খ্যাতিমান ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী ও সৃষ্টিতত্ত্ববিদ স্টিফেন হকিং ৭৬ বছর বয়সে মারা গেছেন বলে তার পরিবার বুধবার জানায়। ব্রিটেনের কেমব্রিজে নিজের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ব্রিটেনের প্রেস এ্যাসোসিয়েশন সংবাদ সংস্থায় পারিবারিক মুখপাত্র এক বিবৃতিতে স্টিফেন হকিংয়ের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেন। বিবৃতিতে হকিংয়ের ছেলেমেয়ে লুসি, রবার্ট ও টিমের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাবার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।
একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী হওয়ার পাশাপাশি হকিং একজন অসাধারণ মানুষও ছিলেন। তার মানসিক প্রতিভা ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে বিশ্বব্যাপী একটি সুপরিচিত নাম ও অনুুপ্রেরণা দিয়েছে। ১৯৮৮ সালে তার লেখা ‘এ ব্রিফ হিস্টোরি অব টাইম’ বইটি তাকে সুখ্যাতি এনে দেয়। বইটিতে আপেক্ষিকতাবাদম কসমোলজি, কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও ব্ল্যাকহোলের ওপর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছেন। এক সময় এটি সারাবিশ্বে সর্বোচ্চ বিক্রিত বই ছিল। হকিং নিজেকে বিশ্বজগতের রহস্য উন্মোচনের জন্য উৎসর্গ করেছেন। তার প্রতিভা ও উদ্ভাবনী শক্তি তাকে সারাবিশ্বের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে সুখ্যাতি এনে দেয়। পাশাপাশি তাকে আলবার্ট আইনস্টাইন ও স্যার আইজ্যাক নিউটনের সঙ্গে তুলনীয় করে তোলে। পদার্থবিজ্ঞানী হকিং ব্ল্যাক হোল, সময় ও মহাবিশ্বের জাগতিক রশ্মির মতো জটিল ধারণাগুলোতে সাধারণ মানুষের কাছে বোধগম্য করে তোলেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হকিংয়ের শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছিল। যে কারণে তিনি ২০১৫ সালে খারাপ স্বাস্থ্যের জন্য ধারাবাহিকভাবে তার বিজ্ঞ বক্তব্য দেয়ার অনুষ্ঠানগুলো বাতিল করে দেন। ২০০৯ সালে তাকে সংক্রমণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজের অধ্যাপক ড. স্টিফেন হকিং বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় ও জনপ্রিয় সংস্কৃতির মধ্যে মেলবন্ধন ঘটান। তিনি মনস্তাত্ত্বিক মন ও হাস্যরস সেইসঙ্গে তার আকর্ষণীয় শারীরিক চ্যালেঞ্জগুলোর জন্য বিশেষ প্রতিভাধর ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে হকিং এ্যামোমোট্রফিক লিটারাল স্কেলারোসিস রোগের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছিলেন। যেজন্য জীবনের বেশিরভাগ সময় তাকে হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করতে হতো। রোগটি লৌ জেহনিজ বা মোটর নিউরন নামে পরিচিত। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর ¯œায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এক সময় পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এএলএস রোগে আক্রান্ত রোগী পাঁচ বছরের মধ্যেই মারা যান। তবে হকিং হচ্ছেন এই রোগে আক্রান্ত এমন এক রোগী যিনি সবচেয়ে বেশি সময় বেঁচে ছিলেন। ১৯৬৩ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে হকিং এই রোগে আক্রান্ত হন। সে সময় চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন তিনি দুবছরের বেশি বাঁচবেন না। যদি চিকিৎসকদের ধারণা সত্যি হতো তাহলে, মহাবিশ্বের রহস্য সন্ধানী তাত্ত্বিক, পদার্থবিদ ও দার্শনিক স্টিফেন হকিংকে পেতই না বিশ্ব। ¯œায়ুর মারাত্মক অসুখ মোটর নিউরনকে সঙ্গে নিয়েই ৭৬ বছর লড়াই করেন তিনি। শুধু লড়াই নয় বরং কাজ করে গেলেন আমৃত্যু। অবশেষে শেষ হলো সেই মহাজীবনের। জীবদ্দশাতেই তিনি কিংবদন্তী হয়েছিলেন। তার জন্ম ও মৃত্যুর সঙ্গে যুক্ত হল বিজ্ঞানের আরও দুই কিংবদন্তি পদার্থবিজ্ঞানীর নাম। তার জন্ম ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি ১৬৪২ সালের এদিন মারা যান। গ্যালিলিওর জন্মদিন ছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৫৫৪ সাল। মৃত্যু ১৪ মার্চ আলবার্ট আইনস্টাইনের জন্মদিন। ১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ আইনস্টাইন জন্ম নেন। তার মৃত্যু হয় ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল। ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি অক্সফার্ডে জন্ম এই প্রবাদপ্রতিম বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের। বাবা ছিলেন একজন জীববিজ্ঞানের গবেষক। পারিবারিক নাম ছিল স্টিফেন উইলিয়াম হকিং। ১৯৬৪ সালে বিয়ে করেন। ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি শুধু কৃত্রিম উপায়ে কম্পিউটারের মাধ্যমে কথা বলতে পারতেন। রেখে গেছেন একমেয়ে লুসি ও দুই ছেলে রবার্ট এবং টিমকে।