ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভারপ্রাপ্তদের ভারে ভারাক্রান্ত ধামইরহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

প্রকাশিত: ০৪:২২, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ভারপ্রাপ্তদের ভারে ভারাক্রান্ত ধামইরহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ ধামইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভারপ্রাপ্তদের ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালটি একদিকে যেমন ডাক্তার সঙ্কটে সাধারণ রোগীদের ভোগান্তি বেড়েছে, অন্যদিকে দেড় শতাধিক জনবল সঙ্কটে মুখ থুবড়ে পড়েছে এখানকার চিকিৎসা সেবা। সবকিছু মিলিয়ে এখানকার চিকিৎসা সেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে। ধামইরহাট হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আরাফাত ইমাম জানান, অর্থোপেডিক, শিশুরোগ ও গাইনী রোগ বিশেষজ্ঞ, মেডিসিন, কার্ডিওলজি, চক্ষু ও এনেসথেসিয়াসহ ২৯ জন চিকিৎসকের পদ মঞ্জুরি থাকলেও পদগুলো শূন্য রয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে তিনিসহ চিকিৎসক মাত্র ৪ জন। ৪ জনের একজন ডাঃ মেশকাত রায়হান পদে মেডিক্যাল অফিসার হলেও তাকে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেয়া আছে। এছাড়াও মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ অনুপম কুমার পাল ও ডাঃ আবু রাইহান আলবেরুনী জরুরী বিভাগ ও বহিঃবিভাগে এবং ডাঃ সাদাত আনাম আজাদ ধামইরহাট ও পার্শ্ববর্তী বদলগাছী উপজেলার ডেন্টাল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রায় দুই যুগ ধরে এই উপজেলায় কোন গাইনী চিকিৎসক নেই। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চক্ষু, মেডিসিনসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ডাক্তার না থাকায় মাত্র ৪ ডাক্তার দিয়ে সেবা দিয়ে নিজেরাই সন্তুষ্ট নন এখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসকরা। ডাঃ আরাফাত ইমাম প্রশাসনিক ও ডাঃ মেশকাত রায়হান জরুরী বিভাগের পাশাপাশিও ভারপ্রাপ্ত আরএমও দায়িত্ব পালন করতে থাকে মাত্র ২ জন চিকিৎসক। এছাড়াও ট্রেনিং ও বিভিন্ন দাফতরিক কাজে জেলা, বিভাগ ও ঢাকা যেতে হয় ওই চিকিৎসকদেরই। হাসপাতাল প্রায় তখন ডাক্তার শূন্যই বলা চলে। ধামইরহাটের ৮ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় প্রায় ২ লাখ মানুষের বসবাস। সেখানে মাত্র ৩টি সাব-সেন্টার ও উপজেলায় ১টি হাসপাতালে জনবল সংকট যেন বড় মহামারী। হাসপাতালে শিশু রোগী, চলতি মৌসুমে শীতজনিত রোগী ও ডায়রিয়া রোগী এবং বিশেষ করে প্রসূতি মায়েদের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় অন্যত্র ক্লিনিক বা হাসপাতালে গুনতে হয় অধিক অর্থ। গত জুলাই মাসে বিতর্কিত উপজেলা ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মাজেদুর রহমান বদলি হওয়ার প্রায় ৪ মাস পরে ওই পদে ডাঃ রাশেদুল হাসান স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি মাত্র ২ মাস দায়িত্ব পালন না করেই অন্যত্র বদলি নিয়ে চলে যান। এছাড়াও উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার (স্যাকমো) পদে ১০ জন কর্মরত থাকলেও ডেপুটেশনে ৩ জন অন্যত্র কর্মরত আছেন। বর্তমানে ডাঃ আরাফাত ইমাম প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জরুরী ও আউটডোরে চিকিৎসা প্রদান করেন। নির্ধারিত উিউটির পাশাপাশি ডাঃ মেশকাত রায়হান আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন এবং অপর মাত্র ২ জন চিকিৎসক ডাঃ অনুপম কুমার ও আবু রাইহান আল বেরুনী রেগুলার বাড়তি সময় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। এই মুহূর্তে ১২৩ জন জনবল সঙ্কটের কবলে ধামইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। আউটসোর্সিং ও বিভিন্ন পন্থায় আউটডোর ও ফার্মাসি বিভাগে কিছু লোক দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে চলছে অন্যান্য কার্যক্রম। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কোন চিকিৎসক ২ বছরের নিচে কর্মস্থল থেকে বদলি নিতে পারবে না, এমন ঘোষণা দিলেও অদৃশ্য শক্তির ইশারায় ধামইরহাটে ৩ মাসও পার হয় না কোন চিকিৎসকের দায়িত্বকাল। বদলি নিয়ে চলে যান অন্যত্র।
×