ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রওনক হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১৩ মার্চ ২০১৮

রওনক হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী এখনও ধরাছোঁয়ার  বাইরে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারে দোল পূর্ণিমার হোলি উৎসবে কলেজ শিক্ষার্থী রওনক হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ ঘটনার চারদিন পর পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করা গেলেও মূল পরিকল্পনাকারীসহ বাকি আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে গ্রেফতারকৃত পাঁচ আসামির মধ্যে চারজন এরই মধ্যে রিমান্ড শেষে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয় তারা। উল্লেখ্য, গত ১ মার্চ দুপুর ১২টার দিকে পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার এলাকায় হোলি উৎসবে ভিড়ের মধ্যেই ছুরিকাঘাতে নিহত হয় রওনক হোসেন রনো (১৭)। পরে চারদিন পর ৫ মার্চ রাতে নিহতের সাবেক প্রেমিকা মায়শা আলম ওরফে লিজা আক্তার, রিয়াজ আলম ওরফে ফারহান, ফাহিম আহম্মেদ ওরফে আব্রো, ইয়াসিন আলী ও আল আমিন ওরফে ফারাবী খানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৭ মার্চ হত্যাকা-ে ব্যবহৃত একটি চাকুও উদ্ধার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। পুলিশ জানায়, রিমান্ড শেষে হত্যাকা-ের বিষয়ে আসামি লিজা আক্তার, ফারহান, আব্রো ও ফারাবী খান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে এই হত্যাকা-ে মূল পরিকল্পনাকারী ছাড়াও আরও ১০ থেকে ১২ জনের জড়িত রয়েছে। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম মশিউর রহমান জানান, গ্রেফতারকৃত চার আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। তারা রওনক হত্যাকা-ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাদের বক্তব্যে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ছাড়াও হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত অনেকের নাম জানা গেছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম-পরিচয় এখনই প্রকাশ করা যাচ্ছে না। জবানবন্দীতে যা আছে ॥ আসামি লিজা আক্তার ওরফে মায়শা আলম তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে উল্লেখ করেছেন, তার সঙ্গে রওনক সম্পর্ক ছিন্ন করায় সে কষ্ট পায়। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী তাকে জানায়, রওনককে একটু শায়েস্তা করতে হবে। ওকে হোলি উৎসবে ডাকতে বলে। পরে লিজা ১ মার্চ সকালে রওনককে ফোন করে শাঁখারীবাজারে হোলি উৎসবে আসতে বলে। সেখানে তিনিও (লিজা) উপস্থিত ছিলেন। রওনক তার বন্ধুদের নিয়ে শাঁখারীবাজার শনি মন্দিরের সামনে যায়। এ সময় আমি (লিজা) রওনককে ডেকে পাশের গলির সামনে নিয়ে যাই। তখন ২০ থেকে ২৫ জন রওনকের ওপর হামলা করে। লিজার দাবি, ওই সময় রওনককে হত্যা করা হবে বলে তার জানা ছিল না। আসামি রিয়াজ আলম ওরফে ফারহান তার জবানবন্দীতে জানায়, রওনককে মারধর ও আহত করতে মূল পরিকল্পনাকারীর সঙ্গে তারা শাঁখারীবাজার কেএফসি রেস্টুরেন্টের সামনে দেখা করে। সেখানে তাদের চারজনের কাছে চারটি ছুরি দেয়া হয়। সরাসরি রওনক হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে আসামি ফারহান। ফাহিম আহম্মেদ ওরফে আব্রো ও আল আমিন ওরফে ফারাবী খানও হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছে। তারা হত্যার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল বলে জানায় জবানবন্দীতে। নিহতের পরিবারের জানায়, রওনকের সঙ্গে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীর দীর্ঘদিন ধরে কিছু বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। একটি মোবাইল ফোন নিয়ে রওনকের সঙ্গে তার ঝামেলা হয়। এ ছাড়াও অর্থ সংক্রান্ত বিষয় এবং প্রেম নিয়েও ঝামেলা হয় তাদের। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি তাদের ঝামেলা বড় আকার ধারণ করে। এর ধারাবাহিকতায় ১ মার্চ সকালে আসামি লিজা আক্তার ওরফে মায়শা আলমের সহায়তায় রওনককে শাঁখারীবাজারে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী মারধর ও ছুরিকাঘাতে রওনককে হত্যা করা হয়। তারা জানান, মায়শার সঙ্গে রওনকের একসময় প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর অন্য আরেক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে রওনক। ওই মেয়েকে অন্য এক ছেলে পছন্দ করত। রওনকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠায় মেয়েটির ওপর সেই ছেলে ক্ষুব্ধ হয়। এ নিয়ে রওনক ও ওই ছেলের মধ্যে একাধিকবার কথাকাটাকাটি ও উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে। তারা একে অন্যকে হত্যার হুমকিও দিয়েছে। তবে এ হত্যার ঘটনায় মেয়েটির কোনও সংশ্লিষ্টতা পায়নি পুলিশ। পুলিশ বলছে, রওনককে হত্যার পরপরই মূল পরিকল্পনাকারী পালিয়েছে। তার বাসায় একাধিকবার অভিযান চালান হয়। হত্যাকারীর পিতা ও ভাই এখন পলাতক রয়েছেন।
×