ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশ ৩৭৪/৪, মুমিনুল ১৭৫, মাহমুদুল্লাহ ৯ রানে অপরাজিত

চট্টগ্রাম টেস্টে টাইগারদের স্বস্তির প্রথম দিন

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

চট্টগ্রাম টেস্টে টাইগারদের স্বস্তির প্রথম দিন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম সেশনে দুটি উইকেটের পতন ঘটেছে। শেষ সেশনে আরও দুটি উইকেটের পতন ঘটেছে। কিন্তু মাঝের সেশনে যে খেলা দেখিয়েছেন মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহীম, তাতেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথমদিনটি বাংলাদেশের হয়ে গেছে। মুমিনুলের অপরাজিত ১৭৫ রানের ইনিংস, মুশফিকের ৯২ রানের ইনিংস, এই দুই ব্যাটসম্যানের তৃতীয় উইকেটে করা ২৩৬ রানের রেকর্ড জুটিতে প্রথমদিনটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে। বাংলাদেশ যে ৪ উইকেট হারিয়ে প্রথমদিনে ৩৭৪ রান করেছে তা আবার একদিনে তোলা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও হয়ে গেছে। দিনটিতে লিটন কুমার দাস ছাড়া বাকি ব্যাটসম্যানরা নিজেদের মেলে ধরতে পেরেছেন। শুরুতে তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস ৭২ রানের জুটি গড়েছেন। তামিম ইকবাল শুরুটা দুর্দান্ত করেন। কিন্তু যখনই রান বাড়তে থাকে তার যেন আউট হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়তে থাকে। ইদানীং এমন অবস্থাতেই দাঁড়িয়ে গেছেন তামিম। এবারও যেমন হাফ সেঞ্চুরি করে আরও ২ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করতেই দিলরুয়ান পেরেরার স্পিন বলে বোল্ড হয়ে গেলেন। ইনিংস বড় করতে থাকেন তামিম। কিন্তু যেই হাফ সেঞ্চুরি হয় কিংবা সেঞ্চুরির কাছাকাছি যান তখনই যেন আউট হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আউটও হয়ে যাচ্ছেন। ইমরুল দুর্দান্ত ব্যাটিং করছিলেন। কিন্তু ৪০ রান করতেই সান্দাকানের স্পিন ঘূর্ণি বুঝতে না পেরে এলবিডাব্লিউ হয়ে যান। অবশ্য চাইলে ‘রিভিউ’ নিতে পারতেন। তাতে বেঁচেও যেতেন। কিন্তু মুমিনুল হকের সঙ্গে আলোচনা করে আর ‘রিভিউ’ নেননি। দুই ওপেনার প্রথম সেশনেই আউট হয়ে যান। তবে ইমরুল আউট হওয়ার আগেই স্কোরবোর্ডে ১২০ রান যোগ হয়ে যায়। প্রথম সেশনে ২ উইকেট হারিয়ে ১২০ রানও যোগ করে বাংলাদেশ। এরপরই যেন আসল রূপ দেখা যায়। মুমিনুল ও মুশফিক মিলে যে দ্বিতীয় সেশনে দুর্দান্ত ব্যাটিংটা করেন, তাতেই যেন শ্রীলঙ্কার খবর হয়ে যায়। লঙ্কান বোলাররা এত চেষ্টা করেও দুইজনকে থামাতে পারেননি। টেস্ট মেজাজে ব্যাটিং কিভাবে করতে হয় তা যেন মুশফিক বোঝাতে থাকেন। আরেকদিকে মুমিনুল নিজের স্কোরবোর্ডে রান জমা করতে থাকেন। তাতে করে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড ফুলতে থাকে। দুইজন মিলে দ্বিতীয় সেশনে ১৩০ রান যোগ করেন। বাংলাদেশ ২০০ রানও করে ফেলে। দ্বিতীয় সেশন শেষ হওয়ার আগেই ২৫০ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হয়ে যায়। কোনভাবেই মুমিনুল ও মুশফিককে রুখতে পারেননি লঙ্কান বোলাররা। নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিতে থাকেন। দ্বিতীয় সেশন শেষ হওয়ার আগেই মুমিনুল টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি করে ফেলেন। তিন বছর পর আবার টেস্টে সেঞ্চুরির দেখা পান। ক্যারিয়ারের পাঁচ টেস্ট সেঞ্চুরির মধ্যে চারটি সেঞ্চুরিই চট্টগ্রামে করেন মুমিনুল। এই সেঞ্চুরি