙ্গে আলাপকালে এ বিষয়টি নিয়ে জানতে চান। দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও এ বিষয়ে নেতাকর্মীদের সঠিক তথ্য দিতে পারছেন না। তবে দলের কোন কোন নেতাকর্মীর মধ্যে একটি প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। আর তা হলো আসলেই কি খালেদা জিয়া অসুস্থ? তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছেন না কেন? তবে বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীই মনে করছেন, বয়োবৃদ্ধ জনিত খালেদা জিয়ার শারীরিক সমস্যা নতুন কিছু নয়। কারাগারে পাঠানোর সময়ও সেই অসুস্থতা তার ছিল, এখনও হয়ত আছে। তবে খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করা হলে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি হওয়া কিংবা তিনি এ সময় সাংবাদিকদের সামনে কোন বক্তব্য দিতে পারেন এমন আশঙ্কা থেকে হয়ত অসুস্থতার কথা বলে তাকে আদালতে না আনা হতে পারে; যা সরকারের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ে এ সিদ্ধান্ত হয়ে থাকতে পারে। জানা যায়, বিএনপিকে রাজধানীতে সমাবেশ করতে অনুমতি না দেয়া এবং হঠাৎ করে কারাবন্দী খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবর প্রকাশ, বিএনপি মহাসচিবকে সাক্ষাত করতে না দেয়াও খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দেখতে সিভিল সার্জনকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীরা উদ্বিগ্ন হয়। তাই বিএনপি বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছে না। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আসলে কী, তা বিএনপির কাছে এখনও পরিষ্কার নয়। বাতাসে ভেসে আসা নানা কথাবার্তায় তাদের মনে নানান সন্দেহ হচ্ছে। তাই ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দিয়ে কারাগারে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং তাকে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে বিএনপি। আর সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, প্রয়োজন অনুযায়ী খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিলে তাকে বিদেশে পাঠানো হবে। উল্লেখ্য, কয়েক দিন ধরে গুঞ্জন ছড়ায় কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অসুস্থ। শারীরিক অবস্থা এমন পর্যায়ে যে তাকে কারাগার থেকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার শুনানির দিন বিচারিক আদালতে হাজির করা যায়নি। পরদিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাক্ষাত স্থগিত করা হয়। এরপর কথা ছড়ায়, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হতে পারে। কেউ বলে লন্ডন, কেউ বলে সৌদি আরবে নিয়ে তার চিকিৎসা করা হবে। তবে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারবেন কিনা এ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অবশ্য খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে বিভিন্ন সময় লন্ডন ও সৌদি আরবে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। সূত্র মতে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দেখার জন্য সরকার সিভিল সার্জনকে বৃহস্পতিবার কারাগারে পাঠিয়েছিল। সিভিল সার্জন কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানোর পরামর্শ দেননি। তিনি কারাকর্তৃপক্ষকে বলেছেন, খালেদা জিয়ার আগের যেসব সমস্যা ছিল, সেগুলো আছে। নতুন করে কোন সমস্যা তৈরি হয়নি। কারাচিকিৎসক মাহমুদুল হাসান শুক্রবার রাতে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, খালেদা জিয়া ভাল আছেন। ওনার ব্লাড প্রেশার স্বাভাবিক আছে। ব্লাড সুগারও স্বাভাবিক আছে। ওনার হাঁটুতে সমস্যা ছিল, যে কারণে হাঁটতে কষ্ট হয়। এই সমস্যা আগে থেকেই ছিল। এ ছাড়া আর কোন সমস্যা নেই। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সরকার বলছে খালেদা জিয়া অসুস্থ, আবার কারাকর্তৃপক্ষ অসুস্থ বললেও তেমন বেশি অসুস্থ নন বলা নিয়ে ধূ¤্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে খালেদা জিয়াকে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসার সুযোগ দিতে। তবে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ নেই বলে জানা গেছে। তবে কারাকর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে খালেদা জিয়াকে কোন হাসপাতালে ভর্র্তি করাতে পারবেন। এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের সদস্য ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কারাবিধি অনুযায়ী বিদেশ পাঠানোর সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া ও তার স্বজনদের মতামতের প্রয়োজন হবে। কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর আলোচনা আওয়ামী লীগের মধ্যেও রয়েছে। চিকিৎসার জন্য তিনি বিদেশ যেতে চাইলে ক্ষমতাসীন দলটির কোন আপত্তি থাকবে না। বরং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা তারা করবে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা মনে করেন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানো দল ও সরকার উভয়ের জন্য স্বস্তির হবে। এ কারণে বিএনপি মহাসচিব খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর দাবি জানানোর সঙ্গে সঙ্গে তা লুফে নিয়েছে সরকারী দল। খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে দাবি জানানোর পর বৃহস্পতিবারই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ, এ কথা বিএনপির মহাসচিব জোর গলায় বলছেন। এটা যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে তার