ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘ ও কানাডার উদ্বেগ প্রকাশ

শ্রীলঙ্কার অবস্থা এখনও থমথমে

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৯ মার্চ ২০১৮

শ্রীলঙ্কার অবস্থা এখনও থমথমে

শ্রীলঙ্কায় সহিংস পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। গত সোমবার সেখানে সংখ্যালঘু মুসলিমদের টার্গেট করে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা হামলা শুরুর পর জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছিল। পরিস্থিতির যেন আরও অবনতি না ঘটে সেজন্য কর্তৃপক্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেয়। এএফপি ও বিবিসি। তিন দিনের দাঙ্গার পর বৃহস্পতিবার দিনে শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডি শহরে জারি করা কার্ফু সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়। চলমান পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করে অবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য কলম্বোকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেছে। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কানাডাও। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড বলেছেন, ‘শ্রীলঙ্কায় সাম্প্র্রদায়িক সহিংসতায় কানাডা উদ্বিগ্ন। এই সংঘাতে মুসলিমরা মূলত আক্রমণের লক্ষ্যস্থল। কানাডা সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানায়। রবিবার শহরটির মুসলিম ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে ঝগড়ার জেরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। রাজধানী কলম্বো থেকে ১১৫ কিলোমিটার পূর্বে শহরটির অবস্থান বৌদ্ধ দাঙ্গাকারীরা একটি মসজিদ ও মুসলিম মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। প্রেসিডেন্ট মাইথিরিপাল সিরিসেনা দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় জরুরী অবস্থা জারি করেন। সেনাবাহিনী জানিয়েছে বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার সকালে ক্যান্ডির পরিস্থিতি শান্ত ছিল। তবে থমথমে ভাব এখনও কাটেনি। মেজর জেনারেল রুকমান ডিয়াস বলেছেন, ‘পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ১২ ঘণ্টায় কোন বড় ধরনের সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।’ সন্ধ্যায় ক্যান্ডিতে ফের কার্ফু বহাল হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। কয়েকটি কট্টরপন্থী বৌদ্ধ গোষ্ঠী অভিযোগ করে যে বৌদ্ধদের জোর করে ইসলাম ধর্মে দিক্ষিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি পুরাতাত্ত্বিক স্থানগুলো ভাংচুরের জন্যও মুসলিমদের দায়ী করা হয়। গত বছর বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার থেকে মুসলিম রোহিঙ্গারা শ্রীলঙ্কায় আশ্রয় নিতে শুরুর করার পর থেকে তারা উগ্রবাদীদের টার্গেটে পরিণত হয়। দেশটিতে দুটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এ রকম এক পরিস্থিতিতেই ক্যান্ডিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। এ পর্যন্ত দুই শ’য়ের বেশি বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দেশটির পার্লামেন্ট সংখ্যালঘু মুসলিমদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার জরুরী অবস্থা জারির পাশাপাশি তিন দিনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ভাইবার ও হোয়াটসএ্যাপ বন্ধ করে দেয়। তারপরও বুধবার কারফিউ চলার মধ্যেই ক্যান্ডিতে গ্রেনেড বিস্ফোরণে এক জন নিহত ও আরও তিন জন আহত হওয়ার হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আটক করার বিশেষ ক্ষমতা নিরাপত্তা বাহিনীকে দেয়া হয়েছে। মুসলিমদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে। সরকার জানিয়েছে, সহিংসতা ঠেকাতে আরও সৈন্য নিয়োজিত করা হয়েছে বলে। দাঙ্গাকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশ কাদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। এদিকে এই দাঙ্গার ঘটনাকে ঘিরে সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারা টুইট বার্তায় এ ধরনের সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন, ‘শ্রীলঙ্কায় জাতিগত বা ধর্মীয় অবস্থানের কারণে কোন মানুষ হামলা বা হুমকির শিকার হওয়া উচিত নয়। এখানে বর্ণবিদ্বেষ বা সহিংসতার কোনও স্থান নেই।’ তিনি সবাইকে জোরালোভাবে একে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ‘সবকিছু ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে, মুসলিমরা এখন সেখানে আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে’। মঙ্গলবার আগুনে পুড়ে যাওয়া একটি বাড়ির পাশে এক মুসলিম তরুণের মৃতদেহ উদ্ধারের পর সেখানে নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। মুসলিমরাও প্রতিশোধ নিতে পাল্টা হামলা চালাতে পারে এই আশঙ্কায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। ২ কোটি ১০ লাখ জনঅধ্যুষিত শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধরা মোট জনগোষ্ঠীর ৭৫ শতাংশ এবং মুসলিমরা ১০ শতাংশ। দেশটিতে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের নজির খুব একটা নেই।
×