ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মার্চে চালু হচ্ছে

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা জানাবেন ১৬১০৮ নম্বরে

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা জানাবেন ১৬১০৮ নম্বরে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে তথ্য জানাতে একটি হটলাইন নম্বর চালু করতে যাচ্ছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। মার্চ থেকেই এই নম্বরটি চালু হচ্ছে। ১৬১০৮ নম্বরে কল দিয়ে বিনামূল্যে জানানো যাবে তথ্য। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘শিশুর প্রতি শারীরিক সহিংসতা বন্ধ হোক’ বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক এ কথা জানান। রিয়াজুল হক বলেন, ‘কমিশনের লোকবল কম থাকায় আপাতত অফিস সময়ে এই নম্বর চালু থাকবে। এখানে অভিযোগগুলো রেকর্ড করে রাখা হবে। আর পরে অভিযোগ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। মানবাধিকার নিশ্চিতে কমিশন কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদেরও ব্যর্থতা আছে, তারপরও সরকারের সঙ্গে অনেক দেনদরবার করেই মানবাধিকার নিশ্চিতের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’ মানবাধিকার নিশ্চিতে সমস্ত এনজিও, বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের আহ্বান জানিয়ে রিয়াজুল হক বলেন, ‘সত্যিকারের উন্নয়নের জন্য মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কারণ মানবাধিকার ছাড়া উন্নয়ন পরিপূর্ণতা পায় না।’ বিশেষভাবে শিশু নির্যাতনের বিষয়টি উল্লেখ করেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শিশু নির্যাতন রোধে কাজ করে যাব। এমনকি বাবা-মার কাছে শিশু নির্যাতিত হলেও তার জবাবদিহিতা করতে হবে। প্রয়োজনে আমাদের পক্ষ থেকে মামলাও করতে পারি।’ শিশুদের রাজনৈতিক কর্মকা-ে ব্যবহার না করার আহ্বানও জানান মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘সামান্য টাকার জন্য শিশুদের জীবন দিতে হচ্ছে, নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। যারা শিশুদের নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করবে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।’ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিশ্ব প্রতিদিন ১০ জনের মধ্যে ছয় জন শিশু শারীরিক সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এছাড়া বিশ্বের প্রায় অর্ধেক শিশু বিদ্যালয়ে শারীরিক শাস্তির সম্মুখীন হয়। ২০১৩ সালের ইউনিসেফ এর তথ্য মতে বাংলাদেশে প্রায় ৮২ শতাংশ শিশু বিভিন্নভাবে সহিংসতার শিকার হয় ১৪ বছরের আগে। ৭৭ দশমিক ১ শতাংশ শিশু শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বিদ্যালয়ে। এছাড়া ৫৭ শতাংশ শিশু কর্মক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ২০১৫ সালে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) চূড়ান্ত করেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এসডিজি এর অভীষ্ট ১৬ এর আওতায় শান্তি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং শিশুর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা বন্ধ করণে উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকার স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে এ সংক্রান্ত বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে যথেষ্ট আন্তরিক। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে শিশুদের নেতৃত্বে ‘আমি-ই পারি’ শিশুর প্রতি শারীরিক সহিংসতা বন্ধ করতে- প্রচারাভিযান পরিচালনা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, সম্প্রতি শিশুর প্রতি শারীরিক সহিংসতা বন্ধে স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে সরকারের বিগত তিন বছরের বাজেট পর্যালোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। ওয়ার্ল্ড ভিশনের ডেপুটি ডাইরেক্টর সাবিরা নূপুরের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড ভিশনের ডাইরেক্টর চন্দন জেড গোমেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সেন্টার অন বাজেট এ্যান্ড পলিসির (সিবিপি) পরিচালক ড. এম আবু ইউসুফ প্রমুখ। মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে শিশুদের জন্য বরাদ্দ বাজেটের অংক জাতীয় বাজেটে সহজে ট্র্যাক করার জন্য আলাদা কোডের সুপারিশ করেন ড. এম আবু ইউসুফ। এবং স্থানীয় পর্যায়ে বাজেট বরাদ্দের ওপর এক গবেষণার প্রেক্ষিতে এই সুপারিশ করেন তিনি। গবেষণার মূল বিষয়বস্তু ছিল শিশুদের প্রতি সহিসংতা। শিশু নির্যাতনের কারণ হিসেবে ধর্মীয়, প্রথাগত ও সাংস্কৃতিক রীতি, শিশু অধিকার বিষয়ে অসচেতনতা ও শৃঙ্খলাবোধের অভাব এবং শিশু সুরক্ষা আইনের দুর্বল প্রয়োগকে দোষারোপ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
×