ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিয়ায় বিষাক্ত গ্যাস হামলা নিয়ে রুশ-মার্কিন বিতর্ক

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সিরিয়ায় বিষাক্ত গ্যাস হামলা নিয়ে রুশ-মার্কিন বিতর্ক

সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ক্লোরিন গ্যাস হামলার ঘটনায় ওয়াশিংটনের নিন্দা প্রস্তাব নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়ে। সাম্প্রতিক এসব হামলায় শিশুসহ বহু লোক আহত হয়। খবর এএফপি। নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বলেন, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ঘৌতার পূর্বাঞ্চলে যে ক্লোরিন গ্যাস হামলা হয়েছে সেই বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত বহু মানুষের দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা থেকেই ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হয়। নিকি হ্যালি বলেন, সোমবার বিগত কয়েক সপ্তাহ যাবত আসাদ সরকার যে সেখানে ক্লোরিন গ্যাস হামলা চালিয়েছে সে সংক্রান্ত তথ্য প্রতিবেদন আমাদের কাছে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ঘৌতার ডোমা শহরে পহেলা ফেব্রুয়ারি যে বিষাক্ত গ্যাস হামলা চালানো হয়, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে কঠোর নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এই হামলায় শিশুসহ ২০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিক মারাত্মকভাবে আহত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে রাশিয়া দেশটির বিরুদ্ধে সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ এনেছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, ভিত্তিহীন এসব অভিযোগের মাধ্যমে মার্কিনীরা আসাদের সুনাম ক্ষুণœ করতে চায়। জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, আমাদের কাছে এটি পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, রাসায়নিক অস্ত্র হামলাকারী চিহ্নিত না হওয়া সত্ত্বেও এই নিন্দা প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সিরীয় সরকারকে অভিযুক্ত করা। এ ছাড়াও রাশিয়ার পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপনের জন্য মার্কিন প্রস্তাবের খসড়াতে সংশোধনী আনার কথা বলা হয়েছে। সংশোধিত এই প্রস্তাবে পূর্ব ঘৌতার ওপর হামলার কথা উল্লেখ না করে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় রাসায়নিক হামলার তদন্ত বিশ্বাসযোগ্য ও পেশাগত দক্ষতায় সম্পন্ন করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। মার্কিনীরা তাদের প্রস্তাবে কোন ধরনের পরিবর্তনের বিষয় প্রত্যাখ্যান করে, যার দরুন শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদে কোন যৌথ বিবৃতি গৃহীত হয়নি বলে কূটনীতিকরা জানিয়েছেন। নিকি হ্যালি, ক্লোরিন গ্যাসে আক্রান্ত সিরীয় শিশুদের তীব্র শ্বাসকষ্টের জন্য একটি সাধারণ নিন্দা প্রস্তাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য রাশিয়ার সমালোচনা করেন। এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে বলা হয়েছিল যে, বিগত ৩০ দিনে সিরিয়ায় বৃহস্পতিবারের হামলা নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বিষাক্ত গ্যাসের হামলা পরিচালনা করা হয়Ñযা রীতিমতো আতঙ্ক ও উদ্বেগের সৃষ্টি করে। এ প্রসঙ্গে মার্কিন মুখপাত্র হিদার নুয়ের্ত তার এক বিবৃতিতে বলেন, সিরিয়াকে দোষারোপের দায় থেকে রক্ষা করার মাধ্যমে রাশিয়া বিশ্বশান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে তার অঙ্গীকার থেকে সরে আসল। তিনি বলেন, সিরিয়ায় যারাই রাসায়নিক বোমা হামলা করুক-তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। সিরিয়ার সমস্ত মানুষ দুঃখ দুর্দশায় কষ্ট পাচ্ছে আর বিশ্ব তা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। হিদার নুয়ের্তের এই রূঢ় বিবৃতির কারণ হচ্ছে যে এর আগেও রাসায়নিক গ্যাস হামলার দু’টি তদন্ত উদ্যোগ রাশিয়ার ভেটো প্রদানের ফলে ভেস্তে যায়। জাতিসংঘ তদন্তে বাধা দিতে গত নবেম্বরে রাশিয়া দু’বার তার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে। এর পর রাশিয়া নিজে থেকে উদ্যোগ নিয়ে একটি তদন্তের খসড়া প্রস্তাব দেয় কিন্তু তদন্ত প্যানেলে অংশগ্রহণকারীদের নিরপেক্ষতা নিয়ে পাশ্চাত্য কূটনীতিবিদরা সংশয় প্রকাশ করলে শেষ পর্যন্ত তা বাতিল হয়ে যায়। এর নিরপেক্ষতা নিয়ে নিকি হ্যালি বলেন, এটি মোটেই নিরপেক্ষ কোন তদন্ত প্রক্রিয়া নয়-বরং রাসায়নিক গ্যাস হামলার তথ্য গোপন করার রুশ উদ্যোগ-যাতে আসাদ সরকারকে দায়মুক্তি বা হোয়াইট ওয়াশ করা যায়। কেননা, রাশিয়া আসাদ সরকারের অপকর্ম ধামাচাপা দিতে এর আগেও ভেটো দিয়েছিল। ২০১৬ সালের এপ্র্রিলে সিরিয়ার খান শেই খুন শহরে সারিন গ্যাস হামলায় বহু লোক নিহত হয়। ২০১৪ ও ২০১৫ সালের ক্লোরিন গ্যাসের প্রভাবে অনেকে হতাহত হয়- কিন্তু রাশিয়ার পক্ষপাতমূলক আচরণে সব তদন্ত প্রচেষ্টা বানচাল হয়ে যায়।
×