ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

মিডনির মেলব্যাগ ॥ নব্য সুশীলদের অযাচিত বিরোধিতা বনাম উন্নয়নের রাজনীতি

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ২১ জানুয়ারি ২০১৮

মিডনির মেলব্যাগ ॥ নব্য সুশীলদের অযাচিত বিরোধিতা বনাম উন্নয়নের রাজনীতি

আওয়ামী লীগের কাছে সবার এত চাওয়া কেন? যারা এর ঘোর বিরোধী যাদের অন্তরে জামায়াত ভোটে ধানের শীষ তারাও দেখি চায় আর চায়। দেশের নাগরিক হিসেবে চাওয়ার অধিকার আছে বৈকি। কিন্তু কতটা? আপনি সারাদিন সারারাত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলবেন, নৌকা ডোবানোর কাজ করবেন আর হা-হুতাশ করবেন এই সরকারের কাছে চাওয়া ছিল, কিন্তু পেলাম না। এটা কি স্ববিরোধিতা না? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় গুণ তিনি স্পষ্টভাষী। যা তাঁর অন্তরে তাই তাঁর মুখে। নব্য সুশীলরা এটা মানতে পারেন না। কেন? কারণ তাঁরা নিজেরাই হিপোক্রেট। কেন জানি না এরা সমাজে পপুলার। ধারণা করি মধ্যবিত্তের দোদুল্যমান মন এদের দিকে ঝুঁকে থাকার কারণ ককটেল রাজনীতি। এরা মনে মনে পাকিদের ভালোবাসে। মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে। ধ্যান ধারণায় আধুনিক দেখায় বা বলে। আর কাজে নারী ভোগী। টাকা পয়সার ধান্ধায় জীবন কাটিয়ে কেউ বাম কেউ বা ডান। এদের আমরা হাঁড়ে হাঁড়ে চিনলেও কেন জানি এড়াতে পারি না। আসিফ নজরুলের কথাই ধরুন জীবনভর আওয়ামী লীগের মাথা খাবার ধান্ধা আর মুখে বড় বড় কথা। দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে তিনি কি কি ত্যাগ করেছেন বিবাহিত স্ত্রীদের ছাড়া? এ হিসাব কেউ করে না। এমন বুদ্ধিজীবীরাই আজ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। এদের কথা শুনলে দেশ কোনদিনও এগুতে পারবে না। সরকারী দলের সঙ্গে সুশীলদের মতবিরোধের খবর প্রায়ই চোখে পড়ে। দেশে দেখলাম সুশীলদের একাংশ নীরব। যারা নীরব তারাই আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবী। এদের নীরবতার কারণ দুটো। এক. যাঁরা বলতে চান বা বলার ব্যাপারে আগ্রহী তাঁরা সম্মুখসারিতে নেই। বাকিরা সরকারের নামে কামানোর কাজে ব্যস্ত। অন্যদিকে এই সুযোগে আর এক অংশ যারা এখন জনপ্রিয় কিংবা আলোচিত তারাই সরব। বলা হয়, তারা মন খুলে কথা বলতে পারেন না। পারলে তাদের উধাও হয়ে যেতে হয়। যখন ফিরে আসেন তখন নাকি আর কথা বলেন না। হতে পারে। তবে প্রশ্ন আছে। যখন তারা মুখ খোলেন তখনই তারা আসলে সামান্য শিষ্টাচারও মানেন? জানি না কি কারণে আমাদের দেশে এখন কথার জয়জয়কার। এখন সবাই বলে। শোনার মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমছে। আর এই চান্সে তারা সরকার বিরোধিতা আর