ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ খলিলুর রহমানের স্বতন্ত্র শিল্পকর্ম

সোনালি আঁশে সোনার মানুষ, বঙ্গবন্ধুর প্রতি অনুরাগ

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৫ মার্চ ২০১৮

সোনালি আঁশে সোনার মানুষ, বঙ্গবন্ধুর প্রতি অনুরাগ

মোরসালিন মিজান ॥ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কত যে গান কবিতা। শিল্পীর ক্যানভাসে প্রিয় পিতার মুখ ভেসে ওঠছে নিয়মিত। দেশের খ্যাতিমান কবি শিল্পীরা বাঙালীর মহান নেতাকে তাদের মতো করে আঁকছেন। লিখছেন আবেগী ভাষায়। তবে অবিসংবাদিত নেতার জন্য তৃণমূলের সাধারণ মানুষের যে অনুরাগ, বেশিরভাগ সময় আড়ালেই থেকে যায়। শেখ খলিলুর রহমান সেই আড়ালের মানুষটি। বরিশালের উজিরপুরে থাকেন। গ্রামের নাম আটক। এই গ্রামের তরুণ আরও অনেকের মতোই ভালবাসেন শেখ মুজিবুর রহমানকে। তার ভালবাসা প্রকাশের আলাদা ভঙ্গি। স্বতন্ত্র শিল্পভাষা। চারুকলায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই কোন। নিজের মতো করে চেষ্টা করেন। তাতেই অনবদ্য শিল্পকর্ম। তাতেই ৭ মার্চ। বঙ্গবন্ধু। রবিবার কথা হয় শিল্পীর সঙ্গে। নিজের গড়া শিল্পকর্ম সঙ্গে নিয়েই জনকণ্ঠ ভবনে এসেছিলেন। মোড়ক খোলার পর বেশ চমকিত হতে হয়। কল্পনার চোখে একাত্তরের ৭ মার্চে ফিরে গিয়েছেন শিল্পী। স্বাধীনতার মহানায়ককে খুঁজে নিয়েছেন। তর্জনী উঁচিয়ে যে বঙ্গবন্ধু, হ্যাঁ, আগেও অসংখ্যবার দেখা হয়েছে। ঐতিহাসিক ভাষণের ছবি আছে সর্বত্র। এর পরও খলিলের কাজটি স্বতন্ত্র মনে হয়। দেড় ফিট বাই দুই ফিট কাপড়ের ফ্রেমে বিশাল জনসমুদ্রকে দেখিয়েছেন তিনি। সোনালী আঁশে সোনার মানুষ বঙ্গবন্ধুকে দৃশ্যমান করেছেন। তার কাজের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে পাট। পাট থেকে পাওয়া সুতো ও দড়ি উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করেছেন তিনি। নানা আকার আকৃতি অবয়বÑসবই এক মাধ্যমে। রিলিফওয়ার্ক। একটা ভিন্নতা খুঁজে পাওয়া যায়। শিল্পকর্মের বিষয় বঙ্গবন্ধু কেন? কেন ৭ মার্চ? জানতে চাইলে একটু পেছনে ফিরে যান খলিলুর। বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান জাতির জনক। ছোটবেলা থেকেই তাঁর প্রতি প্রেম। শিল্পকর্মের ভাষায় সেটা প্রকাশ করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি। সেই গল্পটা গর্ব করে বলার মতো। খলিল বলেন, ৭০তম জন্মদিন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ৭০টি ক্যালিওগ্রাফি উপহার দিয়েছিলাম আমি। শেখ হাসিনা নামটি স্মৃতিসৌধ, সংসদ ভবন, নৌকা, একতারা ইত্যাদির আকৃতি পেয়েছিল। সেগুলো গ্রহণ করে তিনি আমাকে ধন্য করেছিলেন। সেইসঙ্গে জাতির পিতাকে নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দেন। তখন থেকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলাদাভাবে ভাবতে শুরু করেন বলে জানান তিনি। সম্প্রতি ইউনেস্কোর