ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাটিং ব্যর্থতাকেই দায়ী করলেন মাহমুদুল্লাহ

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ব্যাটিং ব্যর্থতাকেই দায়ী করলেন মাহমুদুল্লাহ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ চট্টগ্রাম টেস্টে বেশ চাপের মুখে পড়েছিল বাংলাদেশ দল। ২০০ রানে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ড্র করে প্রথম ম্যাচটা। এর পেছনে দুর্দান্ত ভূমিকা ছিল ব্যাটসম্যানদের। সে কারণে ব্যাটসম্যানদের ওপর অনেক বেশিই নির্ভরতা তৈরি হয়েছিল, মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্টে স্পিন স্বর্গ তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। দল আত্মবিশ্বাসী ছিল নিজেদের ভাল স্পিন আক্রমণ দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসী ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় ভাল কিছু করা সম্ভব হবে। স্পিনাররা আস্থার অনেকটাই প্রতিদান দিয়েছেন, কিন্তু ব্যাটসম্যানরা হয়েছেন পুরোপুরি ব্যর্থ। এ কারণে মাত্র আড়াই দিনে বাংলাদেশ দল হেরে গেছে মিরপুর টেস্টে ২১৫ রানের বড় ব্যবধানে। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অভিযোগ করলেন সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও দক্ষতা অনুসারে খেলতে পারেনি ব্যাটসম্যানরা। যে কারণে প্রথম ইনিংসে ১১২ রানে পিছিয়ে থাকাটাই দলকে চাপে ফেলেছে। যার ফলশ্রুতিতে এসেছে পরাজয়। ম্যাচশেষে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মাহমুুদুল্লাহ। শ্রীলঙ্কাকে ২২২ রানেই থামিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্পিনাররা প্রথম ইনিংসে। কিন্তু চরম ব্যর্থতা দেখান স্বাগতিক দলের ব্যাটসম্যানরা, দলের প্রথম ইনিংস থেমে যায় মাত্র ১১০ রানে। দু’দিন শেষ না হতেই এই বিশাল ব্যবধানটাই বড় চাপে ফেলে বাংলাদেশ দলকে। তেমনটাই মনে করেন মাহমুদুল্লাহ, ‘ওরা ১১২ রানের লিডে ছিল। তখন এ ধরনের উইকেটে যদি আপনি ইতিবাচক অভিপ্রায় প্রদর্শন না করেন, আপনি যদি ইতিবাচক না থাকেন, আপনি যদি বোলারকে সুযোগ দেন থিতু করার তাহলে আপনি বিপদে পড়বেন। মোটামুটি আমাদের সবারই ধারণা ছিল যে এই টেস্টে আমরা ফল দেখব। যেখানে আমরা জানি স্পিন সহায়ক উইকেট, প্রথম ইনিংসেই আমাদের ভাল করা উচিত ছিল। আমার মনে হয় এই জিনিসটা আমরা পিছিয়ে গেছি। প্রথম ইনিংসে যদি আমরা ২০০ বা তার বেশি করতে পারতাম তাহলে হয়তো আমাদের আরেকটু ভাল সুযোগ ছিল। কারণ এই উইকেটে হয়তোবা ৩৪০ তাড়া করা কিছুটা অবশ্যই অতিরিক্ত চাপ ছিল।’ ব্যাটসম্যানরা প্রথম ইনিংসে পারেননি, দ্বিতীয় ইনিংসেও পারলেন না। একেবারেই মেলানো গেল না চট্টগ্রাম টেস্টের ব্যাটিং নৈপুণ্যের সঙ্গে। মাত্র সপ্তাহ খানেকের ব্যবধানে এমন বিপর্যস্ত ও বেহাল চেহারার ব্যাটিং অভাবনীয়ই ছিল। এ বিষয়ে মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে এসেছিলাম ব্যাটসম্যানদের ওপর ভরসা করে। সে জন্যই আমরা এই উইকেট বানিয়েছি। আমাদের স্পিন আক্রমণও ভাল ছিল। আপনি ড্রয়ের জন্য খেললে তো আগের কথাই হয়ে গেল। অন্তত আপনার সুযোগ তো থাকবে জিততে পারেন বা হারতে পারেন। আপনাকে অন্তত মনোভাব প্রদর্শন করতে হবে, আপনাকে বল বিশ্লেষণ করতে হবে সঠিকভাবে। যে আপনি কোনটা শট খেলবেন, কোনটা রক্ষণাত্মকভাবে মোকাবেলা করবেন। না হলে আসলে কঠিন। আমাদের মধ্যে যে কথা হয়েছে, আমাদের মনোভাবটা ইতিবাচক থাকবে। কিন্তু আমরা যদি বারবার ডিফেন্ড করতে থাকি, বোলারদের সুযোগ দিতে থাকি এখানে একটা বল স্পিন হচ্ছে, একটা সোজা যাচ্ছে, একটা লোয়ার বাউন্স হচ্ছে, একটা নিচেও নামছে। সেদিক থেকে মনে হয় আপনি সুযোগ দিচ্ছেন। সেদিক থেকে বলব, ওরা সবসময় চাপটা বজায় রেখেছে।’ স্পিনিং উইকেটেও মোসাদ্দেক হোসেনকে বাদ দিয়ে একাদশে সাব্বির রহমানকে খেলানো নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু এর পক্ষে মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘সাব্বিরকে নেয়ার কারণ ছিল যে ও স্পিনে খুব ভাল খেলে। সুইপ, রিভার্স সুইপ এগুলো খুব ভাল প্রয়োগ করতে পারে। আর আমার মনে হয় এই উইকেটে, যেটা আগে বললাম আক্রমণাত্মক মনোভাব না থাকলে সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। এই ইনিংসেও দেখেন, মুমিনুল যখন বল করছিল ৩৩ রান করল ৪৭ বলে। ইতিবাচক মনোভাব না থাকলে খুব কঠিন। ক্রিকেট খেলা তো একটা বাজির মতো। আমরা জানতাম যে ওদের স্পিন বিভাগটা খুব ভাল। আর আমাদের স্পিন বিভাগও ব্যাক করেছিল। জানতাম আমাদের ব্যাটসম্যানদের জন্যও চ্যালেঞ্জিং হবে কিন্তু আমরা আমাদের ব্যাটসম্যানদের ওপর ভরসা রেখেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ব্যাটসম্যানরা ভাল পারফর্ম করতে পারেনি।’ ব্যাটসম্যানদের এই ব্যর্থতা দলকে লজ্জার পরাজয় এনে দিয়েছে। কিন্তু হারজিত চিন্তা না করে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে খেললে সাফল্য ধরা দেবেই বলে দাবি মাহমুদুল্লাহর, ‘আমাদের ব্যাটসম্যানরা পারফর্ম করতে পারেনি তাই এখন এই ধরনের কথা হচ্ছে। আমরা ঘরের মাঠে ম্যাচ জিতেছি, শ্রীলঙ্কায় ম্যাচ জিতেছি। তো আমার মনে হয়, এই ধরনের বাজিগুলো ধরতেই হবে। নাহলে এভাবে টেস্ট ক্রিকেট খেলে কোন লাভ নেই। আমি মরা উইকেটে খেলব, বা জয়ের জন্য খেলব- তাহলে মনে হয় আমাদের ক্রিকেট এগোবে না। সাফল্য আসবে, ব্যর্থতা আসবে। সাফল্য আপনাকে আত্মবিশ্বাস দেবে, আমাদের আরও উন্নতিও হবে। আমরা এখনও ইতিবাচক। আমরা জানতাম এখানে ফল হবে, স্পিন উইকেট হবে। আমার বিশ্বাস আমাদের সামর্থ্য আছে, প্রদর্শন করতে পারিনি। দক্ষতাটা দেখাতে পারিনি। যেদিন আমরা স্কিলটা দেখাতে পারব, ভাল ফল দেখবেন।’
×