যে ধরনের অসুস্থতা, সে অনুযায়ী সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। সরকার অমানবিক নয়। এ দেশে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। নিয়ম অনুযায়ী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানো হবে। এদিকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নিয়ে দলের ভেতরে সমালোচনা হচ্ছে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে। এক সময় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এমন এক নেতা বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, খালেদা জিয়া ইস্যুতে সরকার যে গোলটা করতে চাচ্ছে সেই গোলটির জন্য বল ডি বক্সে ঠেলে দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এখন সরকারের স্ট্রাইকাররা টোকা মারলে বলটা গোল হয়ে যাবে। এ ছাড়া শুক্রবার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সংবাদ সম্মেলনের পর দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন। এতে বলা হয় মির্জা ফখরুল খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে বলেননি। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়াকে জামিন দিলে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পরামর্শে তিনি দেশে কিংবা বিদেশে যেখানে ভাল মনে করবেন সেখানেই চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। বিএনপিসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর একটি চিন্তা সরকারের মধ্যে রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারী দল মনে করে, খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে বিদেশ পাঠানো তাদের জন্য নিরাপদ হবে। এটা সম্ভব হলে খালেদা জিয়া জেলে রয়েছেন বলে বিএনপি জোরালোভাবে আর আন্দোলনের দাবি তুলতে পারবে না। এছাড়া, তাকে বাদ দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার দাবিও দুর্বল হয়ে পড়বে। এতে বিএনপির তরফ থেকে রাজপথে আন্দোলনের চাপও কমে আসবে। সরকারও ঝামেলা মুক্ত হবে, জনগণের দৃষ্টিও ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হবে। আরেক বিএনপি সূত্র মতে, বিএনপি চেয়ারপার্সনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে দলের মহাসচিবের দাবিকে সরকারের তরফে নেয়া উদ্যোগেরই ফসল বলে মনে করা হচ্ছে। এই সূত্র মতে, প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য কয়েক সপ্তাহ আগেই নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগারে থাকা খালেদা জিয়ার কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। তবে এ প্রস্তাব সম্পর্কে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোন সাড়া আসেনি। তবে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি সামনে আসা এবং শুক্রবার বিএনপি মহাসচিব সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিদেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দাবি করায় এটি এখন টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। তবে বিএনপি মহাসচিবের দাবির পর খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার ইঙ্গিত বলে মনে সরকার। শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কারাগারে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টিকে আমরা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছি না। আমরা তার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠিত। সেজন্য অতিদ্রুত জামিনে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, কারাগারে যে পরিবেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে, তা তার প্রাপ্য নয়। তাতে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে বলেই আমরা আশঙ্কা করছি। তার যে খাবারটা দেয়া হয় সেটা সঠিকভাবে পরীক্ষা করা হয় কিনা আমরা বলতে পারি না। সরকারের উচিত বিষয়টা খোলাসা করা। তিনি বলেন, এই সরকারের অধীনে খালেদা জিয়া নিরাপদ নন। তার কারারুদ্ধ অবস্থায় অসুস্থ হওয়াটাকে কোনমতেই আমরা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারি না। মূলত খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে মির্জা ফখরুলের এ বক্তব্যের পরই এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। চলতে থাকে জল্পনাকল্পনা। বিএনপির পক্ষ থেকে আশঙ্কা করা হয়, অসুস্থতার আড়ালে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে ‘মাইনাস ওয়ান’ ফর্মুলা বাস্তবায়নের চেষ্টা হয় কিনা। উদ্বেগ শুধু বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যেই নয়, অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যের পর এ নিয়ে চিন্তিত হয়। সাধারণ মানুষও এ বিষয়টি নিয়ে কৌতূহলী হয়। বিএনপি নেতা, কারাকর্তৃপক্ষ ও সরকারী দলের নেতাসহ বিভিন্নজন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও চিকিৎসা নিয়ে একেকজন একেক ধরনের বক্তব্য দেয়ায় বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা বাড়তে থাকে। এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমরা পুরোপুরি অন্ধকারে রয়েছি। তার প্রকৃত অবস্থা কিছুই জানি না। তাকে অসুস্থতার কথা বলে আদালতে হাজির করা হয়নি। আমাদের দলের নেতাদেরও সাক্ষাত করতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি তার আইনজীবী বা ব্যক্তিগত চিকিৎসকদেরও জানানো হচ্ছে না তিনি কি ধরনের অসুস্থ। এ নিয়ে চারদিকে নানান কথাবার্তা হচ্ছে। সার্বিক বিষয় নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
×