ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঐ বিমানে ওদের যাওয়ার কথা ছিল না

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৪ মার্চ ২০১৮

ঐ বিমানে ওদের যাওয়ার কথা ছিল  না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঐ বিমানে যাত্রী হওয়ার কথা ছিল না ওদের। কথা ছিল নেপালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সেমিনারে অংশ নিবেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ও সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম। ব্যক্তিগত ব্যস্ততায় যেতে পারলেন না তিনি। পাঠালেন দুই সহকর্মী জিইডির সিনিয়র সহকারী প্রধান নাজিয়া আফরিন চৌধুরী ও উম্মে সালমাকে। তাই ইউএস বাংলার উড়োজাহাজে উঠলেন তারা। উঠে ফোন করলেন ড. আলমকে। তার আগে দুই সহকর্মী তুললেন হাস্যোজ্জল ছবি। আপলোড করে তা ছেড়ে দিলেন ফেসবুকেও। কে জানতো এই ছবিই হবে তাদের শেষ ছবি। এই হাসিই হবে তাদের শেষ হাসি! দুই সহকর্মীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা পরিকল্পনা কমিশন। মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশন ক্যাম্পাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চোখে-মুখে ছিল প্রিয়জন হারানোর শোক। এ দুজন কর্মকর্তা নিষ্ঠাবান, মেধাবী, সদালাপী, বিনয়ী, ও ধার্মিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সোমবার দুর্ঘটনার পরপরই দুই সহকর্মীর খোঁজ-খবর নিতে তৎপর হন ড. শামসুল আলম। সময় গড়ানোর সাথে সাথে আসে দুইজনের মৃত্যুর খবর। নিহত দুই কর্মকর্তার স্বজনরা লাশ শনাক্ত করতে মঙ্গলবার নেপালে উড়ে গেছেন। এদিকে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল পরিকল্পনা কমিশনের দুই কর্মকর্তাসহ দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন। বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডারের দুই কর্মকর্তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ইকোনমিক এ্যাসোসিয়েশন। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক শোককার্তায় জানানো হয়, নাজিয়া আফরিন চৌধুরীর জন্ম ঢাকার নবাবগঞ্জে, ১৯৭০ সালের ১ সেপ্টেম্বর। তিনি ঢাকার কামরুন্নেসা সরকারী বালিকা বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক এবং বেগম বদরুন্নেসা সরকারী মহিলা কলেজ থেকে ১৯৮৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগ হতে ১৯৯১ সালে ¯œাতক ও ১৯৯২ সালে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। নাজিয়া আফরিন ২০তম বিসিএসে ইকোনিমক ক্যাডারে যোগদান করেন। তিনি পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং সর্বশেষ জিইডির আন্তর্জাতিক অর্থনীতি অনুবিভাগে কর্মরত ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৮ বছর। তিনি স্বামী, বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধব ও অসংখ্য শুভাকাক্সক্ষী রেখে গেছেন। আরেক কর্মকর্তা উম্মে সালমার জন্ম টাঙ্গাইলের দিমুলিয়ায়, ১৯৭৯ সালের ১১ ডিসেম্বর। তিনি বনানী বিদ্যা নিকেতন হতে ১৯৯৫ সালে এসএসসি ও হলিক্রস কলেজ থেকে ১৯৯৭ সালে এইএসসি পাস করেন। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) হতে ম্যাটেরিয়ালস এ্যান্ড মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ হতে ২০০৪ সালে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানজনক স্কলারশীপের আওতায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। মেধাবী এই কর্মকর্তা ২৫তম বিসিএসসের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন ইআরডিতে। সর্বশেষ তিনি জিইডির রাজস্ব ও মুদ্রানীতি অনুবিভাগে সিনিয়র সহকারী প্রধান হিসেব কর্মরত ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৯ বছর। তিনি স্বামী, এক কন্যা, বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধব ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
×