৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই মহিমান্বিত দিনটির তাৎপর্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন তৈরি করছে বিচিত্রমুখী আয়োজন। যার মূল বার্তায় থাকে নারীর মৌলিক অধিকার অর্জন ও আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। উন্নয়নের সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান না হলে অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে শুধু পিছিয়েই পড়বে না তার চেয়েও বেশি আধুনিকায়নের সমস্ত সূচক থেকে অর্ধাংশ এই জাতিকে দূরে সরিয়েও রাখা হবে। তথ্য-প্রযুক্তির নিরন্তর উৎকর্ষতার এই সুবর্ণ সময়ে নারীদের প্রবল ইচ্ছেশক্তি আর জোরাল অধিকার বোধ তাদেরকে আপন মর্যাদায় দাঁড় করাবে এটা যেমন সত্যি একইভাবে এই ধারার বিচ্যুতি হলে নারীর পেছনের দিকে হাঁটতেও সময় নেবে না। সুতরাং এক্ষেত্রে গণসচেতনতা সব থেকে বেশি জরুরী। শুধু সচেতনতাই নয় সফল এবং স্বাবলম্বী নারীদের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে পিছিয়ে পড়া মেয়েদের উৎসাহিত করাও আন্তর্জাতিক নারী দিবসের বিশেষ দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। আর এই লক্ষ্যে ফ্রিডম স্যানিটারি ন্যাপকিনের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী উইল ফেস্ট। অর্থাৎ বর্তমান সময়ের নারী নেতৃত্ব আর ক্ষমতায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ।
নেতৃত্বে নারী এমন একটি বিশাল আয়োজন শুরু হতে যাচ্ছে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। ৩ দিনব্যাপী এই মহতী উদ্যোগটির সূচনা হবে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের গুরুত্বপূণ দিনটিতে। নারীদের বহুমাত্রিক সম্পৃক্ততায় উন্নয়নের নিরন্তর গতি প্রবাহে সংশ্লিষ্টদের সফল অভিযাত্রাই পুরো উৎসবের মূল সারবত্তা। প্রথমবারের মতো আয়োজন করা এই মহোৎসবের নিয়ামক শক্তি নারী নেতৃত্ব আর কতৃর্ত্বের দৃশ্যমানতা। তথ্য-প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান গতিময়তায় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে ওঠার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কালপর্বে নারীর ক্ষমতায়ন এবং অংশগ্রহণ কতখানি ফলপ্রসূ এবং যুগান্তকারী সেটাও সবার সামনে স্পষ্ট করা বিশেষ দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। নারীর নিজস্ব অধিকার বোধ, বিশ্বাস এবং ইচ্ছাশক্তির সুদৃঢ় বলয়ে তারা কতখানি বিজয়িনীর বেশে সফলতার শীর্ষে চলে যাচ্ছে তারই অভিগামিতায় সংশ্লিষ্টদের যুগ আর সময়ের উপযোগী করে তোলাও এর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য। ২৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ঢাকার হোটেল ‘সোনারগাঁও’তে এক সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করে নারীদের উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয়ে সম্পৃক্তকরণের ওপর এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় আসন্ন উৎসবের কিছুটা ধারণা দেয়া হয়। ক্ষুদ্র পারিবারিক গ-ি থেকে বৃহত্তর সামাজিক অঙ্গনে নিজেদের অংশীদারিত্ব প্রমাণ করে কিভাবে আকাক্সিক্ষত সফলতায় পৌঁছে গেছে সেই সব অনুসরণীয় নারীদের গুরুত্বপূর্ণ কর্মযজ্ঞ প্রত্যেকের কাছে স্পষ্ট করা অত্যন্ত প্রয়োজন বলে সভায় অভিমত ব্যক্ত করা হয়। কারণ এসব সফল নারী অসহায়, দুর্বল আর পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে উইমেন ইন লিডারশিপের সভাপতি নাজিয়া আন্দালিব প্রিমার বক্তব্যে ওঠে আসে পশ্চাদপদ নারী