ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপিকে আমু

বর্তমান সরকারের আমলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না তা প্রমাণ করুন

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৯ মার্চ ২০১৮

বর্তমান সরকারের আমলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না তা প্রমাণ করুন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপিকে উদ্দেশে করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, বর্তমান সরকারের আমলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না তা প্রমাণ করুন। বিএনপি যদি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারত সাংবিধানিক ভিত্তিতে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না, তাহলে আজকে তাদের কথায় যুক্তি থাকত। আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলাম না, আমি প্রমাণ করলাম না, তাহলে আমি কীভাবে নির্বাচনের বিরোধিতা করি? বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত ‘সতীর্থ স্বজন’ আয়োজিত মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি করেছিলাম তখন জিয়াউর রহমান এবং এইচএম এরশাদ প্রমাণ করেছিল তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। খালেদা জিয়ার সময় যখন আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি করেছিলাম তখন তিনিও প্রমাণ করেছিলেন তার অধীনে কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। শিল্পমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, এমনকি কোন ঘটনা কি ঘটেছে যে আমাদের এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না? বরং আমরা দেখলাম তার উল্টো চিত্র। সিটি কপেআরেশন নির্বাচনে সবগুলোতে তারা (বিএনপি) জয় লাভ করেছিল। তারপরও কেন তারা জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করল না? এবারও তারা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে এবং জয়লাভ করেছে দু-একটাতে। তাহলে কেন তারা নির্বাচনে আসবে না?’ তিনি বলেন, গণতন্ত্র অর্থ এই না যে, কোন একটি দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে তাহলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলো। কোন একটি দল যদি ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে তাহলে গণতন্ত্রের ধারা ব্যাহত হলো, এটা কথার কোন যুক্তি হতে পারে না। তাহলে কি আমরা একটা অগণতান্ত্রিকপন্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি কিনা? আজকে আমার দল (আওয়ামী লীগ) বলতে পারে নির্বাচন বর্জন করব, তাহলে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা চলবে কিনা? স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সঙ্গে যারা সুর মেলাবে আর যাই হোক তারা দেশের বন্ধু হতে পারে না দাবি করে আমির হোসেন আমু বলেন, দোষ ত্রুটি আমাদের থাকতেই পারে। তার মানে এই নয় যে শত্রুর সঙ্গে আমাদের হাত মিলাতে হবে। জাতীয় শত্রুর সঙ্গে হাত মিলাতে হবে এটা কোন অর্থ হতে পারে না। যে গণতন্ত্রের ধারা মানুষ রক্ত দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে এটা কোন একদিনের ব্যাপার ছিল না। ’৫৪ সালের নির্বাচন নিয়ে বঙ্গবন্ধু বললেন, নির্বাচনে জয়লাভ করে আমরা গদিতে বসতে পারি নাই। ’৫৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করার পরপরই ৯২ ‘ক’ ধারা দিয়ে সংসদ ভেঙে দেয়া হলো। তারপর নানা উত্থান-পতন ষড়যন্ত্র। এটা তো (বর্তমান) সেই ধরনের নির্বাচনের সরকার না। আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা আরও বলেন, মার্চ মাস সম্প্রীতির মাস। এখানে কোন ধর্মীয়ভিত্তিক সম্প্রীতির কথা চিন্তা করলে চলবে না। সব ধর্মাম্বলী মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমরা এই দেশটা সৃষ্টি করেছি। সমষ্টিগত সম্প্রীতিকে এগিয়ে নিতে হলে সমষ্টিগত ভাবে এগিয়ে যেতে হবে। কোন পার্টিজান (দলভুক্ত) সৃষ্টি করলে হবে না। পার্টিজান ভিউ নিয়ে এগিয়ে গেলে হবে না। পার্টিজান বিভিন্ন অন্যায়ভাবে সমর্থন করা যাবে না। তাহলে এই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে কাউকে অপছন্দ করতে পারি। তাই বলে সমষ্টিগতভাবে কাউকে ক্ষতি করতে পারি না। একটি জাতি ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাক এটা তো আমরা কামনা করতে পারি না। আমি যত বড় জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি হই না কেন আমাদের একটা জায়গায় ঠিক থাকতে হবে, আমার মূলভিত্তি কি? আমার মূলভিত্তি আমার দেশ। আমার দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি সবকিছু। সেটাকে সামনে রেখে যতটুকু করা যায় আমরা করব। আমরা লক্ষ্য করছি যে, রাজনীতির নামে গণতন্ত্রের নামে যে কথাগুলো বলা হয়, যেগুলোকে সামনে আনা হয় সেগুলো কিন্তু জাতীয় স্বার্থবিরোধী। সাহিত্যিক, সাংবাদিক রাহাত খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুভাষ সিংহ রায়, সাংবাদিক নাসিমুন আরা হক, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুন সরকার রানা প্রমুখ।
×