ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ

অঙ্কের হিসাবে অনেক দেখানো যায়, জনগণ চায় দৃশ্যমান উন্নয়ন

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১ মার্চ ২০১৮

অঙ্কের হিসাবে অনেক দেখানো যায়, জনগণ চায় দৃশ্যমান উন্নয়ন

সংসদ রিপোর্টার ॥ বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেছেন, অঙ্ক কষে কষে আমরা অনেক কিছু দেখাতে পারি। কিন্ত জনগণ দেখতে চায় দৃশ্যমান উন্নয়ন। ব্যাংকিং খাতগুলোর কি অবস্থা তা সবাই জানেন। অর্থনীতির খাতে ধস নেমেছে। শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে। অর্থমন্ত্রীর মতো এরকম যোগ্য মন্ত্রী থাকা অবস্থায় ব্যাংকে এত বড় ধরনের ধস নামল কেন? শিক্ষা খাত ও শেয়ার বাজার দেশের জনগণের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হলে প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে। বুধবার জাতীয় সংসদে দশম জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে রওশন এরশাদ আরও বলেন, দশম জাতীয় সংসদ অধিবেশনেও শেষের দিকে চলে এসেছে। সবার মনে আছে কি অবস্থায় ও কোন সময় আমরা নির্বাচন করেছি। জাতীয় সঙ্কট উত্তরণের জন্য আমাদের দলই তখন এগিয়ে এসেছিল দেশ ও দেশের জনগণকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে। তিনি বলেন, অতীতে যেসব সংসদ শেষ হয়েছে কোনবারই কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়নি। এবারই প্রথম শান্তিপূর্ণভাবে সংসদ শেষ হচ্ছে। হরতাল অবরোধের মুখোমুখি হতে হয়নি জনগণকে। টক শোতে অনেকে অনেক কথাই বলেন। কিন্তু তারা জানেন না যে আমরা ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে অনুসরণ করছি। তাদের পার্লামেন্ট সিস্টেমে সরকারকে সহযোগিতা করে বিরোধী দল। কিন্তু তারা এটা না বুঝে বিরোধীদলের সমালোচনা করছে। বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, দেশে কিছু কিছু বিষয়ে সমস্যা আছে। প্রধানমন্ত্রী অনেক ¯েœহশীল মহিলা। মায়ের দরদ দিয়ে সবকিছু সমাধানের চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর একার পক্ষে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। তারপরও উনি যে চেষ্টা করছেন এটা যদি জনগণ জানতে পারে তাহলে তারা শান্তি পায়। আমাদের দেশের মানুষের চাহিদা অনেক কম। কিন্তু আমরা কি সেটা পূরণ করতে পারছি? চালের দাম বেশি। এর সঙ্গে মাছ ও মাংসের দাম অনেক বেশি। এখন ভাতের সঙ্গে আলু ভর্তা খেতে পারে। কিন্তু ভর্তা দিয়ে কতদিন খাবে। তিনি বলেন, দেশের জনগণ শান্তি চায়। শান্তিতে থাকতে চায়। আমাদের সেই শান্তি দিতে হবে। এটা করতে হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব এটা করতে হবে। জনগণের কাজ নেই বলে দেশে মাদকের বিস্তার লাভ করছে বেশি। এতে তরুণ প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এটা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে এটা একটি বড় ধরনের দুর্যোগ বলে মনে করি। দেশের সমস্যাগুলো যদি চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধান করা যায় তাহলে আমরা এখনই উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হতে পারব। রওশন এরশাদ বলেন, পদ্মা সেতু অবশ্য আমাদের অবকাঠামোগত বড় মাইলফলক। এটার কাজ শুরু হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। এখন এর বরাদ্দ হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। এত টাকা বরাদ্দ কেন? কিছুদিন পর পর যদি বরাদ্দ বাড়ানো হয় তাহলে কি করে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ খাত। সেখানে দেখেন কিভাবে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা আছে। শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে অনেক কম অনুদান দেয়া হয়। এতে উদাসীন থাকলে শিক্ষার উন্নয়ন হবে না। প্রশ্নপত্র ফাঁস লেগেই আছে। সৌদি আরব থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। এ ধরনের অবস্থা দেশে বারবার কেন হচ্ছে। অনেকে প্রশ্ন করে যে, শিক্ষা খাতে যদি এই অবস্থা হয় তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্মের কি হবে? এটা বন্ধ হবে কবে? সরকার কেন এটা বন্ধ করতে পারছে না? এখানে শিক্ষা মন্ত্রীকে যদি এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয় উনি কি জবাব দেবেন? সাধারণ লোক তো প্রশ্নপত্র ফাঁস করে না। যারা প্রশ্নপত্র তৈরি করে তারা এটা ফাঁস করছে। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বিরোধীদলের নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলছেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়বেন। কিন্তু কাদের নিয়ে গড়বেন। আজকের শিশুরা তো বাজারে থাকা খাদ্যের সঙ্গে বিষ খাচ্ছে। এসব বিবেচনা না করলে দেশের জনগণ, নতুন ভবিষ্যত কোথায় যাবে? সাধারণ জনগণের কথা চিন্তা করেন। ভোটারদের কথা চিন্তা করেন। আমরা চাই এদেশের মানুষ ভাল থাকুক। এখন যত উন্নয়ন হয়েছে অতীতের কোন সরকারের সময় হয়নি। আমরা বিরোধীদল হিসেবে সহযোগিতা করেছি। তিনি বলেন, ছেলেমেয়েদের জন্য ফেসবুক, ভাইবার আছে। এগুলো ব্যবহারের জন্য যদি সীমারেখা দেয়া যায় তাহলে ভাল হয়। তারা লেখাপড়া করতে পারবে, স্বাস্থ্য নষ্ট হবে না। নতুন প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে অনেক কাজ করতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আনতে হবে।
×