সমাজ সময়ের দাবি পূরণ করতে গিয়ে নিজের রক্ষণশীল অবস্থান থেকে অনেকখানিই এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় সহজ স্বাভাবিক পথ বিঘিœত হলে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যেতেও যতখানি শক্তির দরবার এখন নারীরা তা প্রয়োগ করতে পিছপা হয় না। ফলে উন্নয়নের বহুমাত্রিক পর্যায় নারীর অংশগ্রহণই শুধু বাড়েনি অত্যন্ত সফলভাবে নিজেদের অবস্থান মজবুত করার নজিরও তৈরি হয়েছে। আন্দালিব প্রিমা আরও বলেন, এক সময় নারীদের মধ্যে যে ভয়, আশঙ্কা আর সংশয় ভর করত আজ তারা তাকে জয় করেছে। আর এই বিজয়ের সাফল্য গাঁথা শুধু রাজধানী ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ নয় সারা বাংলাদেশের নারীরাও একই ধারাবাহিকতায় নিজেদেরকে সর্বক্ষেত্রে যোগ্য প্রমাণ করছে। ফলে ক্ষুদ্র গ্রামীণ উদ্যোক্তা থেকে বৃহত্তর শিল্প প্রতিষ্ঠানে শীর্ষস্থানীয় নারী নেতৃত্বও আজ সূর্যালোকের মতো দীপ্যমান। এক সময় মেয়েরা শিক্ষকতাকেই সর্বোত্তম পেশা হিসেবে বিবেচনায় এনেছে। সময়ের মিছিলে বিভিন্ন আর্থসামাজিক প্রতিষ্ঠানে নারী কর্মজীবীর সংখ্যা বেড়েছে। প্রশাসনিক ক্যাডারে মেয়েদের সম্পৃক্ততা সত্যিই প্রশংসনীয় এবং উল্লেখ করার মতো। একটু পিছিয়ে পড়া নারীদের ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় শামিল হওয়া আজ অত্যন্ত স্পষ্ট। বিশেষ করে কৃষি, অর্থনীতিতে নারী কৃষকের অংশগ্রহণ এই খাতকে অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছে বললে বেশি বলা হবে না। পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকের কোন বিকল্পই হয় না। আর নারী নির্মাণ শ্রমিকের অবকাঠামোতে জোরালো অংশগ্রহণ উন্নয়নের এই পর্যায়টিতেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অবশ্যই সময়ের চাহিদা।
স্বনামখ্যাত সাংবাদিক একাত্তর টিভির সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামিয়া জামান বলেন, নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে নারীদের ভেতরের বোধকে সবার সামনে নিয়ে আসতে হবে। আর সেভাবে নিজেদের তৈরিও করতে হবে। সিংহভাগ মেয়েরা আসলেই জানে না তাদের অধিকারের মাত্রা কতখানি কিংবা মৌলিক চাহিদাগুলোই বা কি? গত ৩ দশক ধরে দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করা নারী নেতৃত্বের উদাহরণ টেনে রাজনীতির অঙ্গনে তাদের অনীহা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে এই বিজ্ঞ সাংবাদিক অভিমত ব্যক্ত করেন দেশের সার্বিক রাজনীতিই আজ বিশৃঙ্খলতা, অস্থিরতা সর্বোপরি ষড়যন্ত্রের শিকার। শুধু নারীরাই বা কেন দেশের অনেকেই রাজনীতি বিমুখতাই আক্রান্ত হচ্ছেন। সংঘবদ্ধ এক সুশৃঙ্খল চক্র রাজনীতিকে অপকৌশলের আবর্তে আটকে রেখেছে। যে কোন মূল্যে সবাইকে এই ফাঁদ থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
সবশেষে এসিআই কনজিউমার ব্রান্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব সৈয়দ আলমগীর বলেন, তার প্রতিষ্ঠান শুধু নারীদের প্রয়োজনীয় ব্যবহার সামগ্রীই তৈরি করে না দক্ষ পেশাজীবী নারী কর্মকর্তা সৃষ্টি করতেও সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এসিআই এর ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবেও নারী উদ্যোক্তা তার প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে অর্ধাংশ নারীর জন্য ১৫০টি আসন দাবি করে বলেন, সংরক্ষিত আসনে নারীকে আর আটকে রাখা একেবারে অমূলক। নারী তার যোগ্যতা এবং ক্ষমতার বিবেচনায় সবক্ষেত্রেই সমতার ভিত্তিতে ভূমিকা রাখবে।
শীর্ষ সংবাদ: