ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক অর্থ সহায়তা দিচ্ছে

দ্বিতীয় পদ্মা সেতু শুরুর অর্থ বরাদ্দ আগামী বাজেটেই

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

দ্বিতীয় পদ্মা সেতু শুরুর অর্থ বরাদ্দ আগামী বাজেটেই

এম শাহজাহান ॥ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। দুদিনের সফরে আজ ঢাকা আসছেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রেসিডেন্ট তাকিহিতো নাকাও। তার এই সফরের সময়ই ‘লিড ডোনার’ বা প্রধান ঋণদাতা হিসেবে এডিবিকে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়া হতে পারে। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, ঋণ ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়ায় আগামী চার বছরের মধ্যে এডিবির কাছ থেকে বাংলাদেশ সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা পাবে। এই অর্থ ব্যয় হবে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলা, জলবায়ু পরিবর্তনজিনত ক্ষতি সাধন এবং সামাজিক সুরক্ষার মতো বড় প্রকল্পগুলোতে। দাতাদের ঋণ ব্যবহার সক্ষমতায় এশীয় দেশগুলোর মধ্যে এখন এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। এ কারণে এদেশটিকে বিশেষ মর্যাদার চোখে দেখছে এডিবি। সংস্থাটির কাছ থেকে সবচেয়ে কম সুদে ২০২১ সালের মধ্যে বছরে প্রায় সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার বা ৭০ হাজার কোটি টাকা ঋণ সহায়তা নিতে পারবে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে আগামী পাঁচ বছরের জন্য (২০১৬-২০২০ সাল) তারা যে ‘কান্ট্রি পার্টনারশিপ স্ট্রাটেজি’ গ্রহণ করেছে সেখানে বাংলাদেশকে প্রায় সাড়ে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে, যা এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ ঋণ। এই ঋণের বাইরে এবার নতুন করে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণে এডিবির কাছে ঋণ সহায়তা চাওয়া হবে। সংস্থাটিকে লিড ডোনার করে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি), জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা), বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এডিবির প্রেসিডেন্টের সফর সামনে রেখে ইতোমধ্যে এডিবির বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আহমেদ ফিলিপন্সের ম্যানিলা থেকে ঢাকা ছুটে এসেছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, (২০১৬-২০২০ সাল) তারা যে ‘কান্ট্রি পার্টনারশিপ স্ট্রাটেজি’ গ্রহণ করেছে সেখানে সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা পাবে বাংলাদেশ। এডিবির অর্থায়নে বর্তমানে দেশে ৬২টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। সদস্য হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ১৮ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা দিয়েছে সংস্থাটি। দারিদ্র্য বিমোচন এবং প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে তাদের এই ঋণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের যেকোন উন্নয়নে এডিবি বড় ধরনের ঋণ সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। এ কারণে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণে এডিবির ঋণ সহায়তা চাওয়া হবে। শুধু তাই নয়, ঋণ গ্রহণ ও সুদে-আসলে তা পরিশোধে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে ভাল। এ কারণে এডিবি আরও ঋণ সহায়তা দিতে চায়। জানা গেছে, এডিবিতে ইমেজ এতটাই ভাল যে, সংস্থাটি এখন বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ পরিমাণ সহায়তা দিতে চাচ্ছে। এর আগে সংস্থাটি তাদের কান্ট্রি পার্টনারশিপ স্ট্রাটেজি ২০১১-২০১৫-তে ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছিল। বর্তমানে তার চেয়ে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার বেশি পাচ্ছে। সংস্থাটির এডিএফ ঋণ সহায়তার দিক থেকে শীর্ষস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। এডিবি বাংলাদেশের ঋণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করে দেখেছে, দেশটি ঋণ নিয়ে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছে। এমনভাবে এই ঋণ ব্যবহার হচ্ছে যার সুফল পাচ্ছে দেশের জনগণ। এজন্য এখন বাংলাদেশকে ইতিবাচক চোখে দেখছে এডিবি। কান্ট্রি পার্টনারশিপ নিয়ে সংস্থাটির এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, এডিবি বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। কারণ, দেশটির অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য অবকাঠামো নির্মাণ ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রচুর বিনিয়োগ দরকার। এই ঋণ সহায়তা দেশটির সরকারী ও বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে সাহায্য করবে। এডিবি আরও বলেছে, তারা বাংলাদেশের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে যে অর্থনৈতিক করিডর গড়ে উঠেছে সেটি তারা কক্সবাজার পর্যন্ত সম্প্রসারণ করতে চায়। এডিবি যেসব খাতে ঋণ দেবে ॥ এডিবি পরিচালনা বোর্ড ইতোমধ্যে দেশে বিনিয়োগ অবকাঠামোর টেকসই উন্নয়নে বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ পাবলিক-প্রাইভেট পাটর্নারশিপে (পিপিপি) অর্থায়নে ৫২৬ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন করেছে। এ সহায়তার মধ্যে ৫শ’ মিলিয়ন ডলার মাঝারি ও বড় আকারের পিপিপির অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থায়নে এবং ২৬ মিলিয়ন ডলার ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও দেশের গ্রামীণ এলাকায় জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধিতে অর্থায়নের জন্য। উভয় ধরনের ঋণ তৃতীয় পাবলিক-প্রাইভেট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফ্যাসিলিটির (পিপিআইডিএফ-৩) আওতায় দেয়া হবে। এছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (আইডিসিওএল) দক্ষতা আরও বৃদ্ধির জন্য ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ ফান্ড থেকে ৫০ হাজার ডলার কারিগরি সহায়তা অনুমোদন করা হয়েছে। দেশে এখন পিপিপির অধীনে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইডকলের পরিচালক আব্দুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, এডিবির ঋণ সহায়তার এই অর্থ পিপিপির প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ঋণ হিসেবে দেয়া হচ্ছে। ভৌত অবকাঠামো বিশেষ করে বিদ্যুত, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ট্রান্সপোর্ট, বাইপাস বা সার্কুলার রোড নির্মাণ, আইসিটি ও তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিকমিউনিকেশন, বন্দর উন্নয়ন এবং সামাজিক অবকাঠামোর আওতায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো কর্মসূচী বাস্তবায়নে এই অর্থ ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হবে। তিনি বলেন, কর্মসংস্থান, শিল্পায়ন এবং বিনিয়োগ বাড়াতে হলে অবকাঠামো উন্নয়নে বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন। ইডকল শুরু থেকেই অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করে আসছে। এডিবির অর্থায়নে ইডকল আরও ভাল প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করতে পারবে বলে আশা করছি। দ্বিতীয় পদ্মা সেতু ॥ ইতোমধ্যে মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে দেশের বৃহৎ পদ্মা বহুমুখী সেতু বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় পদ্মা সেতু হবে পাটুরিয়া-গোয়ালন্দে। জাইকা তাদের এক সমীক্ষায় এই স্থানটিকে সেতু নির্মাণের জন্য উপযুক্ত মনে করেছে। এ সেতু নির্মিত হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ীর সড়ক যোগাযোগের দূরত্ব কমে যাবে। গোপালগঞ্জ, যশোর ও মাদারীপুর জেলার অংশবিশেষের দূরত্বও কমবে এতে। মহাজোট সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারেও পাটুরিয়া-গোয়ালন্দে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়টি রয়েছে। প্রস্তাবিত দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬ দশমিক ১০ কিলোমিটার। সেতুতে রেললাইনও থাকবে। কয়েক বছর আগে এর ব্যয় ধরা হয় ১৩ হাজার ১২১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। তবে এখন নির্মাণ ব্যয় আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পর মাওয়া পয়েন্টে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুটির অর্থায়নে এবার এডিবিকে প্রধান অর্থায়নকারী বা ঋণদাতা সংস্থা হিসেবে নিতে চাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে এডিবিকে এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এডিবির প্রেসিডেন্টের এবারের ঢাকা সফরে এ বিষয়ে আরও অগ্রগতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
×