পেয়ে এমন উদযাপন করেন যা দেখার মতোই ছিল। মুমিনুলের সেঞ্চুরিতে মুশফিক এমনই খুশি হন যেন নিজে সেঞ্চুরি করেছেন। তখনই বোঝা হয়ে যায় দলের ক্রিকেটারদের মতো এখন কতটা ঐক্যতান রয়েছে। একজনের সাফল্যে আরেকজন কতটা খুশি, আনন্দিত। যা দলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করে দেবে। ঠিকই তাই হয়েছে। তৃতীয় সেশন শুরু হওয়ার পরপরই হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেন মুশফিকও। দলও তিন শ’ রান করে ফেলে। তৃতীয় উইকেটে দুইজন মিলে ২০০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। ততক্ষণে তৃতীয় উইকেট জুটিতে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ জুটিও গড়ে ফেলেন। এর আগে ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তামিম ও মুমিনুল ১৫৭ রানের সর্বোচ্চ জুটি গড়েছিলেন। মুমিনুল ও মুশফিক মিলে সেই জুটির রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যান। তাতেই দলের স্কোরবোর্ড অনেক মজবুত হয়ে ওঠে। মনে করা হচ্ছিল, উইকেট আর পড়বে না। দিনটি এ দুইজনই শেষ করে ফেলবেন। কিন্তু দিনের শেষদিকে এসেই টপাটপ দুটি উইকেট পড়ে যায়। দলের স্কোরবোর্ডে যখন ৩৫৬ রান হয় মুশফিকের রান হয় ৯২। সেঞ্চুরি থেকে আর ৮ রান দূরে থাকেন। ঠিক এমন সময়ই নতুন বলে লাকমালের ওপরে ওঠা বলটিতে হাল্কা ছোঁয়া লাগাতে গিয়েই উইকেটরক্ষকের কাছে ক্যাচ আউট হয়ে যান মুশফিক। তাতে করে মুমিনুল-মুশফিকের জুটি ভেঙ্গে যায়। ১৯২ বলে ১০ চারে ৯২ রান করেন মুশফিক। এত সুন্দর খেলছিলেন। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের জন্য আউট হতে একটি ভাল বলই যথেষ্ট। মুশফিকের বেলাতে সেই ভাল বলটিই হলো। মুশফিক চাইলে বলটি ছাড়তেও পারতেন। কিন্তু না ছাড়তে গিয়েই আউট হয়ে গেলেন। দিন শেষ হতে তখন ৬ ওভার ১ বল বাকি ছিল। এমন সময় মুশফিক আউট হওয়ার পরের বলেই লাকমালের দুর্দান্ত ইনসুইং বলে লিটন বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন। ব্যাট হাতে তখন নামেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। যিনি ইনজুরিতে এ টেস্ট খেলতে না পারা সাকিব আল হাসানের পরিবর্তে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার নেতৃত্বের শুরুর দিনটাও দুর্দান্ত কাটছে। এরপর আর কোন উইকেট পড়েনি। মুমিনুল ও মাহমুদুল্লাহ মিলে দিনটি শেষ করলেন। দিন শেষ হওয়ার আগে ৩৭৪ রান বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে যোগ হয়ে যায়। যা প্রথমদিনে টেস্টে বাংলাদেশের করা সর্বোচ্চ রান। এর আগে ২০১২ সালে খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৮ উইকেটে ৩৬৫ রান করেছিল বাংলাদেশ। এত বেশি যে রান হয়েছে তা মুমিনুল ও মুশফিকের দুর্দান্ত ইনিংসের জন্যই সম্ভব হয়েছে। তবে দিনটিতে মুমিনুল দেখিয়েছেন আসল ঝলক। মুমিনুল শেষ পর্যন্ত টিকে থাকেন। আজও মাহমুদুল্লাহকে (৯*) নিয়ে ব্যাট করতে নামবেন। ২০৩ বলে ১৬ চার ও ১ ছক্কায় ১৭৫ রান করেন মুমিনুল। দল ৩৭৪ রান করেছে। তার মধ্যে মুমিনুলের ব্যাট থেকেই এসেছে ১৭৫ রান। আর ২৫ রান হলে ডাবল সেঞ্চুরি করবেন মুমিনুল। ৯৬ বলে সেঞ্চুরি করার পর ১৭০ বলে গিয়ে ১৫০ রান করেন মুমিনুল। দিন শেষে বাংলাদেশের এত ভাল দিনের চেয়েও বেশি আলোচনা জুটিয়েছে মুমিনুলের অসাধারণ ইনিংসটিই। এ ইনিংসটির জন্যই যে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথমদিনটি বাংলাদেশ নিজেদের করে নিতে পেরেছে।
×