বিশেষ স্বীকৃতি অর্জন করে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। সে কথার উল্লেখ করে খলিলুর রহমান বলেন, আমি যতবার এ ভাষণ শুনেছি, ততবারই মুগ্ধ হয়েছি। ভেতরে কেমন যেন দোলা দিয়ে গেছে। বইয়ে ঐতিহাসিক সমাবেশের বর্ণনা পড়েছি। ইউনেস্কোর স্বীকৃতির পর ইতিহাসটি নতুন মাত্রা পায়। তখনই রেসকোর্সের শেখ মুজিবকে আমার মতো করে তুলে ধরার চেষ্টা করি। শিল্পী জানান, বরিশালে নিজ গ্রামের বাড়িতে বসে টানা ২ মাস কাজ করেন তিনি। এর আগে নানা উপকরণ সংগ্রহ ও প্রস্তুত করতে হয়েছে। তারপর শিল্পকর্ম গড়ার কাজে হাত দেন। একটু একটু করে মূর্ত হতে থাকে ৭ মার্চ। জাতির জনকের প্রতিকৃতি। আপাতত ইচ্ছা- ৭ মার্চের শিল্পকর্মটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেবেন। সুযোগটি আবারও চান তিনি। পাবেন কি? বললেন, খুব আশা করে আছি। তারও আগে আশা ছিল শিল্পী হওয়ার। শেখ খলিলুর রহমান চারুকলার শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চেয়েছিলেন। সেটি হয়নি। তবে নেশাটা ছিল। তিনি বলেন, শৈশবে অন্যের আঁকা একটি ছবি সামনে রেখে চর্চা শুরু করে দিয়েছিলাম। প্রথমে প্রকৃতির ছবি এঁকেছি। নদী নৌকো সবুজ মাঠ নীল আকাশ এঁকেছি। এভাবে একটু একটু করে নিজেকে প্রস্তুত করা। এখন স্কেচ করি। জলরংয়ে ছবি আঁকি। ব্যতিক্রমী কিছু করতে মন চায়। তখন বিকল্প মাধ্যম ব্যবহার করি। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, মোম দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের প্রতিকৃতি গড়েছি আমি। সেই ধারাবাহিতায় পাট নিয়ে নিরীক্ষা। কাজটি নিয়ে শিল্পী এত মগ্ন ছিলেন যে, বাজার হাট করার কথাও ভুলে ছিলেন। বাড়ির বাইরে তেমন যাওয়া হয়নি। এ জন্য পরিবারের সদস্যরা মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়েছেন তার ওপর। বলেছেন, খেয়ে বাঁচতে হবে তো, চাকরি বাকরি কিছু করার চেষ্টা কর। খলিলুর জানান, এলএলবি শেষ করেছেন তিনি। নবীন আইনজীবী হিসেবে জীবন শুরু করতে চান। এখনও তেমন কিছু হয়নি। তবে যাই করেন, এই চর্চা টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই করবেন বলে জানান তিনি। শিল্পী খলিলুর রহমান একইসঙ্গে কবিতার চর্চা করেন। শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন। বই হয়েছে। গত বছর প্রকাশিত বইয়ের শিরোনাম- ‘মুজিবগাথা’। এ্যাক্রোস্টিক কবিতার বইটি সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। পাতা উল্টে দেখা যায়, এখানেও ব্যতিক্রমী কিছু করার প্রয়াস। সবকটি কবিতার দশটি করে পঙ্ক্তি। প্রতিটি পঙ্ক্তির প্রথম বর্ণ লক্ষ করে নিচের দিকে নেমে আসলে শেখ মুজিবুর রহমানকে আবিষ্কার করা যায়। ভবিষ্যতে আরও গভীর কোন ভাবনা থেকে কাজ করতে চান খলিলুর। বলেন, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিস্ময়কর কিছু কাজ করতে চাই আমি। তার স্বপ্ন নিশ্চয়ই ডানা মেলবে।
×