রাষ্ট্র বিরোধিতা গুলিয়ে মহাআনন্দে রাজাকারী চেতনা ফেরি করেন। আপনি যদি ভাল করে হিসাব মিলিয়ে দেখেন রুটিনমাফিক কথা বলা ছাড়া এদের কোন ভূমিকা নেই। শেখ হাসিনা যে বলেন তাঁর কাজই তাঁর দুশমন কথাটা আসলেই সত্য। এরা কাজের আলো নিতে না পারা প্যাঁচার মতো। রাত হলে বেরিয়ে আসে আর অশুভ ডাক দিয়ে সমাজকে আতঙ্কিত করে তোলে। যেটা চোখে লাগে যিনি বা যারাই বলতে আসেন মনে হয় তেতে আছেন। রাত দুপুরে বা মধ্যরাতের কিছু আগে এই আয়োজনগুলোর ভেতর তৃতীয় মাত্রা বা এ জাতীয় কয়েকটি অনুষ্ঠান বাদে বাকিগুলোতে দেখি প্রায়ই ঝগড়াঝাটি লেগে আছে। থাকলেও আপত্তি ছিল না। কিন্তু একটা বিষয় ভুলে গেলে চলবে না দর্শকদের ভেতর রুগ্ন নরম হার্টের মানুষও আছেন। যারা মাঝরাতে এই হৈ চৈ নিলে গুরুতর শারীরিক সমস্যার কবলে পড়তে পারেন। সেসব ভুলে বাকযুদ্ধে লিপ্ত সুশীলরা আসলে কি বলেন বা কি বলতে চান বহুলভাবে সেটাই ধোঁয়াশা। এই কথা বলার রেওয়াজ এখন রাজনৈতিক নেতাদের বেলায় লাগাম ছাড়িয়ে গেছে। সরকারী দলের নেতারা যখন যা খুশী বলেন। একেবারে টপলেভেলের মানুষ যখন লাগাম রেখে কথা বলেন না তখন বাকিরাও কাছকাছি যাবেন বৈকি। যে কথা বলছিলাম বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারে গেলেই বুদ্ধিজীবী বা সুশীলদের ভেতর এক ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। বিশেষত একদা চীনাপন্থী বাম বা আওয়ামী বিরোধী সবশক্তি চাঙ্গা হয়ে ওঠে। এদের বদ্ধমূল ধারণা দেশ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। কে কার কাছে কতবার বেচল তার হিসাব নিলে এরা আর মুখ দেখাতে পারবেন না। তবু এই ভাঙ্গা রেকর্ড বাজছেই। বাস্তবে বুদ্ধিজীবীরাও বিভ্রান্ত। তাদের বাড়িতে বাড়িতে হিন্দী সিনেমা আর সিরিয়ালের ছড়াছড়ি। ঘরে চলছে জী বাংলার জয়জয়কার। দোষ কি মানুষের? বিনোদন বাক্স যদি সারা দিনরাত খালি কথার ফাইটিং আর নেতাদের মুখ দেখাতে থাকে তারা যাবে কোথায়? বিশেষ দূরে যাবার দরকার নেই মানুষকে সারেগামাপা আর সৌরভ গাঙ্গুলির দাদাগিরির কথা বললেই বুঝবেন তারা কি চায়? সেদিকটা মাটিচাপা দিয়ে রাতদিন ওবায়দুল কাদের রিজভী বা মির্জা ফখরুল কিংবা এরশাদ সাহেবকে দেখলে মানুষ কাঁহাতক নেবে এসব? বাংলাদেশের রাজনীতিতে সুশীলরা একসময় সমালোচনা আর আলোচনায় পজিটিভ ভূমিকা রাখতেন। এখন তাদের টার্গেট কেবলই শেখ হাসিনা। কৃপা পাবার জন্য বা না পাবার জন্য তার সমালোচনা আর নিন্দা এখন আর মানুষ খায় না। কারণ মানুষ মতিঝিল থেকে সরকারের দাপট সব দেখে এটা বুঝে গেছে। তার জীবনে শীলদের দরকার থাকলেও সুশীলের দরকার অতটা নোই। যদি এদেশে আহমদ ছফা কিংবা সরদার ফজলুল করিমের মতো মানুষেরা উঠে আসেন যারা কারও মুখের দিকে তাকিয়ে বলেন না বা লেখেন