ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে বাড়ি দখল নিয়ে হিন্দু পরিবারের ৫ সদস্যকে অভিনব কায়দায় অপহরণ

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ৭ মার্চ ২০১৮

রাজধানীতে বাড়ি দখল নিয়ে হিন্দু পরিবারের ৫ সদস্যকে অভিনব কায়দায় অপহরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ খোদ ঢাকায় দিন দুপুরে সাড়ে আট কাঠা জমিসহ একটি টিনশেড বাড়ি দখলকে কেন্দ্র করে একটি হিন্দু পরিবারের পাঁচ সদস্যকে অভিনব কায়দায় অপহরণ করা হয়েছিল। প্রথমে অপহরণকারীরা বাড়িটিতে সপরিবারে বসবাসকারী ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মিহির বিশ্বাসকে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করে। তাতে ব্যর্থ হয়ে বাড়ির সবাইকে অপহরণ করে এ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যায়। প্রায় চার ঘণ্টা পর অপহৃতরা মুক্ত হন। ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে অপহরণকারীরা ওই হিন্দু বাড়ি থেকে ৩৬ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। অপহরণকারীরা বাড়িতে থাকা দেব-দেবীদের প্রতিমা ভাংচুর করে। যাতে ঘটনাটি ডাকাতি বলে চালানো যায়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত অপহরণ ও লুণ্ঠনের মামলায় পুলিশ দুই জনকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গত ৩ মার্চ শনিবার সকাল সাড়ে আটটায় রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানাধীন শ্যামলী ২ নম্বর সড়কের ১১/৭ নম্বর টিনশেড বাড়িতে ঘটে এমন ঘটনা। এ বিষয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা হয়েছে। বাড়িটিতে বসবাসকারী পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম- সম্পাদক ও বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক মিহির বিশ্বাস বাদী হয়ে নুরুজ্জামান নামে একজনকে এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে জানানো হয়েছে, ঘটনার দিন সকালে মিহির বিশ্বাস ছেলেকে স্কুলভ্যানে তুলে দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েন। এরপর বাড়ির দরজায় নক করার শব্দ শুনে গেট খুলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে চারজন বাড়ির ভেতরে ঢুকে। তারা জোরপূর্বক মিহির বিশ্বাসকে বেডরুমে নিয়ে হাত পা ধরে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় বাড়ির লোকজন জেগে গেলে অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিস্মি করে ফেলে। মিহির বিশ্বাস, তার স্ত্রী, গৃহকর্মী ও এক বৃদ্ধাসহ মোট পাঁচ জনকে জিম্মি করে একটি এ্যাম্বুলেন্সে তুলে ফেলা হয়। বিষয়টি পুলিশ জানার পর অপহরণকারীদের গ্রেফতারের চেষ্টা করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত প্রায় চার ঘণ্টা পর অপহরণকারীরা অপহৃতদের মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে ফেলে পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে মিহির বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে জানান, মূলত তার বাড়ির জায়গা দখল করার জন্যই নুরুজ্জামান নামের একজন লোক এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। জায়গাটি ১৯৯৮ সালে নুুরুজ্জামানের কাছ থেকেই কিনে নেই। ২০০৮ সাল থেকে নুরুজ্জামান বাড়িটি জোরপূর্বক দখলের নেয়ার চেষ্টা করে আসছে। ঘটনার সময় নুরুজ্জামান বাড়ির কাছেই দাঁড়ানো ছিলেন। আমাদের অপহরণ করে এ্যাম্বুলেন্সে তোলার পর নুরুজ্জামানের লোকজন বাড়ির ভেতরে থাকা সব প্রতিমা ভাংচুর করে ও মালামাল লুটে নেয়। যাতে ঘটনাটি ডাকাতি বলে মানুষ বা পুলিশ মনে করে। এ বিষয়ে শেরেবাংলা নগর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত ওসি আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জনকণ্ঠকে জানান, বায়নাপত্র সূত্রে নুরুজ্জামানের কাছ থেকে বাড়িটি নেয় মিহির বিশ্বাস। এরপর থেকে মিহির বিশ্বাস পরিবার নিয়ে বাড়িটিতে বসবাস করে আসছেন। নতুন করে নুরুজ্জামান বাড়িটি পেতে চায়। তবে কিভাবে পেতে চায় তা স্পষ্ট নয়। তারই জেরে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত অপহরণ ও লুণ্ঠনের মামলায় দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
×