ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চিতলমারীর শুঁটকিপল্লী এখন জমজমাট

প্রকাশিত: ০৮:৪০, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

চিতলমারীর শুঁটকিপল্লী এখন জমজমাট

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ চিতলমারী উপজেলায় মিষ্টিপানির দেশী মাছের শুঁটকিপল্লী এখন জমজমাট। প্রতিবছর অগ্রহায়ণ থেকে চৈত্র এই পাঁচ মাস সরব থাকে শুঁটকি পল্লীর ক্রেতা, বিক্রেতা ও শ্রমিক। মিষ্টিপানির এই শুঁটকিমাছ সরবরাহ করা হয় চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, চান্দিনা, সৈয়দপুর, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। তবে চিতলমারী অঞ্চলের মানুষের কাছে শুঁটকিমাছের চাহিদা এখনও তৈরি হয়নি। চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ সজল কান্তি বিশ্বাস বলেন, চিতলমারী এলাকার মানুষের শুঁটকিমাছ খাওয়ার প্রবণতা নেই। কিন্তু মিষ্টিপানির ছোট মাছ অত্যন্ত পুষ্টিকর। মিষ্টিপানির শুঁটকিমাছে প্রচুর ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন-ডি রয়েছে, এতে দেহের হাড় ক্ষয়রোধসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। কিন্তু কষ্ট করে কোটা-বাছা করতে হয় বলে মানুষ এখন তা তেমন একটা খেতে চায় না। অপরদিকে, সমুদ্রের মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়োডিন ও মিনারেল। চিতলমারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, চিতলমারীতে কয়েক বছর ধরে পাঁচটি গ্রামে মিষ্টিপানির দেশী ছোট মাছের শুঁটকি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চরকুরালতলার একটি শুঁটকিপল্লী আমি পরিদর্শন করেছি। সেখানে কোন মাছে বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে না। মাছে বিষ প্রয়োগ এবং শিশু শ্রমিক ব্যবহার না করলে কোন ক্ষতি নেই। শুঁটকিপল্লী তৈরি ও পরিচালনার ক্ষেত্রে আইনগত কোন বাধা নেই। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, চিতলমারী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের এক লাখ ৩৮ হাজার আট শ’ ১০ মানুষের বছরে মাছের চাহিদা রয়েছে প্রায় তিন হাজার মেট্রিকটন। ২০১৭ সালে চাষকৃত মাছের উৎপাদন হয়েছে প্রায় নয় হাজার ১৩৬ মেট্রিকটন এবং নদী-খাল-বিলের মাছের উৎপাদন হয়েছে প্রায় এক শ’ ১৭ মেট্রিকটন। চিতলমারী উপজেলায় মাছের ঘের সংখ্যা ১৬ হাজার সাত শ’ ১০টি, পুকুর রয়েছে ছয় হাজার নয় শ’ ৪৫টি, নদী তিনটি, খাল ৫০টি এবং বিল রয়েছে চারটি। পরিবেশ দূষণের কথা চিন্তা করে লোকালয় হতে দূরে চিতলমারীর হিজলা ইউনিয়নের চরকুরালতলা গ্রামের ফাঁকা মাঠের মধ্যে ১৩ শতক জমিতে এ বছর শুঁটকিপল্লী স্থাপন করেছেন বাদশা শেখ, দাউদ শেখ, এমদাদ মোল্লা ও সোয়েব গাজী। সোয়েব গাজী জানান, চিতলমারী উপজেলা যেহেতু মিষ্টিপানির ঘেরপ্রবণ এলাকা রয়েছে বড় বড় বিল, তাই প্রাকৃতিক নিয়মেই এখানে প্রচুর পরিমাণে ছোট মাছ জন্মায় এবং মারা যায়। তাই মানুষের চাহিদা বিবেচনা করে এসব মাছ শুকিয়ে বাজারজাতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যাতে প্রতিবছর হাজার মণ মিষ্টিপানির ছোট মাছ বিনষ্ট না হয়। বাদশা শেখ জানান, চিতলমারী উপজেলার চরকুরালতলা, বারাশিয়া, কলিগাতী, হিজলা, ডুমুরিয়া গ্রামে গত তিন বছর ধরে সাদা মাছ শুকিয়ে বিক্রির প্রবণতা শুরু হয়েছে। হেমন্তকালে অর্থাৎ অগ্রহায়ণ মাসে শুঁটকি তৈরির আয়োজন শুরু করা হয়। চিংড়ি ও সাদা মাছের আড়তগুলো হতে প্রতিদিন সকালে অল্প দামে তাজা ছোট মাছ ক্রয় করা হয়। শুঁটকিপল্লীতে আনার পর নারী শ্রমিকরা তা কুটাকুটি (মাছের আঁশ ছাড়িয়ে বেছে পরিষ্কার) করে। এরপর মাছগুলো পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে বানায় (মাচা) শুকানো হয়। তিন-চার দিনের রোদে মাছগুলো শুকিয়ে শক্ত হয়। প্রস্তত থাকে ক্রেতা পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তারা পল্লীগুলো হতে মাছ নিয়ে সরবরাহ করে দেশের বিভিন্ন বাজারে। পাইকারি শুঁটকি বিক্রেতা বাদশা শেখ জানান, প্রতি তিন কেজি কাঁচামাছ শুকানোর পর এক কেজি পরিচ্ছন্ন শুঁটকি মাছ পাওয়া যায়। কাঁচামাছ প্রতিকেজি ২৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ দেড় শ’ টাকা দরে ক্রয় করা হয়। তা প্রক্রিয়ার পর শুঁটকি তৈরি শেষে বিক্রি হয় প্রতিকেজি বাইনমাছ ৮শ’ টাকা, শৈলমাছ ৭শ’ টাকা, টেংরামাছ ৪শ’ টাকা, পুঁটিমাছ এক শ’ টাকা দরে।
×