না তবেই হয়তো মানুষ আবার শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠবে। সুশীলরা ভালই বুঝেছেন দিনের আলোয় সকাল বিরোধিতা করে চোখে পড়লে রাতে আরামে থাকা যায়। সংস্কৃতি ধ্বংসের শেষ পেরেকটি ঠুকতে আমলাতন্ত্র ও সিন্ডিকেটের সঙ্গে রাজনীতি চলছে সমান তালে। আর সে কফিনে হাতুড়ি মারছে সুশীলরা। দেশে রাজনীতি মোকাবেলা করার জন্য রাজনীতি নেই। দল নেই। এমনকি সংস্কৃতিও এখন আধমরা। সুশীলরা সেদিকে মনোযোগ দিলেই ভাল করবেন। এই যে প্রণব বাবু এলেন এই যে সেতু নিয়ে বড়বড় বাকযুদ্ধ এই যে অসম উন্নয়নে এখন তেলও আমদানি করতে হবে এ নিয়ে সত্য বা সাহসের সঙ্গে কথা বলার কেউ আছেন আসলে? কেউ ফেলানীর কথা বলবে না। কেউ সেতুর আসল গুণ বা দোষ নিয়ে বলবে না। পাগলের মতো বলবে, সেতুতে না উঠতে। তেলের সঙ্কটের জন্য আসলে দেশের তেলখাত দায়ী? একটুও না। এত তেল দিনে রাতে দিতে থাকলে বা খরচ করলে সঙ্কট তো হবেই। সবাই জানেন বোঝেন কিন্তু মেনে নিতে বাধ্য হন। এই আমাদের সমাজ। আওয়ামী লীগের দুর্ভাগ্য দেশে দেশের বাইরে অসংখ্য সুশীল মেধাবী ও পরিণত মানুষের সমর্থন থাকার পরও তাকে স্তাবকেরা ঘিরে থাকে। বিএনপির সৌভাগ্য ঘটে বিদ্যা বুদ্ধি না থাকার পরও ম্যাডামের জন্য জান দিতে রাজি কথিত সুশীলের দল। সেটা আমরা সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিকের সম্পাদককে দেখলেই বুঝি। একদা বাম কীভাবে ডিগবাজি খেয়ে সং-এ পরিণত হতে পারেন। শেখ হাসিনা তেল ও পানির তফাৎ বোঝেন। তাই তাঁর কাছে ভিড়তে না পারার বেদনাও অনেককে বিদ্রোহী করে তোলে বৈকি। একবার ভেবে দেখতে বলি, এই ভদ্রমহিলা বঙ্গবন্ধু কন্যা না থাকলে কোথায় কথা বলবেন? কোন সেতু নিয়ে বাকযুদ্ধ করবেন? খালি খাম্বায় কি লড়াই জমে? অথচ সেই খাম্বাবাজের জন্য দুর্নীতির বরপুত্রের জন্য সুশীলদের যত মায়াকান্না। যারা চায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাক যারা চায় এদেশ ও সমাজ মুকতিযুদ্ধের চেতনায় বড় হোক, যারা চায় দেশ ও জাতি উন্নতির পথে থাক, তারা সুশীলদের কথায় কান না দিলেই ভাল করবেন। নারায়ণগঞ্জের মারামারি আইভী বনাম ওসমান বা আর্থিক খাতের ব্যাপারে যে অসন্তোষ কিংবা যশোর রোডের গাছকাটা নিয়ে যে বিতর্ক সে নিয়ে গঠনমূলক কথা হোক। সরকারকে সাবধান করা হোক। সামনের নির্বাচনে পজেটিভ ভূমিকা রাখুক তাঁরা। সেগুলো না করে সবকিছুর দায় আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার ওপর চাপিয়ে দেয়া সুশীলদের কথা না শুনেই এতটা এগিয়েছে সরকার ও দেশ। একথা ভুলে গেলে চলবে না। বাক স্বাধীনতা আর বাকযুদ্ধ, বাক মুক্ততা আর বাক সংযমের পার্থক্য বুঝেই তার সীমানা নির্ধারণ করা উচিত। সভ্য সমাজে সেটাই দেখি আমরা। [email protected]
×