ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিকান্দার-মাসাকাদজার ব্যাটিং নৈপুণ্যের পর চাতারার গতিঝড়

জিম্বাবুইয়ের কাছে ধরাশায়ী হাতুরার শ্রীলঙ্কা

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮

জিম্বাবুইয়ের কাছে ধরাশায়ী হাতুরার শ্রীলঙ্কা

মিথুন আশরাফ ॥ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের শততম ওয়ানডে ম্যাচটিতে বাংলাদেশ খেলতে পারেনি। ত্রিদেশীয় সিরিজের সূচীই এমন করা হয়েছে, খেলা বাংলাদেশের পড়েনি। পড়েছে শ্রীলঙ্কা আর জিম্বাবুইয়ের খেলা। মিরপুর স্টেডিয়ামের এমন ঐতিহাসিক দিনে জিম্বাবুইয়ে জয় তুলে নিয়েছে। সিকান্দার রাজা ও হ্যামিল্টন মাসাকাদজার জোড়া হাফ সেঞ্চুরির পর ৪ উইকেট নেয়া টেন্ডাই চাতারার গতির ঝড়ে ১২ রানে জয় পেয়েছে। জিম্বাবুইয়ের কাছে ধরাশায়ী হয়েছে শ্রীলঙ্কা। এ সিরিজের আগে গত বছর জুন-জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুইয়ে পরস্পরের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে হয়েছিল সিরিজ। সেই সিরিজে জিম্বাবুইয়ে ৩-২ ব্যবধানে জিতে। এই সিরিজ জেতায় জিম্বাবুইয়ের সাহসও বেড়ে যায়। শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারে সেই আত্মবিশ্বাস জন্মে। বাংলাদেশে যে খেলা হয়, ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়, সেটিতে জেতার আশা ছিল। কারণ উপমহাদেশের উইকেটেই (শ্রীলঙ্কার মাটিতে) শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে জিম্বাবুইয়ে। বাংলাদেশের মাটিও তাই। সেই আত্মবিশ্বাস এবার কাজে লেগেছে। সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম লড়াইয়েই জিতেছে জিম্বাবুইয়ে। বাংলাদেশের কাছে হারের পর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছে জিম্বাবুইয়ে। এ সিরিজে খেলতে নামার আগে শ্রীলঙ্কা যেন একটি নতুন দলেই পরিণত হয়। বাংলাদেশ দলের সাবেক কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে শ্রীলঙ্কা দলের দায়িত্ব নেন। এ সিরিজ দিয়েই হাতুরাসিংহের শ্রীলঙ্কা যুগের শুরু হয়। বুধবার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই সেই যুগের যাত্রা শুরু হয়ে যায়। শ্রীলঙ্কা দলে আবার এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসও নতুনভাবে ওয়ানডের নেতৃত্ব নেন। তিনি আর ওয়ানডে অধিনায়ক হবেন না এমনই ভাবা হয়েছিল। কিন্তু ম্যাথুসকে রাজি করান হাতুরাসিংহে। এই নতুন শুরুর প্রথম ম্যাচে ধরাশায়ী হয় শ্রীলঙ্কা। হাতুরাসিংহে নিজের প্রথম সিরিজের এ্যাসাইনমেন্টের প্রথম ম্যাচেই হার দেখেন। জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানরা সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে বুঝে উঠতে পারেননি। সঙ্গে বাংলাদেশের বোলিং এতটাই ভাল হয়েছে যে কুলিয়েও উঠতে পারেননি। তাই জিম্বাবুইয়ে ইনিংসে ধস নেমেছে। এবার জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানরা নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছেন। সিরিজে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সিকান্দার রাজা ছাড়া অন্য ব্যাটসম্যানরা উইকেট আঁকড়ে থাকতে পারেননি। বাংলাদেশ বোলারদের সামনে দাঁড়াতে পারেননি। কিন্তু শ্রীলঙ্কা বোলারদের সামনে ঠিকই হার মানেননি। হ্যামিল্টন মাসাকাদজা যেমন ৭৩ রানের ইনিংস খেলেছেন। যে ইনিংসে ভর করে শুরুটা দুর্দান্ত হয় জিম্বাবুইয়ের। এরপর সুলেমন মিরের ৩৪, ব্রেন্ডন টেইলরের ৩৮ রান এগিয়ে নিয়ে গেছে জিম্বাবুইয়েকে। মাঝ থেকে শেষ পর্যন্ত সিকান্দার রাজা আবার নিজেকে চিনিয়েছেন। তিনি যে মাঝপথে জিম্বাবুইয়ের কত বড় সম্পদ তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করার পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫২ রান করেছিলেন। এবার লঙ্কানদের বিপক্ষে অপরাজিত ৮১ রান করেছেন। তার সঙ্গে ম্যালকম ওয়ালারের ২৯ ও পিটার মুরের ১৯ রান মিলিয়ে জিম্বাবুইয়ে ৬ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২৯০ রান করে বড় স্কোরই গড়ে। যে স্কোর জিম্বাবুইয়েকে জেতার সম্ভাবনাতেও নিয়ে যায়। এ জন্য প্রয়োজন ছিল জিম্বাবুইয়ে বোলারদের দুর্দান্ত বোলিং। শুরুতে ভাল বোলিং করেন জিম্বাবুইয়ে বোলাররা। মাঝপথে কুশল পেরেরা ও এ্যাঞ্জলো ম্যাথুস মিলে দলকে নির্ভার করার চেষ্টা করেন। তৃতীয় উইকেটে ৮৫ রানের জুটি গড়েন দুইজন। দল ১৩২ রানেও চলে যায়। এমন সময় ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভাব হন সিকান্দার রাজা। ৮০ রান করা পেরেরাকে সাজঘরে ফেরান। ১৫৭ রানে যখন ম্যাথুসকে (৪২) আউট করে দেন মুজারাবানি তখন জিম্বাবুইয়ের মুঠোয় যেন খেলা চলে আসে। মজার বিষয় হলো পেরেরাকে আউট করে সিকান্দার। ক্যাচ নেন মুজারাবানি। ম্যাথুসকে আউট করেন মুজারাবানি। ক্যাচ ধরেন সিকান্দার। তাতে করে শ্রীলঙ্কা বিপাকে পড়ে। দিনেশ চান্দিমাল উইকেট আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করেন। কিন্তু জার্ভিসের বলে বোল্ড হয়ে যান। বলের হাল্কা ছোঁয়া লেগে বেলস পড়ে যায়। ৩৪ রান করে আউট হন চান্দিমাল। পাঁচ উইকেট হারিয়ে হারের খপ্পরেই পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা। এরপর যখন ২২৪ রানের মধ্যে ৭ উইকেটের পতন ঘটে তখন যেন শ্রীলঙ্কার হার নিশ্চিতই হয়ে যায়। দর্শকহীন স্টেডিয়ামে অপেক্ষা থাকে কখন ম্যাচটি শেষ হবে। নিরুত্তাপ ম্যাচটিতে শেষ পর্যন্ত উত্তাপ আনার চেষ্টা করেন থিসারা পেরেরা। একাই লড়াই করে যেতে থাকেন। হাফ সেঞ্চুরিও করে ফেলেন পেরেরা। ৩৬ বলে ৬৪ রান করে ফেলেন পেরেরা। শ্রীলঙ্কার যখন জিততে ২১ বলে ১৬ রান দরকার, এমন সময়ে আউট হয়ে যান পেরেরা। ম্যাচ তখন পুরোপুরিই জিম্বাবুইয়ের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তবে ম্যাচটিতে পেরেরাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা, উত্তেজনা এনে দেন। ১২ বলে জিততে যে শ্রীলঙ্কার ১৩ রানের প্রয়োজন থাকে, সেটি তো পেরেরার দুর্দান্ত ইনিংসেই হয়েছে। এমন সময়ই ২৭৮ রানে গিয়ে চামিরা আউট হতেই শ্রীলঙ্কার ইনিংস শেষ হয়ে যায়। ৪৮.১ ওভারে গিয়েই হেরে যায় শ্রীলঙ্কা। টেন্ডাই চাতারা অসাধারণ বোলিং করে ৪ উইকেট তুলে নেন। তার বোলিং জয় এনে দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সিকান্দার, মাসাকাদজার ব্যাটিং নৈপুণ্যের পর চাতারার বোলিং গতির সামনে ধরাশায়ী হয় শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুইয়ে স্কোর কার্ড শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুইয়ে ম্যাচ টস ॥ শ্রীলঙ্কা (ফিল্ডিং)। জিম্বাবুইয়ে ইনিংস রান বল ৪ ৬ মাসাকাদজা ক গুনাথিলাকা ব গুনারতেœ ৭৩ ৮৩ ১০ ০ মিরে ক মেন্ডিস ব পেরেরা ৩৪ ৩৭ ৫ ০ আরভিন ক ম্যাথুস ব লাকমাল ২ ৯ ০ ০ টেইলর ব পেরেরা ৩৮ ৫১ ৪ ০ সিকান্দার নট আউট ৮১ ৬৭ ৮ ১ ওয়ালার ক থারাঙ্গা ব গুনারতেœ ২৯ ৩৫ ২ ১ মুর ক ধনঞ্জয়া ব গুনারতেœ ১৯ ১৮ ০ ২ ক্রেমার নট আউট ০ ০ ০ ০ অতিরিক্ত (লেবা ৪, ও ১০) ১৪ মোট (৬ উইকেট; ৫০ ওভার) ২৯০ উইকেট পতন ॥ ১/৭৫ (মিরে), ২/৮৫ (আরভিন), ৩/১৪২ (মাসাকাদজা), ৪/১৬৯ (টেইলর), ৫/২২৬ (ওয়ালার), ৬/২৮৭ (মুর)। বোলিং ॥ লাকমাল ১০-০-৭০-১, ধনঞ্জয়া ১০-০-৬৭-০, পেরেরা ১০-০-৪৩-২, চামারা ১০-০-৫১-০, সিলভা ৩-০-১৮-০, গুনারতেœ ৭-০-৩৭-৩। শ্রীলঙ্কা ইনিংস রান বল ৪ ৬ কুশল ক মুজারাবানি ব সিকান্দার ৮০ ৮৩ ৮ ২ থারাঙ্গা ক মুর ব জার্ভিস ১১ ১৭ ২ ০ মেন্ডিস ক ক্রেমার ব চাতারা ০ ৪ ০ ০ ম্যাথুস ক সিকান্দার ব মুজারাবানি ৪২ ৬৪ ১ ১ চান্দিমাল ব জার্ভিস ৩৪ ৩৩ ৩ ১ গুনারতেœ স্টা. টেইলর ব ক্রেমার ৪ ৯ ০ ০ পেরেরা ক সিকান্দার ব চাতারা ৬৪ ৩৭ ৫ ৩ হাসারাঙ্গা ক মুর ব ক্রেমার ১১ ১২ ০ ১ ধনঞ্জয়া ক ক্রেমার ব চাতারা ৮ ১৯ ০ ০ লাকমাল নট আউট ৫ ৯ ০ ০ চামিরা ক মাভুতা ব চাতারা ১ ৪ ০ ০ অতিরিক্ত (বা ৪, লেবা ৩, নো ২, ও ৯) ১৮ মোট (অলআউট; ৪৮.১ ওভার) ২৭৮ উইকেট পতন ॥ ১/৪৬ (থারাঙ্গা), ২/৪৭ (মেন্ডিস), ৩/১৩২ (কুশল), ৪/১৫৭ (ম্যাথুস), ৫/১৮১ (চান্দিমাল), ৬/১৯৪ (গুনারতেœ), ৭/২২৪ (হাসারাঙ্গা), ৮/২৬১ (ধনঞ্জয়া), ৯/২৭৫ (পেরেরা), ১০/২৭৮ (চামিরা)। বোলিং ॥ সিকান্দার ১০-০-৫৪-১, জার্ভিস ৮-০-৫৬-২, চাতারা ৮.১-০-৩৩-৪, মুজারাবানি ৯-০-৪৭-১, ক্রেমার ১০-০-৬২-২, ওয়ালার ৩-০-১৯-০। ফল ॥ জিম্বাবুইয়ে ১২ রানে জয